গরুর মাংস ও চিনির দাম বেড়েছে

গরুর মাংসের দাম বেড়েছে আরেক দফা, কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে এখন ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই মাংস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2019, 02:39 PM
Updated : 19 April 2019, 03:24 PM

এছাড়া রোজা সামনে রেখে বেড়েছে চিনির দামও; ইফতারির আরেক অনুসঙ্গ ছোলার দামও চড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন।

এই প্রেক্ষাপটে রোজায় নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে বিকল্প বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তিনি।

নাজের হোসাইন শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছোলার দাম কেজিতে দুই-তিন টাকা বেড়েছে। এদিকে সরকারকে আরও নজর দিতে হবে।

“টিসিবি যদি নিত্যপণ্যগুলোর ট্রাকসেল শুরু করে এবং সরকার যদি উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে নজরদারি বাড়ায় তাহলে বাজার ঠিক রাখা সহজ হবে।”

কয়েক মাস ধরে গরুর মাংসের কেজি ছিল ৫০০টাকা। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকার বাজারগুলোতে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় এর দাম।

কাঁচাবাজারের পাশাপাশি মীনা বাজার ও স্বপ্ন-এর মতো সুপারশপগুলো ৫৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করা শুরু করে। সেই দাম এখনও তারা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মীনা বাজারের মগবাজার শাখার ব্যবস্থাপক জয়নুল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারে প্রাইস বেশি, তাই আমরাও দাম বাড়িয়েছি। আজকে বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।”

দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এবার তো সিটি করপোরেশন থেকে কোনো দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। আর এটা আমাদের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট বিভাগ নির্ধারণ করে। তারাই ভালো বলতে পারবেন।”

সুপারশপ স্বপ্ন শুক্রবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপনে গরুর মাংসের দাম লিখেছে কেজিপ্রতি ৫৪৮ টাকা। তবে তাদের প্রকৃত দাম ৫৬০ টাকা বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা।

স্বপ্নের গোপীবাগ শাখার কাস্টকেয়ার কর্মকর্তা শাহীন আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “গরুর মাংস প্রকৃত দামের চেয়ে ১২ টাকা ছাড়ে বিক্রি করা হচ্ছে।”

গরুর মাংসের দাম বাড়লেও কিছুটা কমেছে ব্রয়লার মুরগি ও ফার্মের ডিমের দাম।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ডজন ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হওয়া ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাঁসের ডিমের দামও ডজনে ১০ টাকা কমে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দামও কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়।

কারওয়ানবাজারে পাইকারি মুদি দোকান সোনালী ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আবুল কাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে চিনির বস্তা ২৪২০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছিল। গত সপ্তাহে চিনি বস্তায় ১০০ টাকা বেড়েছে। সেই হিসাবে চিনি এখন পাইকারিতে প্রতি কেজি ৫০ টাকা আর খুচরায় ৫৫ টাকা।

তবে বাজারে এখনও সাদা চিনি ৫২ টাকায় এবং আখের চিনি ৫৮ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান কয়েকজন দোকানি।

এই বাজারের নুরুল ইসলাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের বিক্রয়কর্মী মাঈনুদ্দিন বলেন, গত বেশ কয়েক মাস ধরেই মসলা, ডাল, ছোলার দাম একই রকম আছে। এখন রোজা শুরু হলে দামে কী পরিস্থিতি হয় সেটা দেখার বিষয়।

এই দোকানে ভালো মানের ছোলার কেজি ৭৫ টাকা, মশুর ডাল ৬০ টাকা, বুট ডাল ৮০ টাকা, এ্যাংকর ডাল ৪৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

সয়াবিন তেলের দাম দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান সোনালী ট্রেডার্সের কাশেম।

তিনি বলেন, “বাজারে যখন মাত্র দুটি কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছিল তখন সয়াবিন তেলের দাম কিছু দিন পর পর উঠানামা করছিল। এখন তিনটি বড় কোম্পানি বাজারে তেল সরবরাহ করছে। এছাড়াও অনেক ছোট কোম্পানি রয়েছে। তাই সয়াবিন তেলের বাজার বেশ স্থিতিশীল।”

বাজারে এখন সয়াবিন তেল ৫ লিটার ৪২০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ময়দার দামও প্রতি বস্তা ১৪০০ টাকার মধ্যে রয়েছে গত ছয় মাস ধরে। সেই হিসাবে খোলা ময়দা খুচরায় প্রতি কেজি ২৮ টাকা থেকে ৩০ টাকার মধ্যে রয়েছে।

কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল কুদ্দুছ জানান, কাঁচা মরিচ প্রতিকেজি ৫০ টাকা, শসা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, গাজর প্রতিকেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া টমেটো ও ঢেঁড়শের কেজি ৩০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঝিঙা ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা, সজনা ৭০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।

দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি ৩০ টাকা আর পাল্লা (৫ কেজি) ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। আমদানি রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায়।

এক খেজুর বিক্রেতা জানান, মরিয়ম খেজুর ৭৫০ টাকা, কালমি ৬৫০ টাকা, ডাব্বাস ২৬০ টাকা, নূর খেজুর ৬০০, ইরানি মরিয়ম ৭০০ টাকা, তিউনিশিয়া ৩০০ টাকায় প্রতিকেজি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ১২০ টাকা ও ২২০ টাকা দামের খেজুরও রয়েছে বাজারে।

আঁখের গুড় প্রতিকেজি ৮০ টাকা এবং খেজুর গুড় প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।