গরুর মাংস আমদানি না করার আহ্বান

দেশের খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় বিদেশ থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি না করার দাবি জানিয়েছে এ খাত সংশ্লিষ্ট ১০টি সংগঠন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2019, 03:29 PM
Updated : 9 Sept 2019, 03:53 PM

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনগুলো বলেছে, বিদেশ থেকে গরুর মাংস আমদানি হলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ, উৎপাদনকারী, খামারি ও শিল্পসংশ্লিষ্টরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আহকাব) সভাপতি এম নজরুল ইসলাম, প্রাক্তন সভাপতি মোমিন উদ দৌলা, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের (বিভিএ) মহাসচিব মো হাবিবুর রহমান মোল্লা, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মাসের (বিডিএফএ) মহাসচিব শাহ ইমরান, বেঙ্গল মিটের হেড অব কমার্শিয়াল অ্যান্ড এক্সপোর্ট সাইদুল হক ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন এ সংবাদ সম্মেলনে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরীফ আহমেদ চৌধুরী।
সেখানে বলা হয়, জনপ্রতি দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের চাহিদা ধরে দেশে বছরে মোট ৭২ দশমিক ৯৭ লাখ মেট্রিক টন মাংসের চাহিদা রয়েছে। আর ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি থেকে মোট ৭৫ দশমিক ১৪ লাখ মেট্রিক টন মাংস উৎপাদিত হয়েছে। অর্থাৎ, ২ দশমিক ১৭ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত ছিল।

“সরকারি তথ্যমতে, আমরা ইতোমধ্যে প্রাণিজ আমিষে স্বাবলম্বিতা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিদেশ থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব বর্তমানে সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশীয় খামারি, উৎপাদনকারী ও সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু তাই নয়, পরিবেশ ও কৃষিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।”

বাংলাদেশের আমদানি নীতি অনুযায়ী, শূকর ছাড়া অন্য কোনো পশুর হিমায়িত মাংস আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে কয়েকটি শর্ত পূরণ করে ৩৩ শতাংশ শুল্ক দিয়ে হিমায়িত মাংস আমদানি করা যায়।

শর্ত হল, মোড়কের গায়ে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থাকতে হবে, মাংস অ্যান্টিবায়োটিক বা রোগমুক্ত কি না- সেই সনদ থাকতে হবে এবং বন্দরে খালাসের সময় সেই মাংস পরীক্ষা করবে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ। 

ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে প্রায় ২০ হাজার কেজি গরুর মাংস আমদানি হয়, যা ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে হিমায়িত অবস্থায় আসে। তার আগের  অর্থবছরে আমদানি হয় ৫৫ হাজার কেজি গরুর মাংস। 

আমদানি করা এসব হিমায়িত মাংসের দাম স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মাংসের বাজারমূল্য থেকে অর্ধেক বলে গতবছর তথ্য দেয় ট্যারিফ কমিশন। 

দেশে মাংসের দাম গত কয়েক বছরে অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় বিদেশ থেকে বড় আকারে গরুর মাংস আমদানির একটি প্রস্তাব নিয়ে গত দুই বছরে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু খামারি ও উৎপাদনকারী পর্যায়ে সব সময়ই এর বিরোধিতা করা হয়েছে।  

গতবছর জানুয়ারিতে এফবিসিসিআইয়ের তখনকার সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছিলেন বাজারে গরুর মাংসের দাম অনেক বেশি। সাধারণ মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে গরুর মাংস আমদানির সিদ্ধান্ত হলে তা বাস্তবসম্মতেই হবে।

কিন্তু খামারিদের উদ্বেগ আর নানামুখি আলোচনার মধ্যে তখনকার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছিলেন, দেশীয় খামারিদের কথা মাথায় রেখে সরকার মাংস আমদানি করবে না। আমদানি ঠেকাতে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করা হবে।

এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আহকাব) সভাপতি এম নজরুল ইসলাম সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সম্প্রতি একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল ব্রাজিল সফর করে। আমরা জানতে পেরেছি, ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে এবং সরকারের সঙ্গেও এ বিষয়টি আলোচনা করা হচ্ছে।

“সরকার ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আনার সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের দেশের অনেক ছোট ছোট উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এ কারণেই আমরা এ বিরোধিতা করছি।”