ভাঙার আগে বাণিজ্য মেলায় মূল্যছাড়ের হাঁকডাক

গুটিয়ে নেওয়ার একদিন আগে যতটা সম্ভব মূল্যছাড় আর নানা ‘অফার’ দিয়ে উচ্চস্বরে ক্রেতাদের ডেকে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করেছেন বাণিজ্য মেলার দোকানিরা।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2019, 04:07 PM
Updated : 8 Feb 2019, 05:43 PM

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ক্রেতা আকর্ষণে বিভিন্ন স্টল থেকে ভেসে আসা ‘শেষ মুহূর্তে বিশাল মূল্যছাড়’, ‘বিদায়ী ছাড়’, ‘আখেরি মূল্যছাড়’ ডাকাডাকিতে সকাল থেকেই জমে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।

জাতীয় নির্বাচনের কারণে এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৯ জানুয়ারি শুরু হয় ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। সে হিসেবে শুক্রবারই ছিল এর শেষ দিন। তবে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে কর্তৃপক্ষ একদিন সময় বাড়িয়ে দেওয়ায় শনিবারও বিকিকিনির সুযোগ পাচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

বিক্রেতাদের মতো মেলায় আসা ক্রেতাদের মাঝেও দেখা গেছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার চাঞ্চল্য। এদিক-সেদিক ঘোরাফেরার চেয়ে পছন্দের পণ্য কিনতে সরাসরি স্টলগুলোয় ভিড় করেন তারা।

এখানে যে কোনো পণ্য পাওয়া যাবে মাত্র ১৫০ টাকায়। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ভাঙার আগের দিন এমন ছাড় দেন বিক্রেতারা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

মেলার এই শেষ সময়ে জাফর আহমেদ আসেন আরও একটি ওয়াটার ফিল্টার কেনার জন্য। প্রধান প্রবেশপথ হয়ে মেলায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তার কানে আসে ওয়াটার ফিল্টার বিপণন কোম্পানির প্রচার। সোজা ৫৪ নম্বর প্যাভিলিয়নে ওয়াটার কেয়ার স্টলে চলে আসেন তিনি।

মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার বাসিন্দা জাফর নিজে একজন ব্যবসায়ী। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইদানিং অস্বাস্থ্যকর পানির কথা খবরে প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। জারের পানিতে ভরসা পাচ্ছি না। তাই নিজের অফিসের জন্য ভালো মানের ফিল্টার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

স্টলে ক্রেতা সমাগম আর  সারা মাসের বেচাকেনা নিয়ে বেশ প্রফুল্ল দেখা গেছে ওয়াটার কেয়ার স্টলের পরিচালক আবুল হোসেনকে।

মেলা উপলক্ষে ‘ভালো’ ছাড় দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, শতভাগ ‘নিরাপদ পানির’ গ্যারান্টি দিয়ে পণ্য বিক্রি করেন তারা। চীন, জাপান, তাইওয়ান ও কোরিয়ার পণ্য রয়েছে তাদের স্টলে।

মেলায় পণ্যভেদে পাঁচ হাজার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে এই কোম্পানি।

নিজেদের গার্মেন্টে তৈরি শার্ট, পাঞ্জাবি, প্যান্ট, টিশার্ট নিয়ে বাণিজ্য মেলায় মিনি প্যাভিলিয়ন করেছে মিরপুরের একটি ফ্যাশন হাউস ‘মেনজ আর্ট’। বিক্রির পাশাপাশি ব্র্যান্ডের প্রচারই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।

মাসজুড়ে বিক্রিতে এই উদ্দেশ্য সফলও হয়েছে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান বাদল।

তিনি বলেন, “মেলায় লাখো দর্শনার্থীর মাঝে নিজের ব্র্যান্ডের প্রচারটা ভালোই হয়েছে। পাশাপাশি বিক্রিও হয়েছে ভালো।”

মেলার শেষে এসে ছাড়ের হার আরো বাড়িয়েছেন বলে জানালেন এই পোশাক ব্যবসায়ী।

আতাউর রহমান বাদল বলেন,  এখন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড়ে পোশক বিক্রি করছেন তারা।

মেলার দক্ষিণ সারিতে ঢালাওভাবে দেখা গেছে স্যুট, কোট ও ব্লেজারের দোকান।

মেলা চলাকালে এক হাজার ৬০০ টাকা থেকে দুই হাজার, এমনকি তিন হাজার টাকাতেও ব্লেজার বিক্রি করতে দেখা গেছে এসব দোকানের বিক্রয়কর্মীদের। শেষ সময়ে মাত্র এক হাজার টাকায়ও ব্লেজার মিলছে এদিকটায়।

তবে দোকানিরা শেষ সময়ে একটু দামি ব্লেজারগুলো সরিয়ে রেখে এখন কম দামী ব্লেজার মেলায় তুলেছেন বলেই এত কম দাম হাঁকা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ক্রেতা-দর্শনার্থী।

ব্লেজারের মতোই অনেক ছাড়ে মিলছে শাড়ি, মেয়েদের কামিজ, বিছানার চাদর আর কম্বল।

দেশীয় ব্র্যান্ড টপার তাদের বেশ কয়েকটি পণ্যে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় রেখেছে মেলায়। টপারের স্টলে সারা মাসই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে দেখা গেছে বিক্রয়কর্মীদের।

মেলার শুরুতে ভারতীয় পণ্যের প্যাভিলিয়নে ৯০০ টাকায় ইন্ডিয়ান ফুটওয়্যার নামের একটি কোম্পানির পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে। একই পণ্য এখন মাত্র ৬০০ টাকায় বিক্রি করছে তারা।

নোয়ার প্যাভিলিয়নে ২৫ হাজার টাকার ওয়াশিং মেশিনের সঙ্গে রয়েছে ১০টি গৃহস্থালির আইটেম ফ্রি পাওয়ার অফার।

অবশ্য বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি নোয়া ব্র্যান্ডের স্টলকর্মীরা। মেলার স্টল ও সজ্জায় প্রচুর ব্যয় হলেও বিক্রি সে তুলনায় অনেক কম হয়েছে বলে জানালেন নোয়ার একজন বিক্রয়কর্মী।

মেলার শেষে এসে বাড়তি ছাড় আর অফারের এই চিত্রে ব্যতিক্রম হিসেবে কয়েকটি বড় কোম্পানি ও বিভিন্ন দেশীয় ব্র্যান্ডের স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোতে নিয়মিত মূল্যছাড়েই চলছে বেচাকেনা।

এবারে মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য মিনি শিশু পার্কের বরাদ্দ পেয়েছে শারিকা ফ্যান্টাসি পার্ক। ম্যাজিক বোট, ওয়ান্ডার হুইল, হানি সুইং, ট্রেন, কিডস রাইড, নয়ডি মুভিসহ বিনোদনের বিভিন্ন আয়োজন করেছিল কোম্পানিটি।

কাঙ্ক্ষিত সংখ্যায় বিনোদনপ্রত্যাশী পাননি বলে জানান এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক।

এদিন মেলা ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, অনেক প্যাভিলিয়নেই পণ্যের পসরা কম। শেষ দুই দিনে নতুন করে পণ্য না এনে বিক্রির মাধ্যমে স্টল খালি করার চেষ্টা করেন অনেকেই।