পেঁয়াজ: পাইকারিতে দাম কমার প্রভাব খুচরায় সামান্য

ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর চড়চড়িয়ে বাড়তে থাকা পেঁয়াজের দামে লাগাম টানতে সরকারের তৎপরতার মধ্যে রাজধানীতে পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম কমলেও খুচরা বাজারে তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2019, 02:26 PM
Updated : 4 Oct 2019, 03:02 PM

গত তিন দিনে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দর কেজিতে অন্তত ২০ টাকা কমলেও খুচরায় তিন দিন আগের দাম সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি।

শুক্রবার রাজধানীর মিরপুরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ।

মিরপুর বড়বাগ কাঁচাবাজারের মুদি দোকানি নাজমুল হোসেন বলেন, ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ তিনি খুচরায় ৯০ টাকায় বিক্রি করছেন।

আরেক দোকানি আনোয়ার বলেন, তার কাছে রয়েছে তিন দিন আগে কেনা পেঁয়াজ। সে কারণে তিনি প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৯৫ টাকার নিচে বিক্রি করতে পারছেন না।

তবে আগারগাঁও কাঁচাবাজারে সব ধরণের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ টাকা করে।এখানে বিক্রেতাদের মধ্যে অনমনীয় মনোভাব দেখা গেছে।

মিরপুর বাজারের পাইকরি বিক্রেতা পলাশ সাহা জানান, পাবনা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের পেঁয়াজ পাইকারিতে ৭৫ টাকা থেকে ৭৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শ্যামবাজারের আড়তদার ইদ্রিস আলী মধু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর ভালো মানের পেঁয়াজের পাইকারি দাম কেজিপ্রতি ৯৫ টাকায় পৌঁছেছিল। সেটা শুক্রবার ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

পাইকারি ও খুচরা বাজারের পেঁয়াজের দামে তফাৎ নিয়ে ইদ্রিস আলী বলেন, “এটা বাস্তব কারণেও হতে পারে। অনেকে হয়তো বেশি মূল্যে যে পেঁয়াজ কিনেছিলেন সেগুলোই এখন বিক্রি করছেন।

“আবার বাজারের উত্থান-পতনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেকে অধিক মুনাফাও করতে পারেন।”

তবে সরকারি নজরদারি চলমান থাকায় খুচরা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে আরো দুয়েকদিন সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি।

পেঁয়াজের ফলন মার খাওয়ায় ভারত সরকার গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছায়।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার মিশর, তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগে পাশাপাশি টিসিবির মাধ্যমে সারা দেশে ট্রাকে করে ‘ন্যায্য মূল্যে’ পেঁয়াজ বিক্রি হয়। অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করতে পাইকারি বাজারগুলোতে অভিযান শুরু হয়।

রাজধানীর বড় বড় বাজারগুলোতে বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা প্রতিদিনই পেঁয়াজের দামের খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলে বেশ কয়েকজন বিক্রেতা জানিয়েছেন।

গত সপ্তাহের মাঝামাঝিতে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে গেলে শুক্রবার দাম কিছুটা কমে এসেছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তবে নতুন করে বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম।

গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এই সপ্তাহে তা পাওয়া যাচ্ছে ১৩০ টাকা থেকে ১৩৫ টাকার মধ্যে। সোনালী জাতের মুরগি (পাকিস্তানি জাতের কক) বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকায়। লেয়ারের মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২০০ টাকায়।

পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার কারণে মওসুমের ‘দামি মাছ’ ইলিশ কিছুটা কম দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

বড়বাগে এককেজি ওজনের ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ৯শ টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে। তবে এর চেয়ে ছোট আকারের (৮০০ গ্রাম)ইলিশ বিক্রি হচ্ছে জোড়া ১৩শ টাকা থেকে ১৪শ টাকায়।

রহমত উল্লাহ নামের এক বিক্রেতা বলেন, আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ইলিশ ধরা সরকারিভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এখন বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকলেও তখন দাম দিয়েও ইলিশ পাওয়া যাবেনা।

চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে ২২ দিনের জন্য সাগরে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

বৈরী আহ্বাওয়ার কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে বলে দাবি খুচরা বিক্রেতাদের। ফলে সবধরনের সবজির দাম চলতি সপ্তাহে কেজিতে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছি বলে জানাচ্ছেন তারা।

বাজারে কেবল মাত্র পটলের দাম রয়েছে ৫০ টাকার নিচে; বর্ষকালীন এই সবজি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

নতুন করে বাজারে আসা ফুল কপি ও বাধা কপির মান খুব খারাপ হলেও আধা কেজি ওজনের একটি কপির দাম চাওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা।

আগারগাঁওয়ের বিক্রেতা আবুল বাশারের মতে, ক্ষেত থেকে কপি তোলার আগে পরে বেশ বৃষ্টি হয়েছিল। এর গায়ে পানি জমে থাকার কারণে ট্রাকে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন পাইকারি সরবরাহকারীরা। বাজারে অন্যান্য সবজির সরবরাহও অনেক কমে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।

চলতি সপ্তাহে চিচিঙ্গা, ঝিঙা, করলা, বেগুন, ধুন্দুল প্রতিকেজি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিম গত সপ্তাহে প্রতিকেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এই সপ্তাহে দাম চাওয়া হচ্ছে ১৬০ টাকা। রববটি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০ টাকায়।