বিমানের অপারেশনস ম্যানেজারদের ফিরিয়ে ‘অন্য কাজে লাগানো হবে’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অপারেশনস ম্যানেজারদের দেশে ফিরিয়ে ‘অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগানোর’ পরিকল্পনার কথা বলছেন রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থার কর্মকর্তারা।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2019, 04:54 PM
Updated : 22 August 2019, 04:54 PM

এছাড়া এই পদক্ষেপে বিমানের খরচ কমবে বলেও মনে করছেন তারা।

যুক্তরাজ্য, জেদ্দা, রিয়াদ, আবুধাবি, দুবাই, মালয়েশিয়া, দিল্লি ও কলকাতায় বিমানের অপারেশনস ম্যানেজারদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ইনামুল বারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিমানের ১৭টি স্টেশনের মধ্যে অপারেশনস  ম্যানেজার আছেন আটটিতে। বাকিগুলোতে তাদের ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

“আমরা যে তথ্য সংগ্রহ করেছি তার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আমাদের দেশে ভালো ম্যানপাওয়ারের এমনিতেই অভাব আছে। যাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে, কার্গোতে লোকের চাহিদা বাড়ছে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে চাহিদা বাড়ছে। এদেরকে অন্য জায়গায় কাজে লাগানো হলে লোকবলের উপযুক্ত ব্যবহার হবে।”

তাছাড়া বিমানের খরচও কমবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাদের নিয়ে আসার একটা কারণ খরচ কমানো। আমাদের মনে হচ্ছে, এটা না হলেও চলে। এই লোকগুলো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত,  সিনিয়র ও দক্ষ। তাদের আরও ভালো কাজে আমরা ব্যবহার করতে পারব। আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের প্রত্যাহার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসব।”

ঢাকায় ফ্লাইট পরিচালনকারী এয়ারলাইনসগুলোর এখানে অপারেশনস ম্যানেজার না থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অপারেশনস ম্যানেজার প্রত্যাহার হলে ঢাকাতে অন্য এয়ারলাইনসগুলো যেভাবে কাজ করছে আমরাও সেভাবে কাজ করব।”

২০১০ সালে বিমানের অপারেশনস ম্যানেজারের পদটি সৃষ্টি হয়। তার আগে যেভাবে কাজ হত এখন থেকে সেভাবেই যুক্তরাজ্য, জেদ্দা, রিয়াদ, আবুধাবি, দুবাই, মালয়েশিয়া, দিল্লি ও কলকাতায় কাজ হবে।

অপারেশনস ম্যানেজার ছাড়া দোহায় কাতার এয়ারওয়েজ, দাম্মামে সাউদিয়া এয়ারলাইন্স থেকে সহায়তা নেয় বিমান। এছাড়া সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও কুয়েতে সেই দেশের জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা থেকে সহায়তা নিয়ে থাকে।

ফ্লাইট পরিচালনাকারী দেশগুলোতে এয়ারলাইনসের প্রধান প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন কান্ট্রি ম্যানেজার। তারপর থাকেন স্টেশন ম্যানেজার, অপারেশনস ম্যানেজার ও ফাইন্যান্স ম্যানেজার। তবে কোন স্টেশনে কোন পদে কে থাকবে, পদের সংখ্যা বা সেই পদ কতটুকু প্রয়োজনীয় সেটা ওই এয়ারলাইনস নির্ধারণ করে।

ফ্লাইট সূচি পরিকল্পনা, কোন ফ্লাইটে কোন পাইলট, ক্রু ও অ্যাটেনডেন্ট থাকবেন তা ঠিক করা, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, বিভিন্ন দেশের আকাশের নোটাম চেক ও জিরো ফুয়েলিং ক্যালকুলেশনের কাজ করে থাকেন অপারেশনস ম্যানেজাররা।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বিমানের ফ্লাইট অপারেশন শাখার একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমানে তারা ম্যানেজার সমমর্যাদার পদে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাদের বেতন বিমানের বেতন কাঠামোর গ্রেড-৮ অনুযায়ী হয়। দেশের বাইরে দায়িত্ব পালন করায় তারা বেতনের পাশাপাশি বাড়তি কিছু ভাতা পেয়ে থাকেন।”

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একজন সিনিয়র পাইলট বলছেন, “অপারেশনস ম্যানেজাররা যে দায়িত্ব পালন করেন সেটা চাইলে খুব সহজেই অন্য কেউ পালন করতে পারেন।

“যখন প্রযুক্তি ছিল না তখন তাদের প্রয়োজন ছিল।”

নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে তিনি বলেন, “ফ্লাইট প্ল্যানিং করা অপারেশনস ম্যানেজারের অন্যতম কাজ। এই কাজ বর্তমান সময়ে পাইলট ইন্টারনেটের সহায়তায় আর স্টেশন ম্যানেজারের সহায়তা নিয়েও করতে পারে।

“তাছাড়া নোটাম ব্রিফিংয়ের কাজও ইন্টারনেটের সহায়তায় সঠিকভাবে করা সম্ভব। পাশাপাশি ফুয়েল ম্যানেজমেন্টের কাজও পাইলট অপারেশনস ম্যানেজার ছাড়া স্টেশন ম্যানেজার বা অন্য কাউকে নির্দেশনা দিয়ে করিয়ে আনতে পারেন। এজন্য বাড়তি কারও তেমন প্রয়োজন নেই।”

ওই পাইলট বলেন, “বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ডিসপাস করার জন্য অপারেশনস ম্যানেজারের দরকার হয় এটা ঠিক। এজন্য তাকে সিভিল এভিয়েশন থেকে লাইসেন্সও নিতে হয়। কিন্তু তার অবর্তমানে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অন্য কোনো দেশের অপারেটরের সাহায্য নিয়ে সেই দেশের স্টেশনে সহজেই এই কাজটি করা সম্ভব।”  

বিমানের পরিচালনা পর্ষদের দুজন সাবেক পরিচালকও মনে করছেন, অপারেশনস ম্যানেজারদের প্রত্যাহারে ‘সঠিক’ ও ‘বাস্তবসম্মত’ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিমান।

সাবেক পরিচালক কাজী ওয়াহিদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমানের সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত সঠিক হয়েছে। কারণ, বিমানের এমন স্টেশনও আছে যেখানে সপ্তাহে অল্প সংখ্যক ফ্লাইট পরিচালিত হয়। সেখানে অপারেশনস ম্যানেজার ও স্টেশন ম্যানেজার এই দুটি পদের কোনো দরকার নেই। সেটশন ম্যানেজারই যথেষ্ট।”

ঢাকা থেকে দিল্লিতে সপ্তাহে বিমানের তিনটি ফ্লাইট রয়েছে। এ রকম অনেক গন্তব্যেই বিমানের প্রতিদিন ফ্লাইট নেই।

আরেক সাবেক পরিচালক নাফিস ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, “অপারেশনস ম্যানেজার প্রত্যাহার নতুন কিছু না। এটা আগেও করা হয়েছে। অপারেশনস ম্যানেজারদের যদি প্রত্যাহার করা হয় তখন দুটো জিনিস করা হয়। যে স্টেশন অপারেট করছেন ওই স্টেশনে যিনি হ্যান্ডলিং করছেন তার উপর নির্ভর করা হয়, আর যারা ট্রাফিকে কাজ করছেন তাদেরকে ওই কাজটা করতে হয়। এখানে স্টেশন ম্যানেজারের কাজটা একটু বেড়ে যায়।”

এ বিষয়ে বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ফারহাত হাসান জামিল বলেন, “অপারেশনস ম্যানেজার না থাকলে তাদের দায়িত্ব কান্ট্রি ম্যানেজার ও স্টেশন ম্যানেজার পালন করবেন। তারা পালন করতে কোনো অসুবিধা হলে প্রয়োজনে আউটসোর্সিং করা হবে।

“অপারেশনস ম্যানেজাররা দেশে ফিরে এলে ফ্লাইট অপারেশনের বিভিন্ন শাখায় তারা কাজ করবে।”

ওই আট অপারেশনস ম্যানেজারদের জন্য বিমানের কত টাকা খরচ করতে হচ্ছে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “একদম সঠিক হিসাবটা বলতে পারছি না।”