আইফোন-শাওমি স্মার্টফোনের বড় অংশই অবৈধ: বিএমপিআইএ

বাংলাদেশে স্মার্টফোন ক্রেতাদের আগ্রহের প্রথম দিকে থাকা আইফোন ও শাওমি ব্র্যান্ডের মোবাইলগুলোর অধিকাংশই অবৈধভাবে এদেশে আসছে বলে অভিযোগ করেছে মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদশে মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2018, 01:04 PM
Updated : 27 Nov 2018, 01:09 PM

সংগঠনটি বলছে, দেশে গত বছরের তুলনায় এ বছর অবৈধ হ্যান্ডসেট ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ স্মার্টফোন অবৈধ পথে এসেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।

অবৈধভাবে স্মার্টফোন আমদানিতে সরকার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।

স্মার্টফোনের স্থানীয় উৎপাদন পরবর্তী বাজার পর্যালোচনা (২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যালোচনা) নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে বিএমপিআইএ।

অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক মো. মেজবাহ উদ্দিন জানান, এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় সামগ্রিক বাজার কমেছে ১৭ শতাংশ (পরিমাণ) এবং ১১ শতাংশ (মূল্য)। ফিচার ফোনের ক্ষেত্রে এই অনুপাত ১৬ শতাংশ (পরিমাণ) ও ২০ শতাংশ (মূল্য)। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে এই হার ১৮ শতাংশ (পরিমাণ) ও ৭ শতাংশ (মূল্য)।

এর কারণ হিসেবে অবৈধ ও চোরাই পথে মোবাইল আমদানির বিস্তারকে দায়ী করে তিনি বলেন, “তদারকি সংস্থাগুলোর অপর্যাপ্ত নজরদারি ও অভিযানের সুযোগে স্থানীয় বাজারে এদের প্রভাব ক্রমেই বেড়ে চলেছে।”

মেজবাহ উদ্দিন বলেন, “বর্তমানে আইফোন ও শাওমির বেশিরভাগ পণ্যই অবৈধভাবে এবং স্যামসাং ব্র্যান্ডের ৩৫ শতাংশ স্মার্টফোন ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে।

“গত বছর এই সময়ে অবৈধ সেটের বাজার মূল্যে তিন হাজার কোটি টাকা হলেও এ বছর তা বেড়ে চার হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।”

দেশে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার মোবাইল বাজার জানিয়ে বিএমপিআইএর এই নেতা  বলেন, “বৈধ পণ্যের অনেকাংশই পুরোনো ফোন ‘রিফারবিশ’র মাধ্যমে দেশে আসছে। তাতে গ্রাহক প্রতারিত হচ্ছে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠিত সেবা কেন্দ্রগুলো থেকে সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না।”

বিএমপিআইএ জানায়, গত বছর (২০১৭) দেশে প্রায় তিন কোটি ৪৪ লাখ মোবাইল আমদানি হয়। দেশে ব্যবহৃত ফোনের প্রায় ২৫ শতাংশ স্মার্টফোন, ফিচার ফোন ৭৫ শতাংশ।

গত নয় মাসে দেশে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মোবাইল ফোন আমদানি হয়েছে। অথচ গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ২ কোটি ৮০ লাখ মোবাইল ফোন। এর মধ্যে স্মার্টফোন আমদানি হয়েছিল ৬০ লাখ। এ বছর ৯ মাসে স্মার্টফোন আমদানি হয়েছে ৫০ লাখ (১৭% কম)।

১০ হাজার টাকা বা তার চেয়ে কম দামের স্মার্টফোনের (নিম্নমানের স্মার্টফোন) বিক্রি কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে দেখা যায় ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা দামের স্মার্টফোনের বিক্রি প্রায় ২১ শতাংশ বেড়েছে।

অবৈধভাবে স্মার্টফোন আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, “দীর্ঘমেয়াদে এ অবস্থা চলতে থাকলে বৈধ আমদানিকারকরা ক্রমেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। সরকারের রাজস্বও ক্রমেই কমতে থাকবে।”

তিনি জানান, অবৈধ আমদানি রোধে গত বছর স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল সংযোজন ও উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়। সংযোজনকারীরাও প্রায় ১৫-১৭ শতাংশ শুল্ক ও কর পরিশোধ করেন মোবাইল তৈরির যন্ত্রাংশ আমদানিতে।

“কাজেই দেশে তৈরি ও সংযোজিত মোবাইল হ্যান্ডসেটও অবৈধভাবে আমদানিকৃত হ্যান্ডসেটের সাথে মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না।”

বাংলাদেশের উদীয়মান কারখানাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, দেশে দুটো কারখানা তাদের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারে ছেড়েছে (ওয়ালটন ও স্যামসাং)। কিন্তু তাদের উৎপাদন এখনও পর্যাপ্ত নয়। ভারতে এই মুহূর্তে তাদের বিক্রিত মোবাইল ফোনের ৯৪ শতাংশ হ্যান্ডসেটের যোগান দেয় স্থানীয় কারখানাগুলো।

বিশ্বের অনেক দেশে ব্যবহারকারীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য কিস্তিতে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি হওয়ার কথা জানিয়ে মাহবুব বলেন, বাংলাদেশে বিটিআরসি এখনও এ বিষয়ক নীতিমালা অনুমোদন করেনি। তাই এটা করা সম্ভব হচ্ছে না।

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহীদ বলেন, “দেশের একাধিক মোবাইল কারখানা রপ্তানিমুখী উদ্দেশ্য নিয়ে স্থাপিত হয়েছে। অথচ সরকার ২০২০-২১ সালে ৬০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির যে নতুন নীতিমালা করেছে তাতে এ খাতের কোনো উল্লেখ নেই। মোবাইল আগামী দিনে রপ্তানি আয়ের একটি বড় সম্ভাবনা তৈরি করেছে। জাতীয় রপ্তানি নীতিমালার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং এই খাতকে পর্যাপ্ত প্রণোদনা দিতে হবে।”  

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ট্রানশান বাংলাদেশের সিইও রেজওয়ানুল হকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।