‘ব্যবসা-সহায়ক’ বাজেটে সংস্কার চায় এফবিসিসিআই

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘ব্যবসা সহায়ক’ মনে করলেও পাস করার আগে আরও কিছু সংস্কার চেয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2019, 04:13 PM
Updated : 27 June 2019, 04:26 PM

মাঠ পর্যায়ে কর কর্মকর্তাদের হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধ সরকারকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধও করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ও অর্থবিলের উপর পর্যালোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে এফবিসিসিআই। বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসেসিয়েশনের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।

গত ১৩ জুন  অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করেন, যা আগামী রোববার জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার কথা রয়েছে।

আলোচনার শুরুতে এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, “আমরা এই বাজেটকে বিভিন্ন কারণে জনমুখী ও ব্যবসা-সহায়ক বাজেট হিসাবে মন্তব্য করেছি। শিল্প খাতে বিনিয়োগ, উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানি শিল্পের বহুমুখী প্রসার, প্রণোদনা ও শিল্পকে অধিক প্রতিযোগিতা সক্ষম করা হয়েছে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, আরএন্ডডি, উদ্ভাবন, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও শিক্ষাখাতে যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, তা জাতিকে গতিশীল করবে। 

“তবুও বাজেট ও অর্থবিল পর্যালোচনা করে এবং এফবিসিসিআই অধিভুক্ত চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে’ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

১০৬টি চেম্বার ও ৪০০ অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে গঠিত এফবিসিসিআইর প্রধান বলেন, “মাঠ পর্যায়ের কর কর্মকর্তারা বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে কর আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে। ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে অবশ্যই চেম্বার/অ্যাসোসিয়েশন এবং এফবিসিসিআই নেতাদের জানাতে হবে।”

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতেই এই বাজেট সংসদে পাস হবে। ভ্যাট, ট্যাক্স নিয়ে কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে এর পরেও কোনো অসঙ্গতি থাকলে সেটা বাজেট পাসের পরও আলাপ আলোচনার সুযোগ রয়েছে। বাজেটে এখনও অসামঞ্জস্যের কিছু থাকলে সেটা আলাপ আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।

তিনি বলেন, “বন্ড সুবিধা নিয়ে ব্যবসায়ীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। হাজার হাজার ব্যবসায়ীর মধ্যে হাতে গোনা ৪/৫ জন হয় তো বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এর জন্য পুরো সেক্টরের ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করা ঠিক হবে না। বিশেষ করে ভ্যাটের লোকজনের হয়রানির কারণে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত থাকেন। এধরনের পরিস্থিতি কাম্য নয়।”

এফবিসিসিআইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করছে। কিন্তু এর জন্য পুরো সেক্টরকে হয়রানি করা ঠিক হবে না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভ্যাট-ট্যাক্স কর্মকর্তাদের হয়রানিমূলক কাজ বন্ধ করতে হবে। ভালো ব্যবসায়ীরা এটাকে ভালোভাবে নিচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে স্টিল শিল্পের উপর যেভাবে কর বাড়ানো হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। বাজেটের কারণে কোনো সেক্টরে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়বেনা বলে অর্থমন্ত্রী যে ঘোষণা বাজেট বক্তৃতায় দিয়েছেন, এটা তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাজেট পাশের আগে এগুলোর সমাধান প্রয়োজন।”

বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে যে ‘যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি’ করা হবে, তাতে বিসিআইকেও যেন রাখা হয়।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি ৫০০ টাকার পরিবর্তে তিন হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা করা হলে ব্যবসা করা সম্ভব হবে না।

এমএস রডের ওপর এবার যে হারে ভ্যাট ও কর আরোপ করা হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট সব খাতে অচলাবস্থার সৃষ্টি করবে বলেও সাবধান করেন তিনি।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, পোশাক খাতের রপ্তানির উপর যে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে, তাতে আবার কর তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

“সহায়তার উপর আবার ট্যাক্স আরোপ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।  এটা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হবে।”

এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসির, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধি নাদিয়া বিনতে আমিন, পটুয়াখালী উইমেন চেম্বারের প্রতিনিধি ইসমাত জেরিন খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাব

>> শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি থেকে আগাম কর (এটি) প্রত্যাহার।

>> যোগানদারের ক্ষেত্রে ভ্যাট ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা।

>> টার্নওভার সীমা তিন কোটি টাকা করা হয়েছে, তাই উৎসে কর কর্তনকারী প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার সীমা  এক কোটি টাকার পরিবর্তে তিন কোটি টাকা করা।

>> কর কর্মকর্তার জব্দকরণ ও আটক করার ক্ষমতা ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করার ক্ষমতা বাতিল করা।

>> ৫, ৭ দশমিক ৫ ও ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রদানকারীদের ক্ষেত্রে উপকরণ কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া

>> পৃথক নিবন্ধনের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের বিধান করা।

>> আইন প্রতিপালনে অনিয়মের জরিমানা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এটি আবার ১০ হাজার টাকায় ফিরিয়ে আনা।

>> তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাতের মতো অন্যান্য রপ্তানিখাতেও একই রকম কর্পোরেট করহার নির্ধারণ।

>> নগদ ভর্তুকি থেকে অগ্রিম কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ পুনর্বহাল করা।

>> স্টক ডিভিডেন্টের উপর ১৫ শতাংশ কর প্রত্যাহার করা

>> ট্রেড লাইসেন্স নাবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর হার ২০১২ সাল থেকে মূল্যস্ফিতির হার বিবেচনায় নির্ধারণ করা।

>> রপ্তানি আয়ের উৎসে ন্যূনতম করহার শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ করা।