নতুন পণ্য আর বাজার খুঁজুন, ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

বিভিন্ন দেশ ঘুরে নতুন নতুন কি ধরনের পণ্য উৎপাদন করা যায় তা খুঁজে বের করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2018, 08:53 AM
Updated : 2 Dec 2018, 09:08 AM

রাজধানীর একটি হোটেলে রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি ব্যুরো আয়োজিত ‘জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “অনুরোধ করব, আপনারা দেশ বিদেশে ঘোরেন, আপনারও খুঁজে বের করেন কোন দেশের কোন পণ্যটা আমাদের দেশে উৎপাদন করে সেটা রপ্তানি করতে পারি। অর্থাৎ বাজারটা খুঁজে নেওয়া বা পণ্যটাকে আবিষ্কার করা বা তৈরি করা সেটাও কিন্তু আপনাদের একটা দায়িত্ব।

“যদি কোনোরকম সহযোগিতা লাগে, অবশ্যই সরকার হিসেবে আমরা করব। যদিও সময় এখন সীমিত। কাজেই আগামীতে ইলেকশন কি হবে বলতে পারি না। কাজেই যতক্ষণ আছি ততক্ষণ যা যা প্রয়োজন সেটা করে দিতে পারব, সেই কথা দিতে পারি।”

দেশের উন্নয়নের সঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা একটা সিষ্টেমে নিয়ে এসেছি, যেই আসুক আমার মনে হয় এরপর আর কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণে যে সুযোগটা আমরা তৈরি করে দিয়েছি সেটা কাজে লাগিয়ে আপনারা দেশকে এগিয়ে নিতে পারবেন।”

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

ছবি: বাসস

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনাদের বিদ্যুতের সমস্যা, গ্যাসের সমস্যা ছিল। এরই মধ্যে আমরা এলএনজি আমদানি শুরু করে দিয়েছি। এরই মধ্যে ফ্লোটিং এলএনজি টার্মিনাল করে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়টাও আসবে। কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি ল্যান্ড বেইজ এলএনজি টার্মিনাল করে দেব, যাতে গ্যাসের কোনো সমস্যা কোথাও না থাকে।

“ভারতের থেকে আসাম কুমারীগড় থেকে পাইপলাইনে আমরা ডিজেল, তেল আমদানি করছি। উত্তরবঙ্গে এই তেল আমদানির সাথে সাথে আমরা পাওয়ার প্ল্যান্ট করারও পরিকল্পনা নিয়েছি। সেই সাথে আমরা অন্যান্য অঞ্চল থেকেও যেমন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ কিনতে শুরু করেছি, নেপাল ভুটানের থেকেও আমরা বিদ্যুৎ নেব বলে আলোচনা হচ্ছে অর্থাৎ সেখানেও আমরা ইনভেস্টমেন্ট করতে পারব।”

শেখ হাসিনা বলেন, “একটা শিল্প করতে যা যা লাগে সেগুলো যাতে পূরণ করা যায় সেজন্য আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। সেই সাথে নতুন বাজার খুঁজে নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য বাড়াব সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “শুধু এইটুকুই বলব আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট মজবুত। আমরা আমাদের যে উন্নয়ন প্রকল্প, তার ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে এবং বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এই দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশ হবে বাংলাদেশ। সেই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।”

ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা ২০২১, ২০৪১ এবং ২১০০ এই ডেল্টা প্ল্যান হাতে নিয়েছি। এই ডেল্টা প্ল্যান নেদারল্যান্ডস সরকারের সাথে যৌথভাবে করব। যার ফলে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া আর কেউ থামাতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সঙ্গতি যত বাড়বে, ক্রয়ক্ষমতা যত বাড়বে তত ব্যবসায়ীদের জন্যও নতুন বাজার সৃষ্টি হবে। নিজের দেশে বিক্রির পাশাপাশি রপ্তানিও হবে।

“বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, ভারত মিলে এরই মধ্যে একটা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য। কাজেই এখানে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে। অপরদিকে বাংলাদেশ, চীন, মিয়ানমার, ভারত সেখানেও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। এই দেশ থেকে যেন চীন পর্যন্ত ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হতে পারে।”

“প্রতিটি দেশের কোথায় কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, আমরা সেটা বাজারজাত করতে পারব কতটুকু, সেদিকে দৃষ্টি রেখেই আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি, সেই সুযোগটাও সৃষ্টি করছি,” বলেন সরকারপ্রধান।

অর্থনৈতিক কূটনীতিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “যার কারণে পৃথিবীর অনেক দেশ আমাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। আমাদের জিএসপি সুবিধা দিয়েছে বহু দেশ। যেখানে গিয়েছি, আলাপ করেছি সেখানে এই সুযোগগুলো পেয়েছি। আজকে জাপান, কোরিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশ সেই সুযোগ দিয়েছে।”

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহীউদ্দিনসহ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।