ফেনীর সীমান্ত হাটের অচলাবস্থা দ্বিতীয় সপ্তাহে

অসম বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের কারণে টানা দ্বিতীয় সপ্তাহের মত অচলাবাস্থা চলছে ফেনীর সীমান্ত হাটে।

নাজমুল হক শামীম ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2019, 07:33 AM
Updated : 7 March 2021, 01:46 PM

ধর্মঘটের কারণে দুই দেশের ক্রেতা-বিক্রেতারা বাজারে আসতে পারছেন না। দূর-দূরান্ত থেকে হাটে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের।

ধর্মঘট দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ালেও হাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ভারত ও বাংলাদেশি কর্মকর্তারা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেননি। 

ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বলছেন, এ হাট থেকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাই লাভবান হচ্ছেন বেশি। সুতরাং সমাধানের উদ্যোগ ভারতের দিক থেকেই নিতে হবে।

সীমান্তবাসী দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে বাণিজ্য বিস্তারে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাটটি খোলা হয়।

ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব মধুগ্রাম এবং ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার শ্রীনগরের মাঝে সীমান্ত বরাবর এই হাট নিয়ে সে সময় দুই দেশের পক্ষ থেকেই অনেক আশার কথা বলা হয়।  

সে সময় বলা হয়েছিল, আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় বসবাসরত দুই দেশের দেড় থেকে তিন হাজার মানুষ এই হাটে এসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাবেচার সুযোগ পাবেন। প্রতি মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা হাট খোলা থাকবে।

কয়েকটি আধাপাকা ঘর নিয়ে গড়ে তোলা এই হাট শুরুতে স্থানীয়দের মধ্যেও বেশ সাড়া ফেলে। বিজিবি বা বিএসএফকে পাস বা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বাজারে প্রবেশের নিয়ম করা হয়। কোন দেশের বিক্রেতারা কী কী বিক্রি করতে পারবেন, তার একটি তালিকাও ঠিক করে দেওয়া হয়।

কিন্তু এখন অনেক নিয়মই মানা হচ্ছে না অভিযোগ করে ফেনী সীমান্ত হাট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউর রহমান বলেন, “ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কড়াকড়িতে সেদেশের ক্রেতারা হাটে আসে কম। তবে চুক্তি বহির্ভূত ভারতীয় পণ্য ঠিকই বাজারে আসছে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশি একটি চক্র বিজিবি সদস্যদের ম্যনেজ করে ভারতীয় এসব পণ্য ঢোকার ব্যবস্থা করছে। ভারতের ক্রেতারা বাজারে না আসায় অসম বাণিজ্যের কারণে এ দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আতাউর রহমানের দাবি, প্রতি হাটে বাংলাদেশের ২৭ দোকানি মিলে যেখানে ৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারেন, তার বিপরীতে ভারতীয় ২৭ দোকানি মিলে বিক্রি করে ৫ লাখ টাকারও বেশি পণ্য।

ফেনী সীমান্ত হাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রফিক মিলন বলেন, “নিয়ম করা হয়েছিল, একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুইশ ডলারের পণ্য কিনতে পারবেন। ভারতীয় ক্রেতারা পাঁচ কেজির বেশি পণ্য কিনলে বিএসএফ আটকে দেয়। আর বাংলাদেশি ক্রেতারা তিন/চারশ ডলারের পণ্য কিনলেও বিজিবি বাধা দেয় না।”

এই পরিস্থিতিতে অব্যাহতভাবে লোকসান গুণতে হচ্ছে অভিযোগ তুলে বাংলাদেশি বিক্রেতারা গত ১৫ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকেন। এরপর গত আট দিন ধরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের মত কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। 

ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের কারণে সীমান্ত হাটের ফটক বন্ধ রেখেছে বিজিবি। এ দেশের ব্যবসায়ীরা বাজারে না বসায় ক্রেতাশূন্য বাজারে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও আসতে পারছেন না।

এ হাটের নিয়মিত ক্রেতা জাহাঙ্গীর জন্স বলেন, “আমি প্রতি হাটবারেই কেনাকাটা করতে যাই। ভারতীয় অংশে হরলিক্স, গুঁড়োদুধ, প্যামপাসসহ বিভিন্ন ভারতীয় প্রসাধনী পাইকারিতে কার্টন ধরে বিক্রি হয়।”

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভারতীয় দোকানগুলোতে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যও বিক্রি হয়। সেগুলো কম দামে কিনে অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র আবার তার দেশে মুদি ও মনোহরি দোকানে বিক্রি করেন। আর গ্রামের মানুষ না বুঝে সেসব পণ্য কিনে ঠকে।

হাটে নিয়ম ভেঙে পণ্য আসার সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের কোনো যোগাসাজশ থাকার কথা অস্বীকার করেছেন ফেনীর ৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামীম ইফতেখার।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ অংশে কোনো ধরেনর চোরাচালান হয় না। সীমান্ত বাজারে আসতে সে দেশের (ভারত) নাগরীকদের কড়াকড়ি করেছে বিএসএফ। তাই বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন। আমরা আশা করি, সমস্যটি দ্রুতই মিটে যাবে।”

হাট পরিচালনায় গঠিত যৌথ কমিটির বৈঠক হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছেন ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মেছবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, “যেহেতেু হাটে অসম বাণিজ্য হচ্ছে, সেহেতু এ দেশীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। হাট চালু থাকলে লাভবান হয় ভারতের ব্যবসায়ীরা। আর বন্ধ থাকলে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সুতরাং ভারত থেকে যতক্ষণ না সামাধানের জন্য আমাদের সাথে বসতে চাইবে, আমরা এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেব না। আমাদের ব্যবসায়ীরাও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন।”