মন্ত্রীদের বৈঠকের পর কমেছে চালের দাম

চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রীর বৈঠকের পর ঢাকার পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছুটা কমেছে। তবে তার প্রভাব এখনও খুচরা বাজারে পড়েনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2019, 03:45 PM
Updated : 18 Jan 2019, 04:58 PM

শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫০ কেজি ওজনের চালের বস্তার দাম গত ৩-৪ দিনে ৫০ থেকে ৭৫ টাকা কমেছে। তবে খুচরা বাজারে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে বাঙালির প্রধান এই খাদ্যশস্য।

বছরের শুরুতে সারা দেশে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে অন্তত দুই টাকা করে বেড়ে যায়। আর সুগন্ধি চালের দাম বাড়ে কেজিতে ৩ টাকা করে। সে সময় দাম বৃদ্ধির জন্য চালকল মালিকদের দায়ী করেছিলেন ঢাকার চাল ব্যবসায়ীরা।

মজুদ তলানীতে ঠেকে যাওয়ার পর এখন চাল আমদানি বাড়াচ্ছে সরকার; চাল আসছে ভারত থেকেও

এই প্রেক্ষাপটে গত ৭ জানুয়ারি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার তিন দিনের মাথায় চালকল মালিক সমিতি ও চাল ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

চালের বাজারে কোনো অস্থিরতা নেই দাবি করে ওই বৈঠকে চালকল মালিকরা বলেন, মাঝে সাময়িক দাম বৃদ্ধি ছিল ভোটের সময় সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় পণ্য পরিবহনেও কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া ওই সময় সবাই ভোটের মাঠে ব্যস্ততা থাকায় ধান-চালের সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়ে দাম কিছুটা বাড়ে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিলেন।

চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মন্ত্রীদের বৈঠকের পরের সপ্তাহেই পাইকারী বাজারে চালের দাম কমল।

মাঝে চালের দাম বৃদ্ধির জন্য চালকল মালিকদেরই দায়ী করেছেন পাইকারি ও খুচরা চাল বিক্রেতারা। সরকারের নজরদারির অভাবে মিলাররা ইচ্ছেমতো চালের দাম বাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তারা।

উত্তর বাড্ডার মেসার্স খান রাইস এজেন্সির মালিক রিপন হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জাতীয় নির্বাচনের পর বছরের শুরুতে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা বাড়লেও এখন বস্তায় ৫০ টাকা করে কমেছে।

কারওয়ানবাজারে নোয়াখালী রাইস ট্রেডার্সের ম্যানেজার আকরাম হোসেন শাওন জানান, শুক্রবার প্রতি বস্তা মিনিকেট ২৬০০-২৬৫০ টাকা, নাজিরশাইল ২৭০০-২৯০০ টাকা, আটাশ ১৮০০ টাকা এবং স্বর্ণা চাল ১৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। সাত দিন আগেও এসব চাল বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হয়েছে।

শাওন বলেন, “বছরের শুরুতে কিছু কিছু মিলার অর্ডারই নেয়নি, ফলে চালের দাম বেড়ে যায়।”

বাজারে ধান-চালের ঘাটতি না থাকলেও ‘নজরদারি না থাকায় মিলাররা ইচ্ছেমতো চালের দাম বাড়িয়ে দেয়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মহাখালী কাঁচাবাজারের জাকির ট্রেডার্সের বিক্রয়কর্মী নূর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত কয়েক দিনে পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছুটা কমলেও খুচরায় গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

এই বাজারে শুক্রবার প্রতি কেজি মিনিকেট ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৫৬-৬৫ টাকা এবং আটাশ ৪৩-৪৪ টাকায় বিক্রি হওয়ার তথ্য জানান বিক্রেতারা।

মেরুল বাড্ডা ডিআইটি প্রোজেক্টে ফজলুল হক নামের একজন খুচরা বিক্রেতা শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, খুচরায় প্রতি কেজি মিনিকেট ৫৫-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৬০-৬২ টাকা, বিআর আটাশ ৪২-৪৪ টাকা এবং পাইজাম ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফজলুল হক বলেন, পাইকারিতে চালের দাম প্রতি বস্তায় ৫০ টাকা করে কমলেও খুচরায় কমেনি। কারণ ৫০ কেজির বস্তায় ৫০ টাকা কমার পর কেজিতে এক টাকা করে কমিয়ে বিক্রি করলে কোনো লাভই থাকবে না। কেজি কেজি করে বিক্রি করলে ৫০ কেজি চাল পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ অটোমিল অ্যান্ড হাস্কিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের পরে চালের চাম যেটুকু বেড়েছিল তা কমে গেছে। চালের দাম এখন স্বাভাবিক।

“তবে যে হারে ধানের দাম কমছে তাতে কৃষকরা হতাশ।”

বাজারে বর্তমানে আমন ধান সাড়ে ৬০০ থেকে পৌনে ৭০০ টাকা মন বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে লায়েক বলেন, কমপক্ষে সাড়ে ৭০০ টাকা মণ ধান বিক্রি করতে না পারলে কৃষক বাঁচবে না, সেই দিকেও সবার নজর দেওয়া উচিত।

মিলাররা পাইকারি বিক্রেতাদের ঠিকমতো চাল সরবরাহ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ভোটের সময় নানা কারণে একটু গ্যাপ পড়ে গিয়েছিল এটা ঠিক। এখন সব কিছু ঠিকঠাক আছে।”

খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামে বর্তমানে ১৪ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এরমধ্যে ১২ লাখ ৩৮ হাজার টন চাল এবং এক লাখ ৬২ হাজার টন গম।

মজুদ পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে এফপিএমইউ বলেছে, “মজুদ সন্তোষজনক, মাসিক চাহিদা ও বিতরণ পরিকল্পনার তুলনায় পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এ মুর্হূর্তে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নেই বা ঘাটতির কোনো সম্ভাবনা নেই।”