পোশাক খাতের মালিক-শ্রমিকদের কঠোর বার্তা সরকারের

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘একটি মহল’ পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2018, 09:48 AM
Updated : 6 Dec 2018, 09:48 AM

তিনি বলেছেন, এ ধরনের যে কোনো চেষ্টা সরকার ‘অত্যন্ত শক্তভাবে’ দমন করবে।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির জরুরি সভার পর প্রতিমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারি আসে।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ইদানিং লক্ষ্য করছি, যারা নির্বাচন চান না, তারা বিভিন্নভাবে নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করছেন। আমাদের মনে হচ্ছে সবেচেয়ে বড় গার্মেন্টস সেক্টরে অসেন্তোষ সৃষ্টি করার জন্য কিছু কিছু মহল চেষ্টা করছে। বিভিন্ন বাহানা করে অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নতুন মজুরি।”

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত ২৫ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সরকার।

পোশাক শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো পুনর্বিবেচনার দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ করে। ছবি:আব্দুল্লাহ আল মমীন

তাতে পোশাক খাতের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের মজুরি আগের চেয়ে গড়ে ৫১ শতাংশ বাড়লেও ‘বিভিন্ন রকম’ ব্যাখ্যা দিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসেন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বেতন বৃদ্ধির হিসাব আমরা বিজিএমইএ, বিকেএমইএ-এর মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছে দেব, যাতে কোনো রকমের বিভ্রান্তি না হয়। শ্রমিকরা ডিসেম্বরের বেতন নতুন স্কেল অনুযায়ী পাবেন।”

মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি ও অনান্য খাতের শ্রমিকদের মজুরির বিবেচনায় পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবি ছিল বিভিন্ন বাম শ্রমিক সংগঠনের। সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় বিক্ষোভ, মানববন্ধনের মত কর্মসূচি পালন করে আসছিল সংগঠনগুলো। 

শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মালিক ও শ্রমিকদের বলব- ডিসেম্বর মাসের ইলেকশন ব্যাহত হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত যেন তারা না করেন। যদি করেন তবে সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্স, আমরা প্রশাসনিকভাবে অত্যন্ত শক্তভাবে অ্যাকশন নেব।”

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “ডিসেম্বর মাসের বেতনের সঙ্গে শ্রমিকরা বর্ধিত হারে বেতন পাবেন। … বেতন নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি নেই। প্রধানমন্ত্রী সর্বনিম্ন বেতন আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, আমরা সেটা মেনে নিয়েছি।

তিনি বলেন, “ইদানিংকালে দেখা গেছে, গাজীপুরের কিছু ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা কাজ করেনি, তাদের অভিযোগ বেতন কম বাড়ানো হয়েছে। আমাদের শ্রমিক ভাইদের যেন এভাবে বিভ্রান্ত হতে না হয়। তারা ২০১৩ সালের মত হিসাব অনুযায়ী বর্ধিত বেতন পাবেন।”

মালিকদের উদ্দেশে সিদ্দিকুর বলেন, “কোনো শ্রমিককে যেন বেতন ছাড়া বাসায় যেতে না হয়। এবার ইলেকশন আছে, আমরা কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেব না। সেটা শ্রমিক পক্ষ হোক আর মালিক পক্ষ হোক। আমরা তাদের আইনের আওতায় আনব।”

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, নতুন ওয়েজবোর্ডের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন বাড়লেও অনেক শ্রমিক তা বুঝতে পারেননি।

শুধু শ্রমিক নন, পোশাক কারখানার অনেক মালিকও বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি বুঝতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন বিএসএমইএ সভাপতি।

তিনি বলেন, “আমরা ডিসেম্বর মাসের বেতনটা জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দেব। আমরা সেটা নিয়ে আজ বসেছি, বেতন দিতে যেন আমাদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব না হয়।”

সেলিম ওসমান বলেন, “অনেক মালিক বেশি বুঝে যতটুকু দেওয়ার দরকার সেটা থেকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন। অনেক মালিক কায়দা করছেন, ভুল-ত্রুটি ধরে বেতনটা কমিয়ে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। মালিকদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, অনেক মালিক বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন।

“বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় দেখতে পাচ্ছি কিছু কিছু মালিক বেতন পরিশোধ করছেন না। তারা দিন, মাস ধরে বেতন বন্ধ রেখেছেন। আমি ৪০ বছরের ব্যবসায়ী হিসেবে বলছি. বেতন বন্ধ করার কোনো কারণ নেই।”

বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, “যেসব ফ্যাক্টরি বেতন বন্ধ রেখেছেন, আমি অনুরোধ করব তারা যদি আগামী ৭ দিনের মধ্যে বেতন পরিশোধ না করেন, আমরা মনে করে নেব তারা নির্বাচনকে ব্যাহত করার জন্য তৃতীয় শক্তিকে সহযোগিতা করছেন। সুতরাং তাদেরকে বেতন পরিশোধের বন্দোবস্ত করতেই হবে, অন্যথায় আমরা এটাকে মেনে নিতে পারব না।”

শ্রমিকদের সময়মত বেতন পরিশোধ করতে মালিকদের অনুরোধ করেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদও।

তিনি বলেন, “আমি অনুরোধ করব যেন বেতনটা সময়মত দিয়ে দেন। কোনো সমস্যা হলে আমাদের ডাকবেন আমরা আছি। নির্বাচন প্রাক্কালে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা ঐক্যমত পোষণ করছি।”