বুধবার রাজধানীর বৃহত্তম গাবতলী পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক পশু। সদরঘাট-গাবতলী সড়কের পশ্চিম পাশের এই স্থায়ী হাটের বিস্তৃতি ঈদের আগে আমিনবাজার সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়েছে।
পূর্বদিকের বড় অংশ জুড়ে গরু, মাঝখানে কিছু অংশে ছাগল এবং পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে কিছু মহিষ। সেখানে দুয়েকটি উটও রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য।
এই হাটে মধ্যবিত্তের জন্য যেমন মাঝারি ও ছোট আকারের গরু এসেছে, তেমনি ধনীদের ধরতে বিশাল আকারের গরু নিয়ে হাজির হয়েছেন খামারিরা। এদেরই একজন ঝিনাইদহের আব্দুল্লাহ এগ্রো অ্যান্ড ডেইরি ফার্মের মালিক শাহ আলম মিয়া। তার বহরে রয়েছে পাঁচটি গরু, যার প্রায় প্রতিটিই দশাসই চেহারার।
শাহ আলম মিয়া তার জার্সি জাতের ‘যুবরাজের’ দাম চাইছেন ৪০ লাখ টাকা। প্রায় দুই টন ওজনের এই বলদ গরুর দাম ইতোমধ্যেই ২৭ লাখ টাকা উঠেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
গাবতলী পশুর হাট পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য সানোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মঙ্গলবারই হাটে ব্যাপক আকারে গরুর চালান আসা শুরু হয়েছে।
“অন্য বছরের তুলনায় এবার আকারে বড় গরুর উপস্থিতি বেশি দেখা যাচ্ছে।”
হাটে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার খামারি শফিকুল নিয়ে এসেছেন ফিজিয়ান ও পাকিস্তানি জাতের তিনটি গরু। চার বছর বয়সী এসব গরুর দাম চাচ্ছেন যথাক্রমে ৮ লাখ, ১২ লাখ ও ১৫ লাখ টাকা।
শফিকুল জানান, অন্যান্য প্রতিবেশী মিলিয়ে মোট আটটি গরু ট্রাকে করে এনেছেন তিনি। ভাড়ার জন্য খরচ পড়েছে ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া হাটে গরুগুলো রাখার জন্য হাট কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
হাটের উত্তরপ্রান্তে র্যাব-পুলিশের কন্ট্রোল রুমের পাশ ধরে ঢুকতেই চোখে পড়ে কুষ্টিয়া থেকে আসা গোলাপ শেখের ১২টি মোটা-তাজা গরু।
এছাড়াও মেহেরপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলার গরুর দেখা মিলেছে হাটে।
বড় গরু এনে লাখ লাখ টাকা দাম হাঁকলেও ডিজিটাল পেমেন্টের কোনো ব্যবস্থা নেই এই ব্যবসায়ীদের কাছে। গাবতলীতে কোনো গরু ব্যবসায়ীকেই ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা করতে দেখা যায়নি।
‘যুবরাজের’ মালিক শাহ আলম বলেন, এত বড় অংকের টাকা ব্যাংকে লেনদেন করতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কোনো কার্ডে টাকা নেওয়াটা ‘সুবিধার’ মনে করছেন না তিনি।
হাটের উত্তরপ্রান্তে প্রবেশ মুখে বড় আকৃতির গরুগুলো অবস্থান করলেও দক্ষিণপাশে রয়েছে তুলনামূলক ছোট আকারের গরু। তবে এসব গরুরও দাম চাওয়া হচ্ছে এক লাখ টাকা থেকে দুই লাখ টাকার আশপাশে। ক্রেতা সমাগম না বাড়ায় বিক্রেতারা সেখানে গরুর পাশে ঘুমিয়ে সময় পার করছেন।
কুষ্টিয়া থেকে আসা সোহেল রানা জানান, মঙ্গলবার বিকালে ১৫টি গরু নিয়ে এসেছেন তিনি। গতরাত নির্ঘুম পার করার কারণে দিনের বেলায় ঘুম-ক্লান্তিতে চোখ ভেঙে পড়ছে তার।
সোহেলের মতো আরও অনেককেই দেখা যায় বিশ্রাম নিতে, কেউ বা ধুয়ে দিচ্ছিলেন গরুর শরীর।
আগামী ১২ অগাস্ট, সোমবার এবারের কোরবানির ঈদ। সেই হিসাবে পশু কেনাকাটায় হাতে সময় আছে আর মাত্র চার দিন।
তিনি বলেন, অনেকে এসে ঘুরে যাচ্ছেন, পছন্দের গরুর ওপর নজর রাখছেন।
“আগামীকাল থেকে হয়ত কেনাকাটা শুরু হবে।”
রাজধানীর বাসা-বাড়িতে গরু রাখার সমস্যার কারণে বিক্রি শেষ সময়ে বেশি হতে দেখা যায়।
হাটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন র্যাব কর্মকর্তা বলেন, হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যাবতীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী হাটের আশপাশে অবস্থান করছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা জনিত কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা করা যাচ্ছে।