সদ্য শেষ হওয়া এই অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
এই অংক লক্ষ্যের চেয়ে ৪ শতাংশ এবং আগের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) চেয়ে সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি।
মূলত তৈরি পোশাকের উপর ভর করে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়েই অর্থবছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। মোট রপ্তানির ৮৪ দশমিক ২০ শতাংশই এসেছে এই খাত থেকে।
আর সে কারণে ১১ মাসে (জুলাই-মে) যেখানে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল; অর্থবছর শেষে তা ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।
আগের বছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার।
এ হিসাবেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
তবে এই প্রবৃদ্ধিতে খুব বেশি খুশি হন পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৭৫শতাংশ। সেখানে আমাদের পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে অর্ধেকেরও কম; ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
“আমাদের এখন পোশাকের দাম বাড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার, মালিক এবং শ্রমিক সবাই মিলে এক সাথে কাজ করতে হবে।”
“তানাহলে এখন যে ১০/১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে সেটাও ভবিষ্যতে থাকবে না।”
অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার পুরো বছর ধরেই রপ্তানিতে মোটামুটি ভালো প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রেমিটেন্সের পাশপাশি রপ্তানি আয়ের ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে অর্থনীতিও স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে। আমদানি বাড়ার পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েনি।”
‘তবে তৈরি পোশাকের উপর নির্ভর করে এই আয় মোটেই ভালো নয়’ মন্তব্য করে জায়েদ বখত বলেন, “অনেক দিন ধরেই আমরা রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের কথা বলছি…।কিন্তু খুব বেশি কাজ হচ্ছে না। এই দিকে আমাদের এখন বেশি নজর দিতে হবে।”
তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল শুনিয়েছেন আশার কথা।
“আমাদের আইসিটি, চামড়া, ওষুধ, আসবাবপত্র, জুয়েলারি গুরুত্বপূর্ণ খাত হতে পারে।”
পোশাক খাত
রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ (৩৪.১৩ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ২০ শতাংশ।
গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ।
গত অর্থবছরে নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৬৮৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। উভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৭২৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার: প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
চামড়াজাত পণ্য
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের উৎস চামড়া শিল্পের খরা কাটছে না। ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি নিয়েই শেষ হয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি।
গত এ খাতের রপ্তানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ১০১ কোটি ৯৮ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। আগের বছরে আয় হয়েছিল ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। লক্ষ্য ধরা ছিল ১১২ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
পাট পণ্য
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮১ কোটি ৬২ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই খাতে দেখা দিয়েছে ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
হিমায়িত চিংড়ি
গত অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩৬ কোটি ১১ ডলার আয় করেছে। রপ্তানির এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম।
এ খাতের লক্ষ্য ছিল ৩৪ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৪০ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।
কৃষিপণ্য
তবে কৃষি পণ্য রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন কৃষি পণ্য রপ্তানি করে গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৯০ কোটি ৮৯ লাখ ডলার আয় হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ২৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
গত অর্থবছরে শাক-সবজি রপ্তানিতে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তামাক রপ্তানি বেড়েছে ১২ দশমিক ৩১ শতাংশ। শুকনা খাবার রপ্তানি ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। চা রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
ওষুধ
ওষুধ রপ্তানিতে ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।
গত অর্থবছরে ১৩ কোটি ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। আগের বছরে আয় হয়েছিল ১০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। এ সময়ে রপ্তানির লক্ষ্য ধরা ছিল ১১ কোটি ২২ লাখ ডলার।
গত অর্থবছরে ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ (১৬.৪২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ঝিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।