পেঁয়াজ: পাইকারিতে দাম কমলেও হেরফের খুচরায়

পাইকারি পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কিছুটা সহনীয় হলেও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। একেক বাজারে একেক দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2019, 08:55 AM
Updated : 5 Nov 2019, 12:53 PM

সোমবার রাজধানীর প্রধান পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের লালকুঠিতে পাবনা, ফরিদপুর ও রাজবাড়ি অঞ্চলের ভালো মানের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যদিও আগেরদিন এ পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০০-১০৫ টাকায়।

সেই পেঁয়াজই পলাশী, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজারে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। আর বাছাই করা ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা।

পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের সরবরাহেই আসল সমস্যা। একদিন সরবরাহ ঠিকঠাক থাকলেও পরদিন আবার কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে দামে। আর খুচরা বিক্রেতাদের যুক্তি, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে তাদেরও কোনো উপায় থাকছে না।

খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম না কমায় প্রতিদিনই মানুষ ভিড় করছে টিসিবির ট্রাকের কাছে। কারওয়ান বাজরে জনপ্রতি এক কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রয় করছে টিসিবি, যার মূল্য কেজি ৪৫ টাকা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

শ্যামবাজারে আলহাজ্ব বাণিজ্য বিতানের পরিচালক অমিতাভ কুন্ডু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ৪/৫ দিন ধরে পেঁয়াজের বাজার প্রতিনিয়তই ওঠানামা করছে। সকালে পাঁচ টাকা কমছে তো আবার বিকালে বেড়ে যাচ্ছে। সরবরাহ একটু কমে গেলেই দাম বেড়ে যাচ্ছে।”

তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগেও শ্যামবাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতিকেজি ১৩০ টাকা। তবে গত বুধবার থেকে দাম ধাপে ধাপে কমতে শুরু করে।

দামের ওঠানামার কারণে সরবরাহকারীদের মধ্যে লোকসানের আতঙ্ক বিরাজ করছে দাবি করেন এ পাইকারি বিক্রেতা।

এক সপ্তাহের মধ্যে তার বেশ কয়েকজন সরবরাহকারী বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন বলেও জানান।

“একজন রাজবাড়ি থেকে ১২৮ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনে এনেছিলেন বেশি দাম পাওয়ার আশায়। ওই দিনই মিশর ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের বড় চালান আসে শ্যামবাজারে। সেদিন দাম কমে একশ টাকায় পৌঁছে। ফলে দেড় টন পেঁয়াজে ২৭ হাজার টাকার মতো লোকসানে পড়েন ওই সাপ্লায়ার।”

আমানত ভাণ্ডারের কর্মী রিফাত বলেন, “রোববার পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিল। তাই দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমে গিয়েছিল। আজ সরবরাহ কিছুটা কম; দাম আবার পাঁচ টাকা বেড়ে গেছে। বেশি কয়েকদিন ধরেই এই পরিস্থিতি।”

এ বিক্রয়কর্মী জানান, বাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

১৫০ টাকা ছুঁয়েছে দেশি পেঁয়াজ

পলাশীর বুয়েট মার্কেটের মুদি দোকানিরা বলছেন, তারা পাইকারি বাজার থেকে ১২৫ টাকার কমে পেঁয়াজ কিনতে পারেননি দুইদিন আগেও। তাই বাধ্য হয়ে ১৩৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে এ বাজারে বিভিন্ন দোকানে দামের হেরফের দেখা গেছে।

রাসেল বনিয়াতি নামের একটি দোকানের কর্মী জানান, তারা দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১৫০ এবং মিশরের পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি করছেন।

তবে সাবিহা স্টোরের বিক্রয়কর্মী জানান, পাইকারিতে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ তারা কেনা পড়েছে ১৩০ টাকা, বিক্রি করছেন ১০ টাকা লাভে।

এখানকার রাশেদা স্টোরের বিক্রয়কর্মী জানান, তারা মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১২০ টাকায় এবং দেশি পেঁয়াজ ১৪০ টাকায় বিক্রি করছেন।

হাতিরপুল মার্কেটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুদি দোকানি বলেন, তিনি মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১২৫ টাকা প্রতিকেজি; দেশি প্রতিকেজি ১৩৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

সাধারণত কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দামের পার্থক্য পাঁচ থেকে ১০ টাকার মধ্যে থাকলেও সোমবার দুই বাজারে দামের ফারাক ২০ টাকা দেখা গেছে।

এদিন কারওয়ান বাজারে খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল প্রতিকেজি ১৩০ টাকায়, যা শ্যামবাজারে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা ফয়েজ উদ্দিন জানান, পাবনা থেকে সরাসারি সরবরাহ করা পেঁয়াজই বিক্রি করছেন তিনি, রোববার যার প্রতিকেজি পাইকারি মূল্য ছিল ১২৫ টাকা। তাই সোমবার ১৩০ টাকায় বিক্রি করতে পেরেছেন।

“আজকে (সোমবার) পাইকারিতে ১২৮ টাকা হয়ে যাওয়ায় আগামীকাল বিক্রি করতে হবে আরও বেশি দামে।”

পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক করতে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

তিনি বলেন, “আমাদনি মূল্যের সঙ্গে পাইকারি মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে কাজ করছি আমরা। তবে মুদি দোকানিদের অনেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনেছিলেন; তাই অনেকে এখনও দাম কমাতে পারছেন না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তারা খুচরা বাজারেও অভিযান চালানো হচ্ছে।”

দাম সহনীয় ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে মুদি দোকানিদের ‘ক্রয় রশিদ’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।