ভ্যাটের হার আরও স্পষ্ট করা দরকার: এফবিসিসিআই

বহুল আলোচিত ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার আগে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার ভ্যাটের হার নিয়ে অস্পষ্টতা কাটেনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নেতাদের।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2019, 03:57 PM
Updated : 13 June 2019, 04:52 PM

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট উপস্থাপনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটির সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

“তবে ভ্যাটের বিষয়ে খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট হার অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কার করা হয়নি। অর্থাৎ কোন খাতে বা কোন পণ্যে কত শতাংশ ভ্যাট আরোপিত হবে, তা ষ্পষ্ট করা হয়নি।”

ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার মুখে ভ্যাট আইন এত দিন ধরে কার্যকর না করতে পারার পর ২০১৯-২০ অর্থ বছর থেকে তা কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার।

ব্যবসায়ী নেতারা আগে থেকেই বলছিলেন, কোন পণ্যে কত শতাংশ ভ্যাট বসবে, তা নিয়ে তাদের অস্পষ্টতা কাটছে না। কিন্তু গত ১৪ মে এনবিআর কর্মকর্তাদের পাশে রেখে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা কেটে গেছে।

বাজেট ব্ক্তৃতায় তিনি ভ্যাট আইনে কিছু সংস্কারের প্রস্তাবও করেন। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী যাদের বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকার কম, তাদের ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছেন তিনি। ৫০ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভারের ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়ার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেছেন, সাধারণভাবে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ হলেও নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ, সাড়ে ৭ শতাংশ ও ১০ শতাংশ হার কার্যকর হবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফাহিম বলেন, “ভ্যাটসহ বাজেটের সব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। পরশু পুরো বাজেটের উপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাব।”

‘সমৃদ্ধ আগামীর’ প্রত্যাশা সামনে রেখে আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ব্যয়ের এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৮ শতাংশ বেশি।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “এটি একটি ধারাবাহিক বাজেট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগের দুটি সরকার টানা যে ১০টি বাজেট দিয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় নতুন বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।”

“দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে পুঁজিবাজারসহ অন্যান্য খাত থেকে অর্থায়নের যে কথা বলা হয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই “বলেন শেখ ফাহিম।

‘শিল্পবান্ধব, জনকল্যাণমুখী বাজেট’

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘শিল্পবান্ধব, জনকল্যাণমুখী’ উল্লেখ করে সরকার ও অর্থমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাষ্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের জন্য ১০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের ব্যবস্থা রাখা, ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শ্রমিক নিয়োগ দিলে ৫ শতাংশ কর রেয়াতের প্রস্তাব, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য জাতীয় মানবসম্পাদ উন্নয়ন তহবিল গঠনে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবগুলো খুবই ইতিবাচক। অর্থমন্ত্রীকে সেজন্য ধন্যবাদ।

ভ্যাটমুক্ত টার্নওভারের সীমা ৫০ লাখ টাকা রাখা, টার্নওভার করের ঊর্ধ্বসীমা ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা করা, বিপুল সংখ্যক পণ্য ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার প্রশংসাও করেন বিসিআই সভাপতি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি ওসামা তাসীর এক বিবৃতিতে বলেন, “একটি ধারাবাহিক বাজেট। তবে এ ধরনের বড় বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন করা প্রয়োজন।”

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ‘চ্যালেঞ্জিং’ বলে মনে করেন তিনি।

বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

নতুন বাজেটে শতভাগ খুশি হতে না হতে পারলেও ‘অন্তত ৭০ ভাগ’ খুশি হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক।

তিনি বলেন, “এ বাজেট নিঃসন্দেহে জনকল্যাণমুখী বাজেট। শিল্পের দিক থেকে যদি বলেন, তাহলে বলব শতভাগ খুশি না হলেও শতকরা ৭০ ভাগ খুশি আমরা।”

বিভিন্ন সংকটের কথা তুলে ধরে রপ্তানি ৫ শতাংশ প্রণোদনা দাবি করেছিল বিজিএমইএ। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাকের সব খাতের জন্য এক শতাংশ হারে প্রণোদনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তৈরি পোশাক শিল্পের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম  সেলিম ওসমান বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্পে প্রণোদনা, হ্রাসকৃত করপোরেট করহার অপরিবর্তিত রাখা এবং পোশাক খাতে মূসক অব্যাহতি বহাল রাখায় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

“বাজেটে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানব সম্পদ উন্নয়ন, আইসিটি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিশেষ বিশেষ খাতে আলাদা বরাদ্দ রাখা সরকারের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়ের প্রতিফলন।

পোশাক শিল্পের জন্য উৎসে করহার আগামী ৫ বছরের জন্য বর্তমানের হার (শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ) বহাল রাখতে বাজেটে সুস্পষ্ট নির্দেশনা চেয়েছে বিকেএমইএ।