সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার প্রভাব কী বিশ্ব বাজারে পড়বে?

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল রাপ্তানিকারী দেশ সৌদি আরবের প্রধান দুইটি তেলক্ষেত্রে ড্রোন হামলার পর দেশটির দৈনিক তেল উৎপাদন অর্ধেকের বেশি হ্রাস পেয়েছে। কবে নাগাদ উৎপাদন স্বাভাবিক হবে তাও অজানা। বিশ্বের তেলবাজারে এর কী প্রভাব পড়তে যাচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2019, 02:40 PM
Updated : 15 Sept 2019, 05:14 PM

গত শনিবার সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর দুইটি তেলক্ষেত্রে ড্রোন হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

যদিও ওয়াশিংটন ও রিয়াদের অভিযোগের আঙুল ইরানের দিকে। তেহরান ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আবকাইক ও খুরাইস প্রদেশে  সৌদি আরামকোর ওই দুইটি তেলক্ষেত্রের মধ্যে আবকাইক তেলক্ষেত্রে বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল শোধনাগার রয়েছে। আরামকো বিশ্বের সর্ব বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী কোম্পানি। বিশ্ববাজারে মোট তেল উৎপাদনের ১০ শতাংশের যোগানদাতা তারা।

হামলার পর রোববার সকালে এক বিবৃতিতে আরামকো জানায়, অগ্নিকাণ্ডে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাতে দেশের দৈনিক তেল উৎপাদন ৫৭ লাখ ব্যারেল হ্রাস পাবে। যা বিশ্বের মোট তেল সরবরাহের পাঁচ শতাংশেরও বেশি।

সৌদি আরব প্রতিদিন গড়ে ৭০ লাখ ব্যারেলেরও বেশি তেল রপ্তানি করে। বিবিসি জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে শুক্রবার এক ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ৬০ মার্কিন ডলারে (৪৮ পাউন্ড) বিক্রি হয়েছে।

সৌদি আরব থেকে যোগান কমে যাওয়ায় ওই দাম একলাফে ব্যারেল প্রতি ৮০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি বেড়ে যেতে পারে বলে জানান কয়েকজন বাজর বিশ্লেষক। এমনকি তা শেষ পর্যন্ত ১শ’ ডলারও স্পর্শ করতে পারে বলে বিভিন্ন বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সিএনবিসি।

“সৌদি আরবে যে কোন ধরনের হামলাই তেলের বাজারকে অস্থিতিশীল করবে, কেননা জ্বালানি তেল উৎপাদনের বড় অংশই তাদের দখলে,’’ বলেন এনভেরাস নামের একটি বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট বারনাদেত্তে জনসন৷

তার মতে, এই দুইটি প্লান্টের উৎপাদন দ্রুত শুরু না হলে দামে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটতে পারে৷ আরামকোর একতৃতীয়াংশ তেলের ক্রেতা এশিয়ার বিভিন্ন দেশ।

রোববারের ছুটি কাটিয়ে সোমবার থেকে এশিয়ায় তেল বাজারে লেনদেন শুরু হবে। আরামকোর উৎপদন হ্রসে বাজারে কী প্রভাব পড়তে যাচ্ছে তার প্রাথমিক ধারণা ওই দিনই পাওয়া যাবে বলে জানান তারা।

সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে লেনদেন শুরু হলে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে ৫ থেকে ১০ ডলার বেড়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

তবে ‘হামলার তাৎক্ষণিক প্রভাব বাজারে খুব বেশি দিন স্থায়ী হবে না’ বলে বিশ্বাস করেন আন্তর্জাতিক জ্বালানি নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নিক বাটলার।

তিনি বলেন, “ভেনেজুয়েলা ও ইরানে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে গত দুই বছরে তেল উৎপাদন দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেলের বেশি হ্রাস পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার কোনো অসুবিধা ছাড়াই এর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে।”

যদি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যায় তবে ভোক্তা দেশগুলোর অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়বে সেটার বলার সময় এখনো আসেনি বলে মনে করে বাজার বিশ্লেষকরা।

বরং তেলের উৎপাদন হ্রাস কতদিন স্থায়ী হবে এখন সেটা দেখার বিষয়। যদি এটা কয়েক সপ্তাহ হয় তবে তেলের দাম বাড়তে পারে।

কবে নাগাদ আবার পূর্ণমাত্রায় তেল উৎপাদন শুরু হবে সে বিষয়ে আরামকো থেকে রোববার কিছু জানানো হয়নি। তবে বল হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা পরবর্তী অগ্রগতি সম্পর্কে জানাবে।

বিনিয়োগকারীরা এখন আরামকোর পরবর্তী বিবৃতি এবং এ হামলার রাজনৈতিক প্রভাব কী হয় তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলেও জানায় বিবিসি।