এনওসি বন্ধে গ্রাহক ভোগান্তির সঙ্গে খরচও বাড়ছে: রবি সিইও

নিরীক্ষা আপত্তির টাকা আদয়ে বিভিন্ন ধরনের সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র দেওয়া বন্ধ থাকায় গ্রাহক ভোগান্তির পাশাপাশি মোবাইল সেবায় খরচও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন রবি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2019, 05:38 PM
Updated : 5 Nov 2019, 05:40 PM

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তের ফলে জনগণের ভোগান্তির পাশাপাশি সরকার শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার গুলশানে রবির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন গ্রাহক সংখ্যার বিচারে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মোবাইল অপারেটরটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

বিটিআরসির দাবি, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের।

এই টাকা আদায়ে প্রথম ধাপে ব্যান্ডউইডথ কমিয়ে দিয়ে এবং দ্বিতীয় ধাপে গত ২২ জুলাই বিভিন্ন ধরনের সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র দেওয়া বন্ধ রেখেও কাজ না হওয়ায় গত ৫ সেপ্টেম্বর দুই অপারেটরকে ‘কারণ দর্শাও’ নোটিশ পাঠায় বিটিআরসি।

বিটিআরসির ‘প্রতিবন্ধকতা দেশের জন্য খুবই ক্ষতিকারক’ দাবি করে মাহতাব উদ্দিন বলেন, “এটা জনগণের জন্য ক্ষতিকারক এবং বিটিআরসির জন্যও ক্ষতিকারক।”

বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “এ বছর বিনিয়োগ পরিকল্পনায় ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আর হবে না। এ বিনিয়োগ আর ফিরে আসবে না। ১৫০ মিলিয়ন ইমপোর্ট করলে এর ট্যাক্স ডিউটি দাঁড়াত ১৫ মিলিয়ন ডলার বা ১২৫ কোটি টাকা। “এখানে সরাসরি এনবিআর ‘লস’ করছে। এখানে যন্ত্রপাতি আনলে বিনিয়োগ করলে টাওয়ার স্থাপনের মাধ্যমে রাজস্ব আয় হত, সেখান থেকে আমরা ৫০ শতাংশের বেশি সরকারকে দিয়ে থাকি। বিটিআরসি ও এনবিআর দুজনেই এর ভাগীদার। এ রাজস্ব তারা হারাচ্ছে।”

গ্রাহকদের খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে রবি সিইও বলেন, “যন্ত্রপাতি আনা হয় গ্রাহকদের সেবায়, এটি স্থাপন না করায় তারা এ সেবা পাচ্ছে না, নেটওয়ার্ক চাহিদা বাড়ছে। প্ল্যান অনুযায়ী যা কিছু করার কথা ছিল তা হচ্ছে না। আমি যেটা বুঝতে পারছি না বিটিআরসি যে অ্যাকশনগুলো নিচ্ছে এনওসি না দিয়ে কার স্বার্থ রক্ষা করছে? অপারেটরদের উপর প্রেসার ক্রিয়েট করছে, আমি যদি ইনভেস্ট না করি ক্ষতিটা জনগণের হবে, দেশের হবে।

“গ্রাহকরা সাফার করতে শুরু করেছে তবে হাহাকার ওই পর্যায়ে যায়নি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তাদের বেশি টাকা দিতে হবে, কারণ ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের কারণে।”

মূল্য বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দিয়ে রবি সিইও বলেন, “সাপ্লাই মানে ক্যাপাসিটি, সাপ্লাই যখন বন্ধ হয়ে যাবে ডিমান্ড তো কমছে ন। নিজেরা প্রতিযোগিতা করে দাম কমানো এখন তো প্রতিযোগিতার জায়গাই নেই। মার্কেট লিডার দুই অপারেটরেরই একই অবস্থা। কাস্টমার খারাপ সেবা পাবে এবং দামও বেশি দিতে হবে। এমন লেভেলে যাবে, এখনও ম্যানেজ করে চলছি। ভেন্ডররা বলছে, সতর্ক করছে যে এভাবে চললে নেটওয়ার্ক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।“ 

এভাবে আগামী তিন মাস চললে অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে জানান তিনি।

বিনিয়োগ না থাকলে অপারেটরদের খরচ কমে যাবে জানিয়ে মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এটি চলতে থাকলে বিনিয়োগ নাই মানে খরচও থাকবে না। গ্রাহক হারানোর ভয়ও নেই, কারণ বড় দুই প্লেয়ারদের কাছে ৮০ শতাংশ গ্রাহক রয়েছে। আর কোনো অপারেটরের পক্ষে এ সক্ষমতা তৈরি করা সম্ভব নয়। আর তারা নিতে চাইলেও প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে।

“জনগন এখানে ওভাবে বুঝছে না যে, ক্যাপাসিটি না থাকায় রবি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজেট ইমপ্যাক্টে বেড়েছে। এ ট্রেন্ড চলছে- বিনোয়োগ কমে যাবে, লোন কমে যাবে। ক্যাপাসিটি সংকুচিত হয়ে যাবে, মূল্য বাড়াতে থাকবে। কারণ ডিমান্ড-সাপ্লাই সম্পর্ক রয়েছে।” 

এই অবস্থায় সেবার দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি দাম না বাড়ালে টিকতে পারব না, কারণ আমার ক্যাপাসিটি না থাকায় নেটওয়ার্কের উপর চাপ পড়বে, দাম বাড়িয়ে আমার ভারসাম্য বিন্দুতে আনতে হবে, এটাই সায়েন্স। এখানে অন্য কোনো উপায় নেই। এটার কারণ এনওসি বন্ধ করাতে আমাদের নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম আনতে পারছি না। আমার যা সম্পদ আছে তা দিয়ে ম্যানেজ করতে হবে।

“এটি আরও চললে বিনিয়োগ আসবে না, মূল্য বেড়ে যাবে এবং জনগণ আপসেট হলে কিছু করার নেই। কারণ আমার করার কিছু নেই। এ সিদ্ধান্তে কেউ লাভবান হবে না। এর মধ্যেও আমরা ব্যবসা কষ্ট করে চালিয়ে যেতে পারব। কিন্তু এতে দেশের স্বার্থ রক্ষা করব না।”

দেনা-পাওনা নিয়ে গ্রামীণফোন-রবি ও বিটিআরসির মধ্যেকার বিরোধ নিরসনে ভূমিকা নিয়েও সফল না হওয়ার জন্য মোবাইল ফোন অপারেটর দুটিকে দায়ী করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।

এ বিষয়ে মাহতাব উদ্দিন বলেন, “বিভিন্ন সময়ে একটি সমাধানে প্রায় চলে এসেছিলাম। যে এগ্রিমেন্টগুলো হয়েছিল সবগুলো কমপ্লাই করতে রাজি হয়েছিলাম, তারপরও বিষয়টি নিয়ে কোর্টে যেতে হয়েছে।

“যদিও আমাদের বলা হচ্ছে, ২৫ বা ৫০ কোটি টাকা দিয়ে সমঝোতা শুরু করার জন্য, এটির আইনসংগত ভিত্তিটা আমি জানি না পুরোপুরি। আমরা জানতে পারছি, ওনারা (বিটিআরসি) কোর্টের মাধ্যমে সেটেল্ড করতে চাচ্ছে। রবি বিশ্বাস করে, এটি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে করতে পারলে সবচেয়ে ভালো।

“যদি আমরা দায়ী থাকি তাহলে ১০০ পার্সেন্ট টাকা দেব, ৮০ বা ৯০ পার্সেন্ট টাকা দেব কেন? কিন্তু  যদি শর্ত থাকে আমাকে আগে টাকা দিয়ে রেজ্যুলেশন করতে হবে, এটি কেন অন্য পাশে হবে না?“

বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর রায় পক্ষে না এলে রবি থেকে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানতে চাইলে মাহতাব বলেন, “আমরা কোর্টের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাব। তবে এটি রবি ম্যানেজমেন্টের বিষয় নয়, এটি রবির শেয়ার হোল্ডারদের বিষয়। শেয়ার হোল্ডাররা প্রয়োজন মনে করলে বা তাদের সুযোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে, কারণ এখানে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে।”

বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যবসা ছেড়ে চলে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে মাহতাব উদ্দিন বলেন, “ব্যবসা ফেলে চলে যাওয়া বাস্তবসম্মত নয়। রবি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের এভাবে ফেলে যাবে না। তা হবে মনে করি না, পরিস্থিতি সে লেভেলে যায়নি।”

গ্রামীণফোন ও রবির নিরীক্ষা আপত্তির টাকা আদায়ে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে ফল না আসায় কোম্পানি দুটিতে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে টাকা আদায় প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে সরকার।

তবে প্রসাশক নিয়োগে কোনো নোটিশ না পাওয়ায় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।