কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত সরকারের

কোরবানির পশুর চামড়ার যথাযথ দাম না পাওয়ার অভিযোগের মধ্যে কাঁচা রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2019, 12:27 PM
Updated : 13 August 2019, 02:06 PM

মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ বকসী এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, “উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রয় নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।”

নির্ধারিত মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া কেনা-বেচা না হওয়ার তথ্য তুলে ধরে চামড়া ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

বাংলাদেশে সারা বছর যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার অর্ধেক হয় এই কোরবানির মৌসুমে। কোরবানি যারা দেন, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন ট্যানারিতে। এ সময়ই সবচেয়ে বেশি চামড়া সংগ্রহ করেন ট্যানারি মালিকরা। 

প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য ন্যূনতম দাম ঠিক করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ট্যানারি মালিকদের দাবিতে গত বেশ কয়েক বছর ধরে ওই দাম কমতির দিকে।

এবার ঈদের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গতবছর কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার যে দাম সরকার ঠিক করে দিয়েছিল, এবারও সেটাই রাখা হয়েছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনবেন ব্যবসায়ীরা। আর খাসির কাঁচা চামড়া সারাদেশে ১৮-২০ এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকা দরে কেনাবেচা হবে।

রিকশা, ভ্যান, পিক-আপে করে নবাবপুরের পাইকারদের কাছে আনা হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

কিন্তু এবারও ঈদের দিন বিকালে চামড়ার দাম পড়ে গেলে ‘সিন্ডিকেটের কারসাজির’ অভিযোগ তোলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যেই রপ্তানির সিদ্ধান্ত এলো। এর আগে কাঁচা চামড়া রপ্তানি না হলেও স্থলসীমানা অতিক্রম করে ভারতে পাচারের অভিযোগ বহু পুরনো।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালার (২০১৯) অনুযায়ী, বাংলাদেশের ২২০টি ট্যানারি থেকে বছরে প্রায় ২৫০ কোটি বর্গফুট কাঁচা চামড়া (হাইড ও স্কিন) প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই (৬৩ দশমিক ৯৮) গরুর চামড়া।

এরপর ছাগলের চামড়া ৩২ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও মহিষের চামড়া ২ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং ভেড়ার চামড়া রয়েছে ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত চামড়ার মধ্যে ৭৬ শতাংশের বেশি রপ্তানি করা হয়।

কাঁচামাল সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যায়েই শিল্পটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। পশু জবাই করার পর্যায়ে চামড়া (হাইড ও স্কিন) থেকেই সমস্যাগুলোর সূত্রপাত হয়। গবাদিপশুর চামড়ার মান কমে যাওয়ার কারণগুলো হলো পশু চিহ্নিত করার জন্য চামড়ায় ছেঁকা দেয়া, সঠিক পদ্ধতিতে চামড়া না ছাড়ানো এবং অনুপযুক্ত উপায়ে সংরক্ষণ ও পরিবহন।

পরিষ্কার করা হচ্ছে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতির সিদ্ধান্ত জানিয়ে গুণাগুণ অক্ষুণ্ন রেখে যথাযথভাবে চামড়া সংরক্ষণের জন্য ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এজন্য বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে তিনভাবে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়। এগুলো হলো- প্রক্রিয়াজাতকৃত চামড়া, জুতা এবং চামড়াজাত পণ্য: যেমন হাতব্যাগ, বেল্ট ও ওয়ালেট ইত্যাদি।

বাংলাদেশ ৯৩টি বড় নিবন্ধিত জুতা উৎপাদনকারী প্রায় ৩৭ কোটি ৮০ লাখের বেশি জোড়া জুতা তৈরি করে। প্রক্রিয়াজাতকৃত চামড়া এখন প্রধানত সাভারের ট্যানারিগুলোতে তৈরি করা হয়।

জুতা উৎপাদনে বিশ্ববাজারে ১ শতাংশের কম অংশীদার বাংলাদেশের অবস্থান ২০১৬ সালে অষ্টম অবস্থানের ছিল। তবে ২০১৪ সাল থেকে চার বছরে এখাতের সার্বিক রপ্তানি ৮ শতাংশ কমে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ১০৯ কোটি ডলারে (মোট রপ্তানির ৩.৫৪%) নেমেছে।