অফশোর ব্যাংকিংয়েও একই সিআরআর-এসএলআর সংরক্ষণ করতে হবে

অফশোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে একই সিআরআর এবং এসএলআর সংরক্ষণ করতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2019, 06:17 PM
Updated : 19 August 2019, 06:17 PM

বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে গঠিত ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের নগদ জমা অনুপাত- সিআরআর এবং বিধিবদ্ধ তরল অনুপাত-এসএলআর সংরক্ষণের হিসাবায়ন পদ্ধতি ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রচলিত ব্যাংকের মতো এসব ইউনিটকেও সাড়ে ৫ শতাংশ হারে নগদ এবং বিভিন্ন উপাদানের বিপরীতে ১৩ শতাংশ হারে রাখতে হবে।

ব্যাংকগুলো চাইলে বৈদেশিক বা স্থানীয় মুদ্রায় তা সংরক্ষণ করতে পারবে।

সোমবার এক সার্কুলার জারি করে এই পদ্ধতি মানতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন থেকে জারি করা সার্কুলারটি সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকগুলোর অবদান বাড়াতে বৈদেশিক ব্যবসার (অফশোর ব্যাংকিং) নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, সাধারণ ব্যাংকিংয়ের মতো অফশোর ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রমেও দায়-সম্পদ ব্যবস্থাপনা (এএলএম) নীতিমালা মেনে চলতে হবে। তার মানে প্রচলিত ধারার একটি ব্যাংক একশ টাকা আমানতের বিপরীতে সাড়ে ৮৩ টাকা এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো ৮৯ টাকা ঋণ দিতে পারবে। আর মূলধন, সিআরআর ও এসএলআর হিসাবায়নের সময় অফশোর ব্যাংকিং বিবেচনায় নিতে হবে।

নতুন নীতিমালার আলোকে অফশোর ব্যাংকিংয়ে সিআরআর ও এসএলআর হিসাবায়ন পরিপালন করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের মহাব্যবস্থাপক রেজাউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশে কর্মরত সব ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং যেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও অবদান রাখতে পারে সেজন্য নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

“আমরা আজকে নতুন পদ্ধতি প্রকাশ করেছি; যেখানে দেখিয়ে দিয়েছি যে কিভাবে দেশের ব্যাংকগুলো বৈদেশিক ব্যবসার ক্ষেত্রে দেশে ঘোষিত সিআরআর এবং এসএলআর মেনে চলবে।”

“আগে দেশের ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক ব্যবসার ক্ষেত্রে তাদেরকে দেশে ঘোষিত সিআরআর এবং এসএলআর মেনে চলতে হত না, জাতীয় স্বর্থে আমরা এ আইন করেছি।”

বর্তমানে দেশে সিআরআারের হার হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ এবং এসএলআর ১৩ শতাংশ।

সোমবারের সার্কুলারে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের মেয়াদি ও চলতি দায়ের ওপর ভিত্তি করে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সিআরআর ও এসএলআর রাখতে হবে। আর এ সংক্রান্ত রিপোর্ট করতে হবে আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে।

তবে কোন ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের চলতি ও মেয়াদি দায় কতো সে বিষয়ে রিপোর্ট করতে হবে আগামী ২৭ আগন্তের মধ্যে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“আমরা মাত্র সার্কুলারটি পেয়েছি। বিশ্লেষণ করে দেখছি, এটি আমাদের ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে কি প্রভাব ফেলবে? তবে মনে হচ্ছে আমাদের জন্য ভালই হবে।”

সিআরআর হচ্ছে তফসিলি ব্যাংকগুলো কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলক নগদ জমা বা সংরক্ষণের হার। আর  এসএলআর হচ্ছে ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ তরল সম্পদ সংরক্ষণের হার।     

সিআরআর এবং এসএলআর হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থাপনার হাতিয়ার। সিআরআর এবং এসএলআর এর হার বাড়ালে অর্থনীতিতে তারল্য কমে আর কমালে অর্থনীতিতে তারল্য বাড়ে।

অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের ভেতরে বিদেশি ব্যাংকের কার্যক্রম। অফশোর ইউনিটের ব্যবস্থাপনা, হিসাব, আমানত, ঋণ- এসব কার্যক্রম পুরোটাই আলাদা। শুধু বছর শেষে মুনাফা অথবা লোকসানের হিসাব যুক্ত হয় ব্যাংকের হিসাবে।

অফশোর ব্যাংকিংয়ে দেশীয় মুদ্রায় কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হয় না। এতে শুধু ডলারের পাশাপাশি ইউরো, পাউন্ড, জাপানি ইয়েনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

১৯৮৫ সালে অফশোর ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হলেও পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি হয়েছে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি।