শীতের সবজি এলেও দাম পড়েনি

শীতের আগমনী বার্তায় রাজধানীর বাজারগুলোতে মৌসুমি শাকসবজির ভরপুর পসরা বসলেও দামে এখনো খুব একটা পড়তির আভাস নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2018, 07:56 PM
Updated : 16 Nov 2018, 07:56 PM

শুক্রবার ঢাকার বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, শীতের সবজি বাজারে দাম নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে ক্রেতাদের।

মিরপুর-১ নম্বরে বাজার করতে এসে ওই এলাকারই বাসিন্দা শরীফ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত এক মাস ধরে বাজারে শীতকালীন মৌসুমের সব ধরনের শাক-সবজিই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বছরের তুলনায় এবার দামটা মনে হয় সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কমছে না।”

মাসের শুরুতে শিম ও বরবটির বাজার দর ছিল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

মিরপুর বড়বাগ কাঁচাবাজারে এদিন শিম ৬০ টাকা ও বরবটি ৬০ টাকা দরে কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়।

দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে এ বাজারের বিক্রেতা নাজমুল হাসান বলেন, “দাম বেশি নয়, এই মুহূর্তে সবজির বাজার ভালো বলতে হবে। দাম এর চেয়ে কমে গেলে তো কৃষকের কিছুই থাকবে না।

“সবজির দাম নির্ধারণ হয় উৎপাদন ও বাজারে মজুদের উপর। বগুড়া, পাবনা, কুষ্টিয়াসহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর আড়তে যখন সবজি বেশি চলে আসবে তখন ঢাকায়ও দাম হঠাৎ করে পড়ে যাবে,” বলেন এই বিক্রেতা।

দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘটে গত মাসে রাজধানীর বাজারগুলোয় এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া কাঁচা মরিচের দাম নভেম্বরের শুরুতে কমে প্রতি কেজি  ১০০ টাকায় নেমে আসে; কোথাও কোথাও ৬০ টাকাতেও মিলেছে কাঁচা মরিচ।

মিরপুর বড়বাগ কাঁচাবাজারের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, “বেশ কিছু দিন আগে কাঁচা মরিচের দাম কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিল। এখন দাম একেবারেই কম। ভালো মানের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।”

এছাড়া শসা ৩০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতার মনোযোগ কাড়তে ইলিশ সাজিয়ে রাখছেন এক দোকানি। ছবিটি বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে তোলা।

অক্টোবরে পরিবহন ধর্মঘটের একদিন পার হতেই ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম প্রতিটি ২০ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছিল। এ সপ্তাহের বাজারে শীতের সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি একটি ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

বাজারে এসেছে আমদানি করা গাজর ও টমেটো। শীতের আভাসে কিছু দিন আগেও এসব আমদানি করা সবজি প্রতি কেজি একশ টাকায় বিক্রি হলেও এদিন বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায়।

পেঁয়াজ-রসুন, মাছ-মাংসের বাজার গত কয়েক দিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতারা। কমেছে ফার্মের ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দামও।

মিরপুর-১ নম্বর বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম এক সপ্তাহ আগের তুলনায় প্রতি ডজনে ১০ টাকা করে কমে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১৫ টাকা থেকে ১২০ টাকায়।

মুরগি বিক্রেতা রাজিব বলেন, “ব্রয়লার মুরগির দাম স্থিতিশীল আছে। তবে লেয়ারের দাম গত ১০ দিনে কেজিতে অন্তত ২০ টাকা কমেছে। লেয়ার বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৮০ টাকায়, যা কিছু দিন আগেও দুইশ টাকার উপরে ছিল।”

মিরপুর বড়বাগ কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশ, রুই-কাতল, চিংড়ি, শিং, কই, পাবদা মাছসহ সব ধরনের মাছেরই পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।

আটশ থেকে নয়শ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি জোড়া এক হাজার টাকা। দেড় কেজি ওজনের একজোড়া ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাতশ টাকায়।

এছাড়া শিং মাছ পাঁচশ টাকা, মাঝারি আকারের কৈ মাছ দেড়শ টাকা, বড় আকারের তাজা রুই তিনশ এবং মাঝারি আকারের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ টাকা প্রতি কেজি। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে তিনশ টাকায়।

মাছ বিক্রেতা মিরাজ বলেন, “অধিকাংশ মাছের দামই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একই রকম রয়েছে।”

মাছ-মাংস, শাক-সবজি এবং পেঁয়াজ-রসুনের মতো মসলার দামও কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ক্রেতা ও বিক্রেতা।

এতে সন্তুষ্টি জানিয়ে শরীফ হাসান নামে একজন বলেন, “গত কয়েক মাস ধরেই কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো অস্থিরতা নেই। চালের দাম যেমন স্থিতিশীল তেমনি কোনো পণ্যে নিয়ে সঙ্কটও হয়নি, দামও অস্বাভাবিক বাড়েনি। কর্তৃপক্ষ অবশ্যই এজন্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।”

আরও খবর