টেলিকম খাতের ‘দানব’ খুঁজতে কমিটি
শামীম আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 16 Jan 2019 09:38 PM BdST Updated: 20 Feb 2019 09:48 PM BdST
টেলিযোগাযোগ ব্যবসায় একক আধিপত্য তৈরির অবস্থা যাতে তৈরি না হয়, তা নিশ্চিতে প্রবিধানমালা জারির পর তা কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
‘সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার’ বা এসএমপি শিরোনামে এই প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, কোনো মোবাইল অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা, বার্ষিক রাজস্ব বা বরাদ্দ পাওয়া তরঙ্গের পরিমাণ বাজারের মোট হিস্যার ৪০ শতাংশের বেশি হলে তাকে ‘সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার’ ঘোষণা করা যাবে।
ওই কোম্পানি দানবীয় আকার নিয়ে যাতে বাজার গ্রাস বা প্রতিযোগিতার পথ রুদ্ধ করতে না পারে, সেজন্য বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেছেন, “এসএমপি হয়ে গেলে সবাই ব্যবসা করতে পারবে। কারও গ্রাহক ৪০ শতাংশের বেশি হবে না। আগামী কমিশনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।”
বুধবার বিটিআরসি কার্যালয়ে টেলিকম খাতের প্রতিবেদকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সঙ্গে এক আলোচনা এ কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিটিআরসি লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সসিং বিভাগের মহাপরিচালক এ এক এম শহিদুজ্জামান পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গতবছর নভেম্বরে এসএমপি প্রবিধানমালা জারি করার পর সে অনুযায়ী বিটিআরসিতে একটি কমিটি করা হয়েছে।
“সেই কমিটি এ প্রবিধানমালা অনুযায়ী দেখবে এর আওতায় কোন অপারেটর আসছে। তাদের প্রতিবেদন কমিশনে তোলার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
শহিদুজ্জামান বলেন, “বড় অপারেটররা যাতে লিমিট ক্রস করে না যায়, সেজন্যই এসএমপির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি মার্কেট প্রতিযোগিতার বিষয়।”
বিটিআরসির হিসাবে দেশে চার অপারেটর মিলিয়ে এখন মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১৫ কোটি ৬৯ লাখ। এর মধ্যে সাত কোটি ২৭ লাখের বেশি গ্রাহক নিয়ে এ সেবাখাতের শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন।

এই হিসাবে দেশের মোট গ্রাহকের ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশই গ্রামীণফোনের সেবা নিচ্ছেন। আর ৩০ শতাংশ গ্রাহক রবি, ২২ শতাংশ গ্রাহক বাংলালিংক এবং আড়াই শতাংশ গ্রাহক টেলিটক ব্যবহার করেন।
আর বার্ষিক রাজস্ব আয়ের দিক দিয়ে গ্রামীণ ফোন আরও এগিয়ে আছে। ২০১৭ সালে বাজারের মোট রাজস্ব আয়ের ৫৩ শতাংশ পেয়েছে গ্রামীণফোন। এ দিক দিয়ে রবির বাজার হিস্যা ছিল ২৮ শতাংশ, বাংলালিংকের ১৮ শতাংশ।
বাজারে একক কর্তৃত্বের পাশাপাশি সিন্ডিকেট করে (ওলিগপলি) বাজার নিয়ন্ত্রণ, বাজারের সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ’, অধিগ্রহণ বা একীভূতকরণ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে এসএমপি প্রবিধানমালায়।
এই নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে বিটিআরসির হাতে।
প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, “কোনো তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতাসম্পন্ন পরিচালনাকারীর কোনো কার্যক্রমের ফলে দেশের টেলিযোগাযোগ বাজারে প্রতিযোগিতা হ্রাস পাইতে থাকিলে বা হ্রাস পাইবার আশঙ্কা দেখা দিলে কমিশন উক্ত পরিচালনাকারীকে সংশ্লিষ্ট কার্যত্রম বন্ধ করিবার জন্য অথবা, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে, বিশেষ কোনো পদক্ষেপ বা কার্যক্রম গ্রহণ করিবার জন্য নির্দেশ দিতে পারিবে।”
কমিশন নিজ উদ্যোগে বা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রবিধানমালার কোন বিধান লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত করে জরিমানাও করতে পারবে।
গ্রামীণ ফোন বা অন্য কোনো অপারেটরের কেউ এ প্রবিধানমালা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সেবার মান না বাড়ালে বিধিনিষেধ
মনোপলি বন্ধের পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান বাড়াতে চাপ দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে বিটিআরসি।
টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সঙ্গে আলোচনায় বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, অপারেটরদের সেবার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মান বেঁধে দেবে কমিশন। তা পূরণ করতে না পারলে আরোপ করা হবে বিধিনিষেধ।
“আমরা একটা চিঠি ইস্যু করব, সেখানে বলা হবে অপারেটরদের কোয়ালিটি অব সার্ভিস বাড়াতে হবে, না হলে একটি নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজ অব সার্ভিস উনাদের কাছ থেকে কাট করে ফেলব।”
বিধিনিষেধের ধরন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিটিআরসির এই পরিচালক বলেন, “উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, আপনারা এ এলাকায় সার্ভিস দিতে পারবেন না, এখন থেকে আর গ্রাহক বাড়াতে পারবে না, আপনারা এ মানের উপরে বা নিচে অপারেটর করতে পারবে না- ইত্যাদি হতে পারে।”
এক প্রশ্নের জবাবে আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, সেবার মান নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যা ঢাকায়। ঢাকায় অবকাঠামো বেশি, গ্রাহকও বেশি। কিন্তু রেডিয়েশনের ভয়ে কেউ টাওয়ার বসাতে দিতে রাজি হচ্ছে না। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
কবে নাগাদ মান নিয়ন্ত্রণ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নির্ধারণ করবে বিটিআরসি।

বিটিআরসির হিসাবে দেশের ১৫ কোটি ৬৯ লাখ মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে আট কোটি ৫৫ লাখ গ্রাহকই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
তবে সেবার মান নিয়ে অপারেটরদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের। মোবাইল ইন্টারনেটের উচ্চ মূল্যের পাশাপাশি নির্ধারিত গতি না পাওয়া, বার বার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, ব্যবহারের চেয়ে বেশি টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এর মধ্যে। আর মোবাইল গ্রাহকদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ কলড্রপ ও নেটওয়ার্কের বিভ্রাট নিয়ে।
বিটিআরসি এখন সেবার মানে গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, “অপারেটররা বুঝতে পেরেছে, তাদের তরঙ্গ কম, তাই তারা আলোচনায় বসতে চাচ্ছে।”
সম্প্রতি সেবার মান বাড়াতে বাড়তি তরঙ্গ কিনতে বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছে গ্রাহক সংখ্যার শীর্ষে থাকা গ্রামীণফোন।
মোবাইল ইন্টারনেটে সাত দিনের নিচে ডেটা প্যাকেজ বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ১ ফেব্রুয়ারির পর এ নির্দেশনা কার্যকর করা হবে।
ছোট ছোট প্যাকেজ অফারে অপারেটররা বেশি টাকা কেটে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের। আবার নির্ধারিত মেয়াদে ডেটা শেষ না করতে পারলে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ডেটা প্যাকেজ শেষ হওয়ার পর নতুন করে একই প্যাকেজ রিচার্জ করলে আগের অব্যবহৃত ডেটা যোগ না করার অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে জহুরুল হক বলেন, “এটি অবশ্যই যোগ হবে।”
বিটিআরসি কমিশনার (স্পেকট্রাম) আমিনুল হাসান বলেন, ২০২০ সালে দেশে মোবাইল ফোনের ফাইভ জি সেবা চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তারা। সেজন্য তরঙ্গ ও আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) নিয়ে অপারেটরদের প্রেজেনটেশন দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদের মধ্যে বিটিআরসির কমিশনার (ইএন্ডও) রেজাউল কাদের, টিআরএনবি সভাপতি সজল জাহিদুল ইসলাম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দেসহ বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
-
রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রযুক্তি সহায়তায় ১০০০ কোটি টাকার তহবিল
-
ভিশন আনল ‘ফ্রোজেন রুম’
-
আইসিএমএবিতে ইনোভেশন ল্যাব স্থাপন করল রবি
-
ডাবরের উদ্যোগ- ‘সুরক্ষিত আমি, সুরক্ষিত আমরা’
-
মনিপুর স্কুলে ইউসিবির দুটি উপশাখা
-
তৈরি পোশাকের ক্রেতাদের সুদৃষ্টি চাইলেন বাণিজ্যমন্ত্রী
-
‘ডানো গ্রোথ শক্তি’ নিয়ে এলো আরলা
-
মীর গ্রুপের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট
সর্বাধিক পঠিত
- শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে বার্সাকে হারিয়ে বিলবাওয়ের উৎসব
- তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে তামিমের ডেপুটি
- ইউভেন্তুসকে উড়িয়ে দিল ইন্টার
- ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুর্ঘটনায় দম্পতির মৃত্যু
- দলবেঁধে ধর্ষণ করিয়েছে স্বামী, অভিযোগ নারীর
- ১২ মাসের বেতন না দিলে পরিষদ বাতিল: তাজুল
- তামিম-সাকিবদের জার্সিতে স্বাধীনতার স্মারক
- কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ: জাপানে আত্মহত্যা বেড়েছে ১৬ শতাংশ
- যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যপরিষদগুলো ঘিরে সশস্ত্র ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ
- সিদ্ধান্তের ভার মেসির ওপর ছাড়লেন কোচ