বাংলাদেশে তৈরি স্যামসাংয়ের ফ্রিজ এখন বাজারে

বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি স্যামসাংয়ের রেফ্রিজারেটর এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এসব রেফ্রিজারেটরে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা রয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছি নরসিংদীর কামারগাঁও থেকে ফিরেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2019, 05:34 PM
Updated : 10 Feb 2019, 05:34 PM

স্যামসাংয়ের রেফ্রিজারেটর এখন আর সরাসরি আমদানি করতে হয় না। ঢাকা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার কামারগাঁওয়ে বিশাল কারখানাতেই তৈরি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়ের ফ্রিজ।

বাংলাদেশি কোম্পানি ‘ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড’ ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ১৬ একর জমির উপর গড়ে তুলেছে এই কারখানা।

এখানে রেফ্রিজারেটর উৎপাদনের পাশপাশি স্যামসাংয়ের মোবাইল ফোন সেটও সংযোজন করা হচ্ছে।

গত বছরের জুলাইয়ে রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শুরু করে কারখানাটি। আর মোবাইল সংযোজন শুরু হয় তারও আগে মে মাসে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, স্যামসাংয়ের দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তায় এই কারখানায় রেফ্রিজারেটর তৈরি হচ্ছে।

এখানকার তৈরি স্যামসাংয়ের ফ্রিজ আর মোবাইল ফোনই এখন বাংলাদেশে বাজারজাত করা হচ্ছে। বাইরে থেকে খুব একটা আমদানি করতে হচ্ছে না।

কারাখানটির কর্মযজ্ঞ দেখে মুগ্ধ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান  মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

শনিবার কারখানাটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন সাংবাদিক।

পরিদর্শনের ফাঁকে এনবিআর প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশ যে এগিয়ে চলেছে তার প্রমাণ হচ্ছে এই কারখানা। সত্যিই আমি মুগ্ধ। মনে হচ্ছে কোরিয়া জাপান বা চীনের কোনো কারখানা দেখছি আমি। বাংলাদেশে যে ভালো মানের পণ্য উৎপন্ন হয় তার প্রমাণ এটি।”

স্থানীয় শিল্পের বিকাশে আগামী বাজেটে (২০১৯-১০) সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো হবে জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, “সরকার স্থানীয় শিল্পের বিকাশে কর, ভ্যাটসহ নানা বিষয়ে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এসব কারখানা যেসব সুবিধা ঠিকমতো ব্যবহার করছে কি না-সেটা সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্যই আমি এখানে এসেছি।

“ধারাবাকিভাবে এ ধরনের সব কারখানা আমি পরিদর্শনে যাব। যারা সরকারের নিয়ম-কানুন মেনে উৎপাদন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে-কর্মসংস্থানে অবদান রাখছে তাদের সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো হবে। আর যারা অপব্যবহার করছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে।”

স্যামসাংয়ের পণ্যের এই কারখানায় কোরিয়ান ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে কাজের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এই কারখানা বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে অবদান রাখবে বলে মনে করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, “স্যামসাং আমাদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। আর আমরা অর্থায়ন করে কারখানাটি গড়ে তুলেছি। এ পর্যন্ত ৬০০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করেছি।

“এই কারখানাতেই আমরা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা স্যামসাংয়ের ফ্রিজ উৎপাদন করছি। যেগুলো আমাদের স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ভবিষ্যতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা এই ফ্রিজ বিদেশেও আমরা রপ্তানি করব।”

সেই পরিকল্পনা-লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান রুহুল আলম আল মাহবুব।

তিনি জানান, “একটি ফ্রিজ তৈরিতে যে সব যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জাম প্রয়োজন হয় তার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ আমরা এই কারখানায় তৈরি করি। বাকিটা কোরিয়া থেকে এনে সংযোজন করা হয়।

“স্যামসাং কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম-কানুন মেনে চলায় আমাদের কারখানায় উৎপাদিত ফ্রিজে ‘মেড ইন বাংলাদেশ লেখার’ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”

মানের দিক দিয়ে এই কারখানায় তৈরি ফ্রিজ ও মোবাইল সেট কোরিয়ায় তৈরি ফ্রিজের মতোই বলে দাবি করেন রুহুল আলম।

“ক্রেতাদের হাতে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য তুলে দিতে এই কারখানা স্থাপন করেছিলাম। এখন আমরা আগের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম দামে পণ্য বিক্রি করছি।”

ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের প্রধান বিপণন কর্মকতা মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দীন বলেন, বছরে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ ফ্রিজ তৈরির ক্ষমতা রয়েছে এই কারখানার। এখনও পুরোদমে উৎপাদন কর্মকাণ্ড শুরু করা হয়নি।

কারখানার অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কোরিয়া নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কারখানায় সব মিলিয়ে এখন হাজারখানেক লোক কাজ করে। বেশ কয়েকজন স্যামসাংয়ের কোরিয়ান প্রকৌশলী রয়েছেন। তারা নিয়মিত কারখানার তদারক করেন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেন। ”

এখানকার তৈরি স্যামসাংয়ের ফ্রিজ ও মোবাইল ফোনই এখন বাংলাদেশে বাজারজাত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

২০১৭ সালের ১৫ জুন সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এই কারখানার ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।

তার এক বছর না যেতেই উৎপাদনে গেছে কারখানটি।

ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স ফেয়ার গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান; যা স্যামসাং মোবাইল ফোন, ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার এবং মাইক্রোওয়েভ ওভেন-এর অনুমোদিত প্রস্তুতকারক ও বিপণনকারী।