মৌচাকে প্রস্তুত ঈদ বাজার, এখন ক্রেতার অপেক্ষা

রোজার প্রথম সপ্তাহ পার হতে না হতেই ক্রেতাদের মন কাড়তে ঈদ পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন রাজধানীর মৌচাক এলাকার দোকানিরা।  

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2019, 05:43 PM
Updated : 12 May 2019, 05:43 PM

রোববার ছিল রোজার ষষ্ঠ দিন; ঈদের কেনাকাটা শুরু হতে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন এই এলাকার পুরোনো ব্যবসায়ীরা।

মালিবাগ এলাকার অর্ধশত বছরের ‍পুরনো মৌচাক মার্কেটের আশপাশে গত এক দশকে গড়ে উঠেছে অন্তত ছয়টি ছোট-বড় বিপণিবিতান। আধুনিক সুবিধার এই মলগুলোতে ক্রেতা সমাগম থাকলেও শাড়ি, চুড়ি, থ্রি-পিস, সাজসজ্জা ও প্রসাধনী কিনতে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় এখনও এগিয়ে রয়েছে মৌচাক মার্কেট।

মালিবাগ মোড়ে হোসাফ টাওয়ারের উল্টো দিকেই মৌচাক টাওয়ার। বহুতল এই ভবনের নিচতলা জুড়ে রয়েছে ফ্যাশন পণ্যের কয়েকটি বিক্রয়কেন্দ্র। মালিবাগ থেকে মৌচাকের দিকে এগিয়ে যেতেই হাতের বামে পড়বে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স।

এই শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় পাঞ্জাবি-পায়জামা ও শাড়ির অন্তত ৮৫টি দোকান রয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

এই মার্কেটে দেশীয় ফ্যাশন হাউজ কান্ট্রি বয়ের ব্যবস্থাপক শান্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদ সামনে রেখে আমাদের সব কালেকশন ইতোমধ্যেই এসে গেছে। কিন্তু ক্রেতারা এখনও আসতে শুরু করেননি। ঈদের পূর্ণ ব্যবসা শুরু হতে আরও কয়েক দিন লাগবে।”

তবে ক্রেতাদের সামাল দেওয়ার কথা ভেবে এখনই দোকানে অতিরিক্ত তিনজন বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন শান্ত।

এই দোকানে পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবির পাশাপাশি রয়েছে ক্যাজুয়াল ও ফরমাল শার্ট, টি-শার্ট ও জিন্স প্যান্ট।

ঈদে পাঞ্জাবিতে ৫০ শতাংশ মূল্য ছাড় দিচ্ছে কান্ট্রি বয়। আর তাতে পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ১৯৫০ টাকা থেকে ৯ হাজার ৫৫০ টাকায়। ক্রেতাদের জন্য এ দোকানে শার্টের দাম রাখা হয়েছে ১৪শ টাকা থেকে ৩২শ টাকার মধ্যে।

আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পারভেজ স্টোরে রয়েছে শুধু পায়জামার সমাহার।

এ দোকানের বিক্রয়কর্মী সেলিম বলেন, “গতবছরের তুলনায় এবার রোজার শুরু থেকেই বেচাকেনা ভালো মনে হচ্ছে।”

বড়দের পায়জামার দাম ২০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে রাখা হচ্ছে এ দোকানে।

পাঞ্জাবি কিনতে এই মার্কেটে আসা খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবারের ঈদে পরিবার নিয়ে আগেভাগেই বরিশালে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে চান তিনি।

এই মার্কেটে ছোট ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কেনার পর মৌচাক মার্কেটে গিয়ে পছন্দের শাড়ি কেনার কথাও জানালেন আনোয়ার।

আয়েশা শপিং ও মৌচাক মার্কেটের মাঝামাঝি রয়েছে আরেক বিপণিবিতান সেন্টার পয়েন্ট। ছয়তলা এই শপিং মলের পাশেই রয়েছে জুতার ব্র্যান্ড অ্যাপেক্সের বড় একটি বিক্রয়কেন্দ্র।

অ্যাপেক্সের এই বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সজিব বলেন, “শুধু মৌচাক এলাকাতেই রাস্তার দুই পাশে তাদের তিনটি শো-রুম রয়েছে। এর মধ্যে একটি রয়েছে মূল্যছাড়ের দোকান।”

এবার ঈদের ভিড় মাথায় রেখে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত সাতজন বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।

“তবে বিক্রি এখনও সেভাবে শুরু হয়নি। মনে হয় আরও কয়েক দিন পর ক্রেতারা শপিং সেন্টারগুলোতে ভিড় করবেন,” বলেন সজিব।

সেন্টার পয়েন্টের দোকানি জসিম বলেন, “মেয়েদের সামগ্রীর জন্যই মৌচাক মার্কেট ও সেন্টার পয়েন্ট সুপরিচিত। মৌচাক মার্কেট একটু পুরোনো হলেও সেন্টার পয়েন্টে রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।

“সারা বছর আমরা বসে থাকি এই রমজান মাসে বেচাকেনার আশায়। রোজা শুরুর পর বেচাকেনা বাড়লেও ঈদের ব্যস্ততা এখনও শুরু হয়নি।”

আগামী শুক্রবার এই মার্কেটে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে পারে বলে আশা করছেন জসিম।

“এরপর তা চলবে একেবারে চাঁদরাত পর্যন্ত,” বলেন তিনি।

এদিন দুপুরে মৌচাক মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ভবনের চারটি তলাতেই মেয়েদের পোশাকের পসরা। তবে ক্রেতা সমাগম হাতে গোনা।

চতুর্থ তলায় শাড়ির দোকান ছাড়াও রয়েছে কিছু দর্জি দোকান। অন্যান্য দোকানে কর্মহীন অবস্থা দেখা গেলেও দর্জি দোকানগুলোর নারী ও পুরুষ কর্মীরা হাত চালিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে।

সেখানে থ্রি-পিস সেলাই করাতে আসা রায়হানা বেগম বলেন, “ঈদের সময় দর্জি দোকানিদের কথার ঠিক থাকে না। তাই এবার আগেভাগেই নিজের জন্য ও একমাত্র মেয়ের জন্য ঈদের পোশাক সেলাই করাচ্ছেন তিনি।”

এই মার্কেটের শাড়ি বিক্রেতা তরিকা ফেব্রিক্সের মোহাম্মদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাতান, জামদানি, টাঙ্গাইল, প্রিন্ট, ফেব্রিক্স থেকে ‍শুরু করে সব ধরনের শাড়ি রয়েছে মৌচাক মার্কেটে।”

তরিকা ফেব্রিক্সে কাতান শাড়ির দাম শুরু হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা থেকে। এছাড়া তিন হাজার, চার হাজার এমনকি পাঁচ হাজার টাকার কাতান শাড়িও পাওয়া যাচ্ছে এই দোকানে।

বিভিন্ন ধরনের জামদানি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে শুরু করে আট হাজার টাকার মধ্যে।