এশিয়ায় টেলিনর ও আজিয়াটার ব্যবসা একীভূত করার পরিকল্পনা

নয়টি দেশের টেলিকম বাজারের দখল নিতে এশিয়ার ব্যবসা একীভূত করার আলোচনা শুরু করেছে নরওয়ের মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিনর আর মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2019, 08:47 AM
Updated : 6 May 2019, 12:26 PM

এই আলোচনা চূড়ান্ত রূপ পেলে এশিয়ায় দুই কোম্পানির টেলিকম ব্যবসা ও অবকাঠামো মিলিয়ে নতুন একটি কোম্পানি গঠন করা হবে। 

সেক্ষেত্রে নয়টি দেশে ৩০ কোটি গ্রাহক এবং ৬০ হাজার টাওয়ার নিয়ে নতুন ওই কোম্পানি হবে এশিয়ার টেলিকম খাতের অন্যতম বৃহৎ শক্তি।

একীভূত ওই কোম্পানির সম্মিলিত ব্যবসার পরিমাণ দাঁড়াবে বছরে ১৩ বিলিয়ন ডলারে, আয়ের পরিমাণ হবে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের মত। আর একীভূত হওয়ার ফলে যে সুবিধা তারা পাবে, তার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রাথমিক হিসাবে ৫ বিলিয়ন ডলার।

সোমবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে টেলিনর জানিয়েছে, চুক্তি চূড়ান্ত হলে ৫৬.৫ শতাংশ শেয়ার নিয়ে তারাই হবে নতুন কোম্পানির বড় অংশীদর। আর আজিয়াটার হাতে থাকবে বাকি ৪৩.৫ শতাংশ শেয়ার। অবশ্য আলোচনায় এই হিস্যা বদলাতেও পারে।

টেলিনর গ্রুপের চেয়ারম্যান গুন ওয়েরস্টেড বিবৃতিতে বলেন, “আজ আমরা ঘোষণা করছি, টেলিনর ও আজিয়াটা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল অঞ্চল এশিয়ায় একজোট হয়ে কাজ করতে চায়।”

বাংলাদেশের শীর্ষ দুই মোবাইল কোম্পানির মালিকানার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে নরওয়ে ও মালয়েশিয়ার এ দুই কোম্পানির হাতে। 

টেলিনর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক। আর গ্রাহক সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মোবাইল ফোন অপারেটর রবির ৬৮.৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক আজিয়াটা।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এশিয়ায় দুই কোম্পানির ব্যবসা একীভূত হলেও বাংলাদেশে ‘আলাদা কোম্পানি হিসেবে স্বাধীনভাবে’ ব্যবসা চালিয়ে যাবে রবি এবং এর নিয়ন্ত্রণ থাকবে আজিয়াটার হাতে। 

গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে ৭ কোটি ৪০ লাখ, যা দেশের মোট মোবাইল ফোন সেবাগ্রহীতার ৪৬ শতাংশের বেশি। আর রবির সেবাগ্রহীতার সংখ্যা ৪ কোটি ৭৩ লাখ, যা দেশের মোট গ্রাহক সংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ।

টেলিযোগাযোগ ব্যবসায় একক আধিপত্য তৈরির পথ বন্ধ করতে গতবছরের শেষ দিকে ‘সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার’ বা এসএমপি প্রবিধানমালা জারি করে বাংলাদেশের টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

এরপর গ্রামীণফোনকে সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) ঘোষণা করা হয়, যার ফলে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গ্রামীণফোনের স্বতন্ত্র ও একক স্বত্বাধিকারের নতুন কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপিত হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টেলিনর বলেছে, আজিয়াটার সঙ্গে তাদের এশিয়ার ব্যবসা একীভূত করার পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত চুক্তিতে গড়াবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। তবে চুক্তি হলে তাদের একীভূত নতুন কোম্পানির সদরদপ্তর হতে পারে কুয়ালালামপুরে। মালয়েশিয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক একটি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরিকল্পনাও তাদের আছে।

পরিকল্পনা ঠিক থাকলে মালয়েশিয়ায় টেলিনরের সেলকম এবং আজিয়াটার ডিজি নতুন কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে।

টেলিনর বলেছে, নতুন একীভূত কোম্পানির মাধ্যমে মালয়েশিয়াসহ এশিয়াজুড়ে নতুন প্রযুক্তির হস্তান্তর এবং ডিজিটালাইজেশন দ্রুততর করতে কাজ করবে তারা। মালয়েশিয়ায় একটি গবেষণা কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে, যেখানে ফাইভ জি প্রযুক্তি, ইন্টারনেট অব থিংস ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মত বিষয় নিয়ে গবেষণা হবে।   

টেলিনরের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিগভে ব্রেক্কে বলেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী, এই চুক্তি হলে শেয়ার হোল্ডাররা লাভবান হবেন, আমাদের গ্রহকরাও উপকৃত হবেন।”

ব্যবসা একীভূত করার বিষয়ে টেলিনর ও আজিয়াটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে। অবশ্য তা বাস্তবায়নের জন্য শেয়ার হোল্ডার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন হবে।  

বর্তমানে এশিয়ায় মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও মিয়ানমারে ব্যবসা রয়েছে টেলিনরের। আর আজিয়াটা মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের পাশাপাশি কম্বোডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ায় মোবাইল ফোন সেবা দিচ্ছে।