আদালতের নির্দেশে সরকার যে টাকাটা আটকে রেখেছিল,সমঝোতার ভিত্তিতে সেই টাকাটাই এখন শেভরন দিতে চাচ্ছে বলে শেভরন বাংলাদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনজীবী ওমর সাদাত জানিয়েছেন।
ডলারের বর্তমান বাজার মূল্যে বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬১২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন,এর মধ্য দিয়ে লভ্যাংশ হিসাবে কোনো কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পাওনা পেতে যাচ্ছেন।
শ্রম আইন অনুযায়ী লাভের ৫ শতাংশ দাবি করে ২০১৪ সালে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন শেভরন বাংলাদেশের ৫৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর আদালত রুল জারি করে।
শ্রম আইন অনুযায়ী শেভরন তার কর্মীদের লাভের যথাযথ অংশ না দেওয়ায় কেন সরকারকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।
পরে ২০১৭ সালে শেভরন জানায়, চীনের কনসোর্টিয়াম হিমালয় এনার্জি কোম্পানি লিমিটেডের হাতে ২ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ছে তারা।
তবে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এখনও বাংলাদেশে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
শেভরনের বাংলাদেশ ছাড়ার ঘোষণায় ২০১৭ সালে রিট আবেদনকারীরা লাভের অংশ পেতে আদালতে সম্পূরক আবেদন করে।
বাদী পক্ষের আবেদনে সোমবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবির লিটনের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে আটকের আদেশটি প্রত্যাহার করে নেয়।
আদালতে শেভরনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ওমর সাদাত। আর শেভরনের পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।
ওমর সাদাত পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শ্রম আইন, ২০০৬ এর ‘ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড’র অধীনে বলা আছে, একটি কোম্পানি যা লাভ করবে, তার ৫ শতাংশ লাভ সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিতে হবে। সেই অংশ দাবি করে শেভরনের ৫৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রিট আবেদনটি করেন।
সম্পূরক আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, “আবেদনে আমরা বলি, সরকারের কাছে শেভরন যে টাকা পায়, সেখান থেকে যেন ২০০৬ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত লভ্যাংশের ন্যায্য পাওনা টাকাটা যেন সরকার আটকে রাখে। আদালত আমাদের এই আবেদনে ৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।”
এরপর তিন বছর ধরে শেভরনের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা চলার কথা জানিয়ে ওমর সাদাত বলেন, “এক পর্যায়ে শেভরন আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্টের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা টাকাটা দিতে রাজি হয়। এ বিষয়ে গত ২৬ অগাস্ট একটি সমঝোতাও হয়েছে।
“সেই সমঝোতা চুক্তির ভিত্তিতে আজ আমরা কোর্ট থেকে মামলাটি উঠিয়ে নেই। শেভরন সরকারের কাছ থেকে টাকাটা ফেরত পেলেই তা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে দিবে বলে সমঝোতায় বলেছে। আমাদের বিশ্বাস তারা টাকাটা দিয়ে দেবে।”
এ আইনজীবী বলেন, “আজ আদালতে আমরা কেবল বলেছি, উভয় পক্ষ আমরা একমত হয়েছি, মামলাটি তুলে নিতে চাই। সে ভিত্তিতে আদালত মামলাটি তুলে নিয়েছে। যে নিষেধাজ্ঞাটা ছিল সেটাও তুলে নিয়েছে।”
“দেশের ইতিহাসে চাকরিজীবীদের জন্য এটা সবচেয়ে বড় পাওনা। এর আগে এত বড় পাওনা আর কোনো কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পায়নি,” বলেন তিনি।