লবণের মেয়াদ নিয়ে অস্পষ্টতার বিষয়টি তুলে ধরে একজন বিচারপতি বলেছেন, “আপনি ১০ বছর পরেও যদি দেখেন তখনও এই দুই বছরই। আর দুই বছরের মেয়াদ আজীবনেও শেষ হবে না। মানুষকে কত রকম ঠকানো যায় তার সব আছে।”
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ১২ মে এক আদেশে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় নিম্নমানের হিসেবে চিহ্নিত ৫২টি পণ্য বিক্রি বন্ধের আদেশ দেয়। পাশাপাশি বাজার থেকে ওই সব পণ্য অপসারণ করে ধ্বংস এবং মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সেগুলোর উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ বন্ধ রাখতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
বৃহস্পতিবার ওই আদালতেই বিষয়টি নিয়ে শুনানির এক পর্যায়ে এসিআই লবণ কর্তৃপক্ষের পক্ষে ১২ মে-এর আদেশ সংশোধনের আবেদন করেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ।
যুক্তি দিয়ে তিনি আদালতে বলেন, “ফ্যাক্টরিতে নির্ধারিত তাপমাত্রায় লবণ থাকে। কিন্তু বাইরে দোকানে ও খোলাবাজারে আসার পর তা নির্ধারিত তাপমাত্রায় না থাকায় হয়ত গুণগত মান কমে গেছে।”
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত এসিআই লবণের একটি প্যাকেট দেখিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, “লবণের প্যাকেটের ওপর কি লেখা আছে কত তাপমাত্রায় তা রাখতে হবে? প্যাকেটেতো তা লেখা নেই যে মানুষকে ঘরে কত তাপমাত্রায় রাখতে হবে।
“লবণ কেন নষ্ট হবে? আমরা সকলেই লবণ রাখি রান্না ঘরে। রান্না ঘর সব সময় গরম থাকে। আর গরমে যদি লবণের মান নষ্ট হয় তবে তা প্যাকেটে লিখে দেননি কেন? এটা লেখা থাকলে তো মানুষ লবণ রান্না ঘরে না রেখে ফ্রিজে রাখত।”
এসিআইয়ের আইনজীবী রোকন তখন বলেন, “সব লবণে তো সমস্যা পায়নি। একটি নির্দিষ্ট ব্যাচের লবণে সমস্যা পেয়েছে। বাকি ব্যাচের লবণের বিষয়ে আদেশ চাচ্ছি।”
এ পর্যায়ে বিচারক বলেন, “মানুষ কি ব্যাচ থেকে লবণ কেনে? আপনাদের লবণের প্যাকেটের গায়ে বড় করে লেখা আছে একশ ভাগ পিওর। আবার লেখা আছে দুই বছরের মেয়াদ। কিন্তু উৎপাদনের তারিখ লেখা নেই।
‘থাকলেও তা দেখতে সুপারসনিক চোখ লাগবে। আপনি ১০ বছর পরেও যদি দেখেন তখনও এই দুই বছরই। আর দুই বছরের মেয়াদ আজীবনেও শেষ হবে না। মানুষকে কত রকম ঠকানো যায় তার সব আছে।”