চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত এই কারখানাটি হবে সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। এমন কারখানা পৃথিবীতে আর একটি আছে; উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে।
২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা খরচ করে কারখানাটি স্থাপন করছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্পাত কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড।
গত শনিবার কারখানাটি পুরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানাটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। খুব শিগগিরই পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে কারখানাটি। এরপরই পুরোদমে উৎপাদন। আর সেটি এ বছরের মধ্যেই শুরু হবে বলে জানালেন কারখানার কর্মকর্তারা।
তবে আমরা আমাদের এই নতুন কারখানাকে শুধু উৎপাদন ক্ষমতা দিয়ে বিচার করতে চাই না । আমাদের এই নতুন কারখানা বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এখানে যে মানের ইস্পাত তৈরী হবে তা এর আগে আর এই দেশে হয়নি। আমাদের এই কারখানার মত কারখানা পৃথিবীর আর মাত্র একটি দেশে আছে।”
তিনি দাবি করেন, ইস্পাত শিল্পে বিশ্বের সর্বাধুনিক ও সর্বশেষ প্রযুক্তিতে নির্মিত হয়েছে এই কারখানা। এতে ৫০০ ডব্লিউ টিমটি বার ও বিভিন্ন গ্রেডের রডের পাশাপাশি সেকশান, এঙ্গেল, চ্যানেল, এইচ বিম, আই বিমসহ নানা ধরণের পণ্য উৎপাদিত হবে।
“এই প্রযুক্তির প্রথম কারখানাটি স্থাপিত হয়েছে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে। জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানাটি বিশ্বে কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তির দ্বিতীয় কারখানা। বাংলাদেশের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চিন এই প্রযুক্তির কয়েকটি কারখানা স্থাপন শুরু করেছে।”
সুমন বলেন, এই প্রযুক্তিতে ফার্নেস বা লোহা গলানোর চুল্লি থেকে নির্গত তাপকে ধারণ করে তা অন্য ইউনিটে ব্যবহার করা হয়। এ কারণে কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তিতে নির্মিত ইস্পাত কারখানায় জ্বালানির সাশ্রয় হয়।
কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিশুদ্ধ ইস্পাত উৎপাদনের নিশ্চয়তা। প্রচলিত পদ্ধতির ইস্পাত কারখানায় ইস্পাত চুল্লিতে স্ক্র্যাপ বা পরিত্যক্ত লোহা গলানোর পর ৬ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত অপদ্রব্য বা খাদ থেকে যায়। কিন্তু জিপিএইচে ব্যবহৃত কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তিতে খাদ থাকবে ১ শতাংশেরও কম।
পরিদর্শনের সময় কর্মকর্তারা জানান, জিপিএইচ ইস্পাতের নতুন কারখানাটি নানাভাবে পরিবেশবান্ধব। প্রথমত-এই কারখানায় প্রচলিত পদ্ধতির ইস্পাত কারখানার তুলনায় অনেক কম জ্বালানির প্রয়োজন হবে।
দ্বিতীয়ত- এই কারখানা থেকে কার্বন নিঃসরণ হবে বিশ্বব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমার পাঁচ ভাগের এক ভাগ মাত্র। তৃতীয়ত- এই কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় পানির ৩০ ভাগ মাত্র ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে নেওয়া হবে। বাকী ৭০ ভাগ পানির চাহিদা মেটানো হবে জমিয়ে রাখা বৃষ্টির পানি থেকে।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, নতুন এই ইউনিটটি স্থাপনে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই অর্থের একটি অংশ রাইট শেয়ার ইস্যু করে সংগ্রহ করা তহবিল এবং কোম্পানির রিজার্ভ থেকে যোগান দেওয়া হয়েছে। বাকী অর্থ এসেছে দেশি-বিদেশী বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে।
এটি জিপিএইচ ইস্পাতের দ্বিতীয় কারখানা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সুলতানা মন্দির এলাকায় ৩০০ একর জমিতে স্থাপন করা হয়েছে এটি জিপিএইচ ইস্পাতের উৎপাদন যজ্ঞ। এখানকার প্রথম কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।