ভুটান থেকে প্রথম পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশে

ভুটানের পাথরবাহী একটি জাহাজ নারায়ণগঞ্জ এসে পৌঁছেছে, দুদিন পর যার পাথর খালাস শুরু হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2019, 02:41 PM
Updated : 18 July 2019, 02:45 PM

গত মঙ্গলবার সিমেন্ট তৈরির জন্য এক হাজার মেট্রিক টন পাথর নিয়ে জাহাজটি ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে ৬১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ বন্দরে পৌঁছায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়াণগঞ্জের মেঘনা ঘাটে ফিতা কেটে এই পাথর খালাস শুরু করা হয়।

ভুটান থেকে পাথর নিয়ে ভারতীয় এই জাহাজ আসামের ধুবরি থেকে যাত্রা শুরু করে।

ফিতা কেটে জাহাজে আনা পাথর খালাস কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান, বসুন্ধরা গ্রুপের ডিরেক্টর ইয়াশা সোবহান।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান মাহবুবুল ইসলাম, বাংলেদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনম টি রাবগী ও ভারতের রাষ্ট্রদূত রিভা গাঙ্গুলী দাশ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, কাস্টমস হাউস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ভারতীয় দূতাবাস, ভুটান দূতাবাস ও বসুন্ধরা গ্রুপের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ বলেন, ভুটান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে নদীপথে পাথর আমদানি দেশ তিনটির ট্রেডের এক নবসূচনা করল। এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

“এই ঐতিহাসিক উদ্যোগ ভারত-ভুটান-বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা নতুন স্বপ্ন দেখতে পারি। আগামী দিনগুলোর বাণিজ্য এভাবেই হওয়া উচিত। এতে তিন দেশের সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটবে এবং আমরা সেটিকে আরও নতুন ও উচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাব।”

ভূটানের রাষ্ট্রদূত সোনম টি রাবগি বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে। এতে ভারত ভুটান ও বাংলাদেশ একদিকে উপকৃত হবে অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যাকার সম্পর্কের উন্নতি হবে। এতে পরিবহন ও অন্যান্য খরচও কমবে।

বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর এম মাহবুব উল ইসলাম বলেন, এটি ত্রিদেশীয় যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে, দেশেগুলোর বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াবে এবং জাতিগত সংযোগ ও সম্পর্ক বাড়াতে সহায়তা করবে।

“দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আমাদের স্বাধীনতার পর আবার এই নদীপথের ট্রানজিট সুবিধা চালু হলো। নদীপথের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা বাড়ানো ও আমাদের মধ্যাকার সম্পর্কের উন্নতি ঘটানো সম্ভব।”

ড্রেজিং এবং নদীপথের অন্যান্য কার্যক্রমে বসুন্ধরা ভালো অংশীদার উল্লেখ করে মাহবুব বলেন, তারা খুবই আন্তরিক। নদীপথের যেকোনো সমস্যা সমাধানে সব সময় বিআইডব্লিউটিএ প্রস্তুত এবং একসঙ্গে কাজ করলে যেকোনো সমস্যা সমাধান সম্ভব।

বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান আরও বলেন, “নদী ড্রেজিং করছে ফলে নদীপথে কার্গো আমদানিতে আমাদের সমস্যা নেই। আমরা আশুগঞ্জ চিলমারী ও অন্যান্য পোর্ট উন্নয়নে বিশেষভাবে কাজ করছি। ত্রিপুরা থেকে কার্গো আশুগঞ্জ আসতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমরা সাগরপথ ও গোমতী নদীতে আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের নদীপথের উন্নয়নে বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে।”

গত ১২ জুলাই ‘এমভি এএসআই’ নামের ভারতের অভ্যন্তরীণ নৌ-কর্তৃপক্ষের এই জাহাজটি আসামের ধুবরি থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে নারায়াণগঞ্জ পৌঁছায়। আসামের ধুবরি থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে ভুটানের ফুয়েন্টশোলিং থেকে ট্রাকে করে পাথর আনা হয়েছে।

জাহাজটি এক হাজার মেট্রিকটন পাথর পরিবহন করছে, যা স্থলপথে পরিবহন করতে ৫০টিরও বেশি ট্রাক প্রয়োজন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

২০১৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফর ও এপ্রিল ২০১৯ এ ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের স্বার্থে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যাবহারের উদ্দেশ্যে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা হয়েছিল। এর আওতায় এই পণ্যবাহী জানান বাংলাদেশে এলা বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান।