সবজিতে ব্যাগের সঙ্গে ভরছে মনও

শীতের নানা সবজিতে ভরপুর বাজার, দামটাও হাতের নাগালে-সন্তুষ্ট এক ক্রেতা বললেন, সারা বছর যদি এমন দাম হত তাহলে কতই না ভালো হত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2019, 04:17 PM
Updated : 1 Feb 2019, 07:41 PM

শুক্রবার ঢাকার রামপুরা কাঁচাবাজারের ওই ক্রেতার শাক-সবজির দাম নিয়ে এই সন্তুষ্টি দেখা গেছে অন্যান্য বাজারেও।

এদিন কারওয়ানবাজার, মালিবাগ বাজার, বাড্ডা কাঁচা বাজার, খিলগাঁও বাজার, শান্তিনগর বাজার, শাহজাহানপুর বাজারে সবজির দাম কাছাকাছি পাওয়া গেছে। তবে কিছুটা বেড়েছে মাছ ও মাংসের দাম।

দুই-একটি বাজারে একটু বেশি দাম হাঁকলেও টমেটো, বেগুন, গাজর, মূলা, শালগম, শিম, নতুন আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, পালং শাকসহ হরেক রকম শাক-সবজিতে ভরপুর থাকায় বাকি সব বাজারেই ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিতে মিলছে অধিকাংশ সবজি।

দোকানিরা এবার কম দামে সবজি কিনতে পারছেন বলেই দামও কম রাখা হচ্ছে বলে জানালেন শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা সোহেল মিয়া।

কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, “এবার ফলন বেশি হওয়ার কারণে ট্রাকে ট্রাকে শাক-সবজি প্রবেশ করছে ঢাকায়। বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কম।”

কিছু বাজারে ২০ থেকে ২৫ টাকায় বেগুন কিনতে হলেও ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে অন্য সব বাজার থেকে বেগুন ছাড়াও শিম, শালগম, মূলা ও পেঁপে কেনা যাচ্ছে।

সপ্তাহের ব্যবধানেও দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পাকা টমেটো ও নতুন আলুর।  আগের মতই পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ৩০ টাকায়। প্রতি কেজি নতুন আলু পাওয়া যাচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়।

সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে শীত সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির। প্রতিটি ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায় এবং বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকায়।

শাকের বাজারেও নেই বাড়তি দামের হাঁকডাক। ৫ থেকে ১৫ টাকা মধ্যে বিক্রি হচ্ছে পালং শাক ও  লাল শাকের আঁটি। সরিষা শাকের আঁটি কেনা যাচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকায়। আর লাউ শাক পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।

শাক-সবজির এই দামের খুশি রামপুরা বাজারের ক্রেতা আমিনুল ইসলাম সিরাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার মনে হচ্ছে শীতকালীন সবজির দামটা আশানুরূপ আছে। ১০০ টাকা দিয়ে ব্যাগ ভরে বাজার করা যায়। এভাবে যদি সারা বছর বাজারের পরিস্থিতি বজায় থাকত তাহলে তো মানুষের জন্য ভালো হত।”

কারওয়ানবাজারের পাইকারিতে অন্যান্য বাজারের চেয়ে কিছুটা কম দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। এখানে শিমের পাল্লা (পাঁচ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আট থেকে ১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এক কেজি টমেটো। ৬০ থেকে ৬৫ টাকা পাল্লা বিক্রি হচ্ছে নতুন আলুর।

কয়েক সপ্তাহে ধরে সবজির তালিকায় দামি করলা বাজার ও মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

দামের দিক দিয়ে কম করলার পরেই রয়েছে লাউ। বাজার ও আকারভেদে প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। এরপরেই রয়েছে ধুন্দল, এ সবজিটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

রোজায় সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। রোববার মিরপুর এক নম্বর কাঁচাবাজার থেকে তোলা ছবি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচের দামও।

গত সপ্তাহের মতো নতুন দেশি পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি। 

প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

সবজি বাজারের কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেল মাছ-মাংসের বাজার ঘুরে। গরু, খাসির মাংসের দামের সাথে মুরগির দামও চড়া হাঁকছেন দোকানিরা।

ক্রেতা আমিনুল ইসলাম সিরাজী বলেন, “মানুষ সবজি সহজে কিনতে পারলেও মাছ-মাংস কিনতে গিয়ে দিশেহারা অবস্থা।

“গত দুই সপ্তাহ ধরে সব ধরনের মাছ, গরু-খাসির মাংস ও মুরগির দাম বেশি। মাছের সরবরাহ আগের চেয়ে কম।”

রামপুরা বাজারে গত সপ্তাহের মতো ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকায়।

লাল কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৯৫ টাকা থেকে ২০৫ টাকা। আর পাকিস্তানি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা।

প্রায় একই দামে মুরগি বিক্রি হতে দেখা গেছে খিলগাঁও, বাড্ডা ও মালিবাগ বাজারেও।

খিলগাঁওয়ে মুরগির ব্যবসায়ী মো. আরিফ বলেন, “গত এক-দেড় মাস ধরে মুরগির দামটা চড়া। এক মাস আগেও ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, এখন কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে।”

লেয়ার মুরগির দাম বেড়ে কেজি প্রতি ২২০ টাকা হয়েছে বলে জানান এই মুরগি ব্যবসায়ী।

প্রায় সব বাজারেই দুই সপ্তাহ আগের দামে গরুর মাংস ৪৮০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি এবং খাসির মাংস ৬৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগ বাজারের মাংস বিক্রেতা দুলাল মুহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “গরু ও খাসির দাম বাড়েনি। আগের দামেই বিক্রি করছি। গরুর মাংস ৪৮০ এবং খাসি সাড়ে ৭০০ টাকা বিক্রি করছি, আগেও একই দাম ছিল।”

তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম কিছুটা বেড়েছে বলেই জানান একই বাজারের ক্রেতা আশরাফ খন্দকার।

তিনি বলেন, “মাছের দাম বেশি বলে মাংসের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা।

“গত এক থেকে দেড় মাস ধরে গরু ও খাসির মাংস কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।”

এসব বাজারে মাছের দামও চড়া। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি। পাবদা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি ও চিতল মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।

শান্তিনগর বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. রজব আলী ব্যাপারী বলেন, “কিছু দিন ধরে মাছের দাম একটু বেশি, এর আসল কারণ আমরা জানি না। তবে যেসব এলাকা থেকে বাজারে মাছ আসে সেখানেই না কি মাছ কম ধরা পড়ছে।”

আপাতত মাছের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না বলে জানান এ মাছ ব্যবসায়ী।

তবে তুলনামূলক কমে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছ। ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে তেলাপিয়া এবং ১২০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পাঙ্গাস মাছ।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার ঘুরে চালের দাম স্থিতিশীল পাওয়া যায়।

জানুয়ারির শুরুতে চালের কেজিতে দেড় থেকে দু্ই টাকা বেড়ে মাসের মাঝামাঝিতে যে এক-দেড় টাকা কমেছিল সেই দরই এখন বিরাজ করছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

খুচরা বাজারগুলোতে স্বর্ণা, পাইজাম, চায়না ইরিসহ সব ধরনের ভালো মানের মোটা চাল গত সপ্তাহের মতোই ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।  

ভালো মানের মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো অন্যান্য সরু চাল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সাধারণ মিনিকেট ও নাজিরশাইল কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে।

খিলগাঁওয়ের তালতলা বাজারের মেসার্স আল্লারদান রাইস স্টোরের মালিক জানে আলম ভূইয়া বলেন, “গত দুই সপ্তাহ ধরে কোনো চালের দামে পরিবর্তন নেই। নতুন চাল আসার সময়ই দাম বেড়ে আবার কমে গেছে।”

রামপুরা বাজারের মেসার্স বিসমিল্লাহ চাল বিতানের খুচরা চাল বিক্রেতা আফজাল হোসেন বলেন, “চলতি সপ্তাহে নতুন করে কোনো চালের দাম বাড়েনি। নির্বাচনের পর পর সব ধরনের চালে কেজিতে দুই-তিন টাকা বেড়ে গিয়েছিল। এরপর গত দুই সপ্তাহ আগে দাম একটু কমেছে, এখন সেই দামই রয়েছে।”

তবে চালের দাম কিছুটা বেড়ে বলেই জানালেন শান্তিবাগের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ওমর ফারুক।  

তিনি বলেন, “এক মাস আগে যে বস্তা চাল আড়াই হাজার টাকায় কিনতে পেরেছি এখন সেই বস্তা ২০০ টাকা বেশি। তাহলে দাম তো কমেনি, বেড়েছে।”