গরুর মাংসের নির্ধারিত দাম মানছে না বিক্রেতারা

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেই দাম মানছেন না বিক্রেতারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2019, 03:34 PM
Updated : 8 May 2019, 05:54 PM

বুধবার ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজি প্রতি গরুর মাংস নির্ধারিত মূল্য ৫২৫ টাকার চেয়ে অন্তত ২৫ থেকে ৭৫ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।

বাড়তি দাম রাখার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের গরু কেনা বাবদ যে দাম পড়ছে তাতে ওই দামে বিক্রি করলে লোকসান হয়।

সকালে কচুক্ষেত কাঁচাবাজারে গিয়ে মাংসের দাম জানতে চাইলে আবদুল মতিন নামে একজন বিক্রেতা বলেন, “গরুর মাংস ছয়শ টাকা কেজি। যদি নেন এক দাম পাঁচশ ষাইট টাকা রাখা যাইব।”

সিটি করপোরেশন ৫২৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও বেশি নিচ্ছেন কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বাজারে তো গরুই নাই। আর যেগুলান পাওয়া যায় সেইগুলানের দামও বেশি। এই কারণে আমরা ৫২৫ টাকায় বিক্রি করতে পারি না। শুধু আমরা না, কেউ বিক্রি করতে পারব না।”

সিটি করপোরেশন গরু-খাসির মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন।

তিনি বলেন, “দেশি মুরগি সাড়ে ছয়শ টাকা কেজি, ব্রয়লার মুরগির দামও বেশি। কিন্তু সরকার খালি গরু আর খাসির মাংসের দাম ঠিক কইরা দেয়। কিন্তুক বেশি দামে গরু কিইন্না ৫২৫ টাকা কেউ বেচতে পারব না।”

রাজধানীর সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে সকালে সাড়ে পাঁচশ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করা হচ্ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজার পর্যবেক্ষণ দল দুপুরে ওই বাজারে অভিযান চালায়। সেখানে বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করায় হাজী আফজাল গোস্ত বিতানের মালিক আফজালকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

পরে বেলা আড়াইটার দিকে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে গিয়ে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত দামে গরু ও খাসির মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়। মাংসের দোকানের সামনে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মূল্য তালিকাও টাঙানো ছিল এ সময়।

এই বাজারের মাংস বিক্রেতা মো. শাহীন জানান, তার দোকানে খাসির মাংস ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। নির্ধারিত দামের বেশি নেওয়া হয় না।

গরুর মাংস বিক্রেতা মো. রাজু জানান, তারাও সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মূল্যে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫২৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

মিরপুর ১ নম্বর কাঁচাবাজারে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করলেও প্রায় অর্ধেক দোকান বন্ধ রেখেছেন বিক্রেতারা। এই বাজারে সাত-আটটি মাংসের দোকানে গরুর মাংস বিক্রি হয়। কিন্তু বুধবার বেলা ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চারটি দোকানে মাংস বিক্রি হচ্ছে, বাকিগুলো বন্ধ।

মনিরুজ্জামান নামে একজন মাংস ব্যবসায়ী বলেন, সিটি করপোরেশন নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করলে ‘লোকসান’ হয়। এজন্য দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে।

“আমাদের কেনা পড়ে পাঁচশ ষাট থেকে পয়ষট্টি টাকা করে। সিটি করপোরেশনের দামে বিক্রি করতে গিয়ে আমাদের লোকসান হচ্ছে। সিটি করপোরেশন নির্ধারণ করেছে, না বিক্রি করে উপায় নাই। এই কারণে অনেকে তাদের মাংসের দোকান বন্ধ করে রাখছে।”

শান্তিনগর বাজারে সকাল থেকে বিভিন্ন দোকানে ৫৭৫ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করা হয়েছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমে দাঁড়ায় ৫৫০ টাকা।

খিলগাঁও এলাকার বিভিন্ন মাংসের দোকানেও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রি হয়েছে। এখানে ৫৪০ টাকা এবং কোনো কোনো দোকানে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে গরুর মাংস।

নিউ মার্কেট, মোহাম্মদপুর বাজারে সাড়ে পাঁচশ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ক্রেতা। নিকুঞ্জ-২ এলাকায় নির্ধারিত দামেই গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে।

গত সোমবার রমজানে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণের জন্য একটি সভা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে সে সভায় বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলমসহ অন্যান্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সবার সম্মতিতেই গরুর মাংসের দাম কেজি প্রতি ৫২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

তারপরও ওই দামে মাংস বিক্রি না করার কারণ জানতে চাইলে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির নেতা রবিউল আলম বলেন, ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীরা যেসব দাবি করেছিলেন সেগুলো বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। এজন্য ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করতে পারছে না।

মাংসের দাম নির্ধারণী সভায় গিয়ে এখন সবার রোষানলে পড়েছেন বলে জানান তিনি।

রবিউল বলেন, “আমি মিটিং শেষ হওয়ার পরে ঘরে আইসা বইসা রইছি। একদিকে মাংস ব্যবসায়ীদের অন্যদিকে জনগণের রোষানলে পড়েছি। মিডিয়ায় আমাকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। আমি যাব কোথায়?

“আমাদের যে দাবিগুলা ছিল সেগুলার কোনো সুরাহা করতে পারছে? যা আলোচনা হয়েছে সেই কাজটা কি আমরা করতে পারছি? গাবতলী গরুর হাটে আমাদের অফিস খুইলা দেওয়ার কথা ছিল। সেখানে সরকার নির্ধারিত খাজনা বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু আমরা বসতে পারলাম না। কোনো ব্যবসায়ীকে ডাকতে পারলাম না।”

গাবতলী পশুর হাটে ইজারার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় অভিযোগ করে সে বিষয়টি নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে আসছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। ওই সমস্যার সমাধান হলে কম টাকায় নগরবাসীকে মাংস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারা।  

রবিউল সে কথাই আবার বললেন: “এসব সমস্যার সমাধান করলে আমরা কম দামে মাংস বিক্রি করতে পারতাম। সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারতাম।”

এদিকে নির্ধারিত দামে গরুর মাংস বিক্রি না করায় এদিন সুপারশপ আগোরা ও মাংসের ব্র্যান্ড বেঙ্গল মিটকে জরিমানা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।