ফাইভ-জির জন্য প্রস্তুত হুয়াওয়ে

পঞ্চম প্রজন্মের (ফাইভ-জি) নেটওয়ার্ক সেবা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে।

আবদুর রহিম হারমাছি চেংদু (চীন) থেকে ফিরেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2019, 03:22 PM
Updated : 7 Sept 2019, 03:26 PM

ইতোমধ্যে চীনের চেংদু শহরে পরিবহন সেবা ও টেলিমেডিসিনে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক সেবা চালু করেছে হুয়াওয়ে।

হুয়াওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, টেলিমেডিসিনে নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে ফাইভ-জি প্রযুক্তি। আধুনিক এ ব্যবস্থায় থাকবে কানেক্টেড অ্যাম্বুলেন্স এবং এআই সাপোর্টেড অ্যাপ্লিকেশন।

যখন কোনো রোগী ফাইভ-জি নেওয়ার্কে যুক্ত অ্যাম্বুলেন্সে উঠবেন, সেখানে থাকা চিকিৎসা উপকরণ দিয়ে তার বিভিন্ন পরীক্ষা করে দ্রুততম সময়ে রিপোর্ট হাসপাতালে পাঠানো যাবে। ফলে চিকিৎসকদের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া, অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ সহজ হবে। এতে সময় বাঁচাবে; প্রাণের ঝুঁকি কমবে।

গত ৩ সেপ্টেম্বর চীনের চেংদুতে ওয়ালডর্ফ এস্টোরিয়া হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পঞ্চম হুয়াওয়ে এশিয়া-প্যাসিফিক ইনোভেশন ডে। এ বছরের ইনোভেশন ডে এর মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘ইনোভেশন এনাবেলস এশিয়া-প্যাসিফিক ডিজিটালাইজেশন।’

ইনোভেশন ডে’র বিভিন্ন অধিবেশনে টেলিমেডিসিন খাতে ফাইভ-জির নতুন সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে হুয়াওয়ের কর্মকর্তাদের মুখে।

অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রযুক্তি এবং তথ্যও প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে হুয়াওয়ে 'কুনপেং ইকোসিস্টেম বেস' উন্মোচন করা হয়।

এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো থেকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ২০০ জনের বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন এবারের ইনোভেশন ডেতে ।

তারা ফাইভ-জি প্রযুক্তি, টেকসই উন্নয়ন, মানবতা ও পরিবেশসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন।  

বক্তারা বলেন, ফাইভজি নেটওয়ার্কের মূল বিষয় হলো গতি। যা বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষের যোগাযোগ এবং যন্ত্রের সঙ্গে যন্ত্রের যোগাযোগ দ্রুততর করবে; সহজ করবে।আর এভাবেই ফাইভ-জি শিল্প খাতে ইন্টারনেট ও ডিজিটাইজেশন নিশ্চিত করবে।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তৃতায় হুয়াওয়ের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক এবং ইন্সটিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ-এর প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ঝু বলেন, “ফাইভ-জি আমাদের সমাজকে নতুন করে সাজাবে। তারই অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে ফাইভ-জি প্রযুক্তি। একটি আধুনিক টেলিমেডিসিন সেবার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে এটি।

“ফাইভ-জি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এখনকার সময়টি খুবই উপযুক্ত। আরো সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে, প্রথাগত কানেকশনের তুলনায় ফাইভ-জি আরো বেশি কাভারেজ, বেশি ব্যান্ডউইথ এবং কম ল্যাটেন্সিতে ইন্টারনেট দিতে সক্ষম।”

তিনি বলেন, ফাইভ-জি প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে আরো অনেক অ্যাপ্লিকেশন আসবে; যা বদলে দেবে পৃথিবীকে।

“ফাইভ-জি একটি বৈশ্বিক প্রযুক্তি এবং আধুনিক বিশ্বের মূল ভিত্তি। যার মাধ্যমে সবকিছুর মাঝে সংযোগ স্থাপিত হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে আরো নতুন কার্যক্রম শুরু হবে। কর্মদক্ষতা বাড়াবে, খরচ কমিয়ে আনবে।”

চায়না একাডেমি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং ঝিকিন বলেন, “ফাইভ-জি নতুন যুগের সুচনা করবে। যেখানে সবকিছুর সঙ্গে থাকবে সবকিছুর যোগাযোগ।”

“ফাইভ-জি আমাদের সমাজকে নতুন করে সাজাবে।”

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) হুয়াওয়ের আয় হয়েছে ৪০১ দশমিক ৩ বিলিয়ন চাইনিজ ইউয়ান। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।

প্রতিষ্ঠানটি এ বছর গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ১২০ বিলিয়ন চাইনিজ ইউয়ান বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে উইলিয়াম ঝু বলেন, “আমরা আশা করছি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে  আমাদের যে সমস্যা চলছে তা খুব শিগগিরই দূর হবে। সবকিছু আবার নতুন ভাবে এবং ভালোভাবে শুরু হবে।”

এছাড়াও অনুষ্ঠানে হুয়াওয়ে 'কুনপেং ইকোসিস্টেম বেস' উন্মোচন করা হবে এবং সর্বশেষ প্রযুক্তি যেমন ৫জি টেলিমেডিসিন এবং বধির শিশুদের জন্য কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন অ্যাপ্লিকেশন সংক্রান্ত সর্বশেষ অগ্রগতি প্রদর্শন করা হবে।

চীনে এখনও ফাইভ-জি প্রযুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়নি। চীনের কয়েকটি হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা সেবার জন্য ফাইভ-জি প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে হুয়াওয়ে।

‘ফাইভ-জি টেলিমেডিসিন’ নামের চেংদু শহরের তেমনি একটি হাসপাতাল পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের।

এছাড়া পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া ফাইভ-জি স্মার্ট বাসে করে সাংবাদিকদের শহরের দর্শনীয় স্থান দেখানো হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ফাইভ-জি এখন বাস্তবতায় পরিণত হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী ২০টি দেশের ৩৫টি ক্যারিয়ার ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক সেবা চালু করেছে। আর ৩৩টি দেশ ফাইভ-জি স্পেক্ট্রাম (তরঙ্গ) ডিস্ট্রিবিউট করেছে।

২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরে হুয়াওয়ে ইনোভেশন ডে আয়োজিত হয়েছে। শরহগুলোরর মধ্যে রয়েছে লন্ডন, মিলান, প্যারিস, সিঙ্গাপুর, সিডনি, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, দুবাই এবং সাও পাওলো।

হুয়াওয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।১৭০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে সেবা দিচ্ছে হুয়াওয়ে; যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের সমান।

বাংলাদেশে বর্তমানে চালু ফোর-জি নেটওয়ার্ক সিংহভাগই হুয়াওয়ে সরবরাহ করে থাকে।

সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮ অনুযায়ী ২০২১-২৩ সালের মধ্যে দেশে ফাইভ-জি সেবা চালুর প্রতিশ্রুতি রয়েছে।দেশে ২০২১ সালের মধ্যে পঞ্চম প্রজন্মের (ফাইভ-জি) টেলিযোগাযোগ সেবা চালুর প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

বাংলাদেশে ২০২১ সালের মধ্যে ফাইভ-জি মোবাইল ফোন সেবা চালুর উদ্যোগ হিসেবে আগামী বছরের জানুয়ারি নাগাদ একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের দিকে এগোচ্ছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) জাকির হোসেন খাঁন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৩ সেপ্টেম্বর নীতিমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

তিনি বলেন, ফাইভ-জি সেবা চালু করতে পরিকল্পনা ও একটি নীতিমালা প্রণয়নে সরকারের প্রতিনিধি, নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিনিধি, অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিশন গত ৪ অগাস্ট একটি কমিটি গঠন করে।

কমিটি বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি চালু করতে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা (ফাইভ-জির রূপরেখা, সম্ভাব্য তরঙ্গ, তরঙ্গমূল্য এবং বাস্তবায়ন সময়কাল ইত্যাদি) প্রণয়ন করবে। সেইসাথে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালও তৈরি করবে।

বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে টু-জি প্রযুক্তির মোবাইল ফোন সেবা চালুর পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই ২০১৩ সালে আসে থ্রি-জি। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে চালু হয় ফোর-জি সেবা।