পেঁয়াজের দাম আবার বাড়ছে

মিয়ানমার থেকে আমদানিসহ সরকারের নানা তৎপরতায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও তা এক সপ্তাহও স্থায়ী হল না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2019, 02:02 PM
Updated : 11 Oct 2019, 02:06 PM

শুক্রবার পেঁয়াজের দাম আবার কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় উঠেছে, যেখানে গত সপ্তাহে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছিল বিভিন্ন ধরনের পেঁয়াজ।

গেল মাসের শেষ দিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশে এই খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে কেজি ৬০-৭০ টাকা থেকে এক লাখে শতক ছাড়িয়ে যায়।

অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে ট্রাকে করে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন আড়তে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়। এরমধ্যে মিয়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আসে।

এসব তৎপরতায় পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বন্ধ হয়ে তা কমতে শুরু করে। গেলর সপ্তাহে পেঁয়াজে দাম কমে কেজি ৭৫ টাকা পর্যন্ত নামে।

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর চড়চড়িয়ে বাড়তে থাকে দাম, পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম কমলেও খুচরা বাজারে তার খুব একটা প্রভাব না পড়ায় সচিবালয়ের সামনে শনিবার টিসিবির ট্রাক থেকে ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনতে বাড়ছে ভিড়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

শুক্রবার মিরপুর বড়বাগ কাঁচাবাজারের সুমন স্টোরের পরিচালক আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম কমই ছিল। শুক্রবার রাতে ফোন করে জানতে পারি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তাই ফোনে পেঁয়াজ কেনার অর্ডার না দিয়ে মিরপুর ১ নম্বর কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখে শুনে পেঁয়াজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এদিনও বড়বাগ, আগারগাঁও, পীরেরবাগসহ মিরপুরের বিভিন্ন কাঁচা বাজারে পেঁয়াজের কেজি সর্বোচ্চ ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। মগবাজারে দেখা গেছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজের কেজি।

পেঁয়াজের দাম আবার বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা ইদ্রিস আলী মধু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিয়ানমার থেকে আমদানি করা কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। গতকাল পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে।”

বর্তমানে পাইকারি বাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় এবং দেশীয় ভালো মানের পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭২ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

একই কথা বলেন মিরপুর ১ নম্বরের পাইকারি বাজারের বিক্রেতা পলাশ সাহা।

তিনি বলেন, “মিরপুরে আমদানি করা পেঁয়াজ এর পরিমাণ খুবই কম। এখানে অধিকাংশ দোকানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দাম কেজিতে অন্তত পাঁচ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”

এদিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘প্রজনন মৌসুমে’ ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় ঢাকার বাজারগুলো এখন ইলিশ শূন্য। তবে অন্যান্য মাছ আগের মতোই কিছুটা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

বড়বাগ বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা ইদ্রিস বলেন, দুই দিন ধরে বাজারে কোনো ইলিশ আসছে না। ইলিশের পরিবর্তে তিনি রুই-কাতলসহ অন্যান্য মিঠাপানির মাছ বিক্রি করছেন। ইলিশের অনুপস্থিতিতে বাজারে দামের বৃদ্ধির এমন ঘটনা ঘটেনি। বড় আকারের রুই মাছ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা এবং কাতল মাছ ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শিং, মাগুর, কৈ, বোয়াল, ট্যাংরা, কোরাল মাছসহ অন্যান্য মাছও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের শাক সবজি। নতুন মৌসুমের সবজি বাজারে আসতে শুরু করলেও দামে খুব একটা হেরফের হয়নি।

তরকারি বিক্রেতা সেলিম জানান, বাজারে এখন চিচিঙ্গা পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। অন্যান্য সবজির দামও বেশি। নতুন করে বাজারে এসেছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, সিম। তবে এসব পণ্যের দাম তেমন কমেনি।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, মুলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০ টাকায়,  ফুলকপি, বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকায়। এছাড়া করলা, বেগুন, ঢেঁড়শ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায়। বড় আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা এবং ছোট আকারের বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৩৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। প্রতি ডজন ডিমের দাম রাখা হচ্ছে অন্তত ১১০ টাকা।