বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মেলার প্রথম দিনই পূর্ণ প্রস্তুতি শেষ করলেও পিছিয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের স্টলের বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। অপরদিকে সাংবাদিকসহ অন্যদের মেলায় প্রবেশ কার্ড দেওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা।
শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, গুছিয়ে নেওয়া স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোর কর্মীরা দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে মেলার মধ্য মাঠে ও পূর্বদিকের কিছু স্টলে চলছে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ।
মেলার স্টল বরাদ্দ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তুতি এবং কাঠামো নির্মাণের কারিগর সঙ্কটের কারণে এই বিলম্ব বলে জানান পিছিয়ে পড়া বিক্রেতারা।
প্রতিবছরই ইংরেজি সালের প্রথম দিন থেকে বাণিজ্য মেলা শুরু করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তবে এবার জাতীয় নির্বাচনের কারণে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আট দিন পিছিয়ে গত ৯ জানুয়ারি ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেলায় চতুর্দিকে কাজ চলছে, তাই মিস্ত্রির খুবই সঙ্কট। সেই কারণেই প্রস্তুতি নিতে দেরি হয়ে গেল।”
পাশে প্রসাধনীর স্টল সাজাতে ব্যর্থ হওয়া সালাউদ্দিন বলেন, যাদের কাছ থেকে স্টলটি নিয়েছেন তারা এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারেনি। তাই তাদের স্টলের সাজসজ্জাও করতে পারেননি।
মেলা শুরুর পর প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার মেলায় দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়বে বলে আশা করছিলেন স্টল মালিকরা। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খুব বেশি দর্শক সমাগম দেখা যায়নি মেলা প্রাঙ্গণে। তবে বিকালের দিকে তুলনামূলকভাবে ভিড় কিছুটা বাড়ে।
মেলার মূল ফটক ধরে ভেতরে ঢুকলেই হাতের বাঁয়ে চোখে পড়ছে হেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্স কোম্পানির মিনি প্যাভিলিয়ন। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, প্রথম দিনই তারা স্টলের দ্বার দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করতে পেরেছেন। শুক্রবার সকালেও দর্শকের খরা ছিল। বিকেলের দিকে মেলা প্রাঙ্গণ দর্শক উপস্থিতিতে পূর্ণ হতে শুরু করে।
মেলা মাঠের উত্তর সারিতে স্নোটেক্স টেক্সটাইলের ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘সারা’ তাদের প্যাভিলিয়ন প্রস্তুত করতে পারলেও প্রয়োজনীয় মালামাল এখনও হাজির করতে পারেনি।
সকালে সারার স্টলে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে পণ্য সাজানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন স্টলকর্মীরা। অন্যদিকে বেচাকেনাও চলছে।
গরম জামা, জ্যাকেট, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, ফরমাল শার্ট, কটিসহ বিভিন্ন রকম পণ্য বাজারে এনেছে দেশীয় এই ব্র্যান্ড।
এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বোরহান উদ্দিন বলেন, মেলার প্রথম দিন থেকেই স্বল্প পরিসরে দর্শক সাড়া পাওয়া যাছে। সন্ধ্যার পর প্রচুর ক্রেতা আসে তাদের পণ্যগুলো দেখতে।
মিঠুন চন্দ্র সাহা নামের একজন ক্রেতা বলেন, “নতুন ব্র্যান্ড সারার পোশাকগুলো বেশ সুন্দর। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাজারের অন্য কোম্পানিগুলোর পণ্যের তুলনায় তাদের পণ্যের দামও তুলনামূলক কম।”
অলটাইম প্যাভিলিয়নের একজন বিক্রয়কর্মী জানান, অলটাইম জাম্বো প্যাকেজে ৭২০ টাকার পণ্য দেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকায়, ৪৬১ টাকা মূল্যের স্ন্যাকস টাইম প্যাকেজের দাম রাখা হচ্ছে ৩৫০ টাকা, দেড়শ টাকা মূল্যের ফান টাইম প্যাকেজ বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ৮০ টাকায়। এভাবে প্রতিটি পণ্যেই ছোট-বড় ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
গৃহ নির্মাণ ও সাজানোর যাবতীয় পণ্য নিয়ে মেলায় বড় প্যাভিলিয়ন তৈরি করেছে ইজিবিল্ড।
এই ব্র্যান্ডের অন্যতম ব্যবস্থাপক মাশরুর সাকিব জানান, গৃহ নির্মাণের সমস্ত আসবাব, ঘর সাজানোর আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে ইজিবিল্ডের প্যাভিলিয়ন।
“এবারের মেলায় পণ্যভেদে ৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দেওয়া হচ্ছে। ২০ হাজার টাকা বা তার বেশি টাকার পণ্য কিনলে তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।”
পাস হস্তান্তরে বিশৃঙ্খলা
মেলার তৃতীয় দিনেও আয়োজক কর্তৃপক্ষ ইপিবির কাছ থেকে প্রবেশ পাস সংগ্রহ করতে দেখা গেছে মেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, স্টলকর্মী, সংবাদকর্মীসহ অন্যদের। অপরদিকে স্পষ্ট দিক নির্দেশনার অভাবে পাস প্রত্যাশীরা যেমন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে হিমশিম খাচ্ছিলেন, কার্ড ইস্যুকারী ইপিবি কর্মকর্তাদেরও দেখা গেছে বেশ বিচলিত।
চিকিৎসকদের একজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, “গেইট ধরে প্রবেশে বেশ কড়াকড়ি চলে। পরনের অ্যাপ্রোন কিংবা চিকিৎসক পরিচয় দেওয়ার পরও সেখানে ঝগড়াঝাটি করতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে পাসের জন্য এলাম। এখন দেখা যাক কী হয়।”
পাস নিতে আসা গণমাধ্যমকর্মীদেরও খালি হাতে ফিরতে হয়। ইপিবির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট অফিসের পরিচয়পত্র, ভিজিটিং কার্ড ও পিআইডি কার্ড চাওয়া হচ্ছে। অথবা মেলার পরিচালক বরাবর সংশ্লিষ্ট সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদককে পাসের জন্য আবেদনের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।
ফলে কেবল পরিচয়পত্র নিয়ে যাওয়া অনেকেই ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসছেন, কেউবা আবার জড়িয়ে পড়ছেন বচসায়।
এ বিষয়ে নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি ইপিবির কার্ড ইস্যুর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
মেলার শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা ইপিবির উপ-পরিচালক আবু মোখলেছ আলমগীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাদেরকে গেইট পাস ইস্যু করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা অধিক সংখ্যক কার্ড প্রত্যাশীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন। সাংবাদিকদের গেইটপাসের জন্য অফিসের পক্ষ থেকে আবেদন করার নিয়ম থাকলেও সেটা কেউ মানছে না।
“ফলে আইডিকার্ড ও ভিজিটিং কার্ড দেখেই কার্ড দিতে হচ্ছে। আগামী বছর থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক সেল চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।”