অনলাইনে কেনাকাটা: কোন পথে বাংলাদেশ
সুমন মাহবুব, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 11 Jun 2019 09:39 AM BdST Updated: 30 Jul 2020 12:04 AM BdST
দেশে অনলাইনে কেনাকাটার পরিমাণ বছরে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা না থাকায় লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং মান নিয়ন্ত্রণে নজরদারির অভাবে থেকে যাচ্ছে।
অনলাইনের ক্রেতারা এখনো পণ্য হাতে পাওয়ার পর নগদ টাকায় মূল্য পরিশোধে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, যাকে বলা হয় ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’। কিন্তু তাতে লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায় না, কর বা শুল্ক ফাঁকির সুযোগ থেকে যায়।
আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা না থাকায় গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা, নিম্নমানের বা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সরবরাহের মত অভিযোগের ক্ষেত্রে ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বাংলাদেশে অন-লাইনে কেনাবেচার শুরু মূলত ২০১১ সাল থেকে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ (এনএসপিবি) চালু করলে ব্যাংকের মাধ্যমে অন-লাইনে মূল্য পরিশোধের পদ্ধতিটি চালু হয়।

দেশে এখন প্রায় দুই হাজার ই-কমার্স সাইট এবং ৫০ হাজার ফেইসবুক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন দেশের মধ্যে ডেলিভারি হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার পণ্য।
এই মুহূর্তে অন-লাইনে বিক্রি হওয়া পণ্যের ৮০ শতাংশ যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে। তবে ফেইসবুকের মাধ্যমে অনেকে যেভাবে পণ্য বিক্রি করছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার আইনগত বৈধতা নেই।
এ খাতকে নিয়মের মধ্যে আনতে সরকার ২০১৮ সালে ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা’ করলেও ই-কমার্স বা ডিজিটাল কমার্সের জন্য কোনো নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এখনও তৈরি হয়নি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ই-কমার্স বা ডিজিটাল কমার্স যাই বলুন না কেন, যদি চান যে সব নিয়মের মধ্যে চলবে, তাহলে একটা মনিটরিং অথরিটি লাগবেই।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মুহূর্তে তেমন তো রেগুলেটারি অথরিটি আমাদের নেই। তবে আমারা এ ব্যাপারে কথাবার্তা বলছি। খুব তাড়াতাড়ি আমরা কিছু একটা করব। আমাদের চিন্তা ভাবনায় আছে।”
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের দুই শিক্ষার্থী গতবছর অক্টোবরে একটি সমীক্ষা চালান। দেশের অন-লাইন বাজারের হাল হকিকত বুঝতে ১০৬ জন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলেন তারা।
উত্তরদাতাদের ৮০ শতাংশ মনে করেন, অনলাইন কেনাকাটায় সময় বাঁচে। আবার ৬০ শতাংশ বলেছেন, সব দিক হিসাব করলে অন-লাইন কেনাকাটায় সময় বেশি খরচ হয়, আর এটা ঝুকিপূর্ণও বটে।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় সবাই মনে করেন, অন-লাইনে কেনাবেঁচা একটি নতুন কনসেপ্ট এবং গ্রাহকের সুবিধার জন্য পেমেন্ট সিস্টেম বাড়ানো প্রয়োজন।
মাছ, মাংস, সবজি, ফলমূল থেকে শুরু চাল, ডাল, কাপড়, প্রসাধনী, আসবাবপণ্য, বই, ইলেকট্রনিক পণ্য, গয়না এমনকি মোটর গাড়িও এখন অন-লাইনে বিক্রি হচ্ছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, অনলাইনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে পোশাক, প্রসাধনী ও গয়না। মাছ, মাংস আর সবজির মত কাঁচা পণ্যের বিক্রি সবচেয়ে কম।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ২৫ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে যাদের বয়স, বাংলাদেশে মূলত তারাই অন-লাইনে পণ্যের প্রধান ক্রেতা।
অন-লাইনে পণ্য বিক্রি করে এরকম ৮১টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জরিপকারী শিক্ষার্থীরা দেখতে পেয়েছেন, একটি মাত্র পণ্য বিক্রি করেন- এমন ওয়েবসাইটের বিক্রি ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর যারা বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন- তাদের বিক্রি বেড়েছে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
অন-লাইন পণ্যের ক্রেতাদের একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ক্রেতাদের ৪০ শতাংশের মাসিক আয় ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে।
অন-লাইনে পণ্য কেনার কারণ হিসাবে ক্রেতারা বলেছেন
>> ৪৫.৭% উত্তরদাতা মনে করেন যে, এর ফলে যানজট এড়ানো যায়।
>> ৪০.৮% মনে করেন, এর ফলে সময় বাঁচে।
>> ২৯.৯% মনে করেন, অনলাইনে অনেক পণ্যের মধ্যে একটি বেছে নেওয়া সহজ হয়।
>> ২৫.২% শতাংশ বলেছেন, বাজারে গিয়ে পণ্য কিনতে যে যাতায়াত খরচ হয়, তার চেয়ে ডেলিভারি চার্জ কম পড়ে।
অসুবিধার কথাও বলেছেন ক্রেতারা
>> ৪৭.৫% উত্তরদাতা বলেছেন, অনলাইনে কেনা পণ্যের মান নিয়ে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
>> ৪৩.৬% বলেছেন, পণ্য হাতে পেতে সময় বেশি লাগে।
>> অন-লাইনে কেনা পণ্য ফেরত দেওয়ার নীতিমালা নিয়ে সন্তুষ্ট নন ২২.৩ শতাংশ উত্তরদাতা।
>> ৯.৬% উত্তরদাতা মনে করেন, মূল্য পরিশোধের পদ্ধতি এখনও যথেষ্ট ক্রেতাবান্ধব হয়নি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার দুই দোকানে দিনে যদি ৪০টি পোশাক বিক্রি হয়, অন-লাইনে হয় ১৬০টি।”
ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করেন এরকম এক নারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন-লাইনে তো ভ্যাট বা ট্যাক্সের কোনো ঝামেলা নেই। ঘরে বসে করা যায়, তাই লাভ থাকে বেশি।”
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফোলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, “যারা বৈধ ব্যবসা করতে চায়, তাদের সে সুযোগ দিতে হবে, উৎসাহ যোগাতে হবে। উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে আগ্রহী করতে হবে। আর যারা বড় ব্যবসা করছে, কিন্তু ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের ধরতে হবে।”
দেশে বড় যে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো এখন ব্যবসা করছে, তাদের মধ্যে দারাজ অন্যতম। তারাও মনে করে, দেশে ই-কমার্সের বিকাশের স্বার্থেই একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকা জরুরি।
দারাজ অনলাইন শপিং এর হেড অব পাবলিক রিলেশন্স সায়ন্তনী তিশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিয়ন্ত্রক সংস্থা না থাকায় অনেক সময় ই-কমার্স সংশ্লিষ্টদের দ্বিধায় পড়তে হয়- তারা কার কথা শুনবে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় না আইসিটি মন্ত্রণালয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকলে উভয়পক্ষেই স্বচ্ছতা রাখা সহজ হবে, যা ই-কমার্স শিল্পকে ভবিষ্যতে আরও জোরদার করবে।”
নিজেদের ব্যবসার অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দারাজে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ পদ্ধতিতে দাম পরিশোধের হার প্রায় ৬০ শতাংশ। আর ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্রেতা ‘প্রি-পেমেন্ট’ পদ্ধতিতে পণ্যের দাম আগাম পরিশোধ করেন।
এই ৪০ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্রেতা মূল্য পরিশোধ করেন ডেবিড বা ক্রেডিট কার্ডে। বাকি ৩০ শতাংশ হয় মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে। বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের সময় প্রি-পেমেন্টের হার বাড়ে বলে জানান তিশা।
-
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক হলেন ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল
-
রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রযুক্তি সহায়তায় ১০০০ কোটি টাকার তহবিল
-
ভিশন আনল ‘ফ্রোজেন রুম’
-
আইসিএমএবিতে ইনোভেশন ল্যাব স্থাপন করল রবি
-
ডাবরের উদ্যোগ- ‘সুরক্ষিত আমি, সুরক্ষিত আমরা’
-
মনিপুর স্কুলে ইউসিবির দুটি উপশাখা
-
তৈরি পোশাকের ক্রেতাদের সুদৃষ্টি চাইলেন বাণিজ্যমন্ত্রী
-
‘ডানো গ্রোথ শক্তি’ নিয়ে এলো আরলা
সর্বাধিক পঠিত
- শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে বার্সাকে হারিয়ে বিলবাওয়ের উৎসব
- ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুর্ঘটনায় দম্পতির মৃত্যু
- প্রিয় ৩ নম্বর হারাচ্ছেন সাকিব
- ইউভেন্তুসকে উড়িয়ে দিল ইন্টার
- রোমাঞ্চকর শেষের অপেক্ষায় ব্রিজবেন টেস্ট
- যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যপরিষদগুলো ঘিরে সশস্ত্র ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ
- বৃষ্টি নামবে, বাড়বে শীত
- তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে তামিমের ডেপুটি
- ‘উদযাপন ও বিয়ের কারণে চোট’, জবাব দিলেন হাসান
- লাল কার্ড পাওয়া মেসির পাশেই কোচ