বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের ‘ডুয়িং বিজনেস ২০১৯’ প্রতিবেদনে ব্যবসা করার পরিবেশের দিক দিয়ে বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৭৬ নম্বরে। গতবছর এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭ নম্বরে ছিল।
ব্যবসা পরিবেশের উন্নয়নে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরও এ সূচকে বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে মোটামুটি একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশকে ডিঙিয়ে আফগানিস্তান এবার উঠে এসেছে ১৬৭ নম্বরে।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, প্রতিযোগিতায় ভালো করতে চাইলে বাংলাদেশকে সংস্কারের গতি আরও বাড়াতে হবে।
একটি দেশের অর্থ-বাণিজ্যের পরিবেশ দশটি মাপকাঠিতে তুলনা করে এই সূচক তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের পরিস্থিতি বুঝতে ব্যবহার করা হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তথ্য।
এই দশটি মাপকাঠি হল- নতুন ব্যবসা শুরু করা, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি পাওয়া, বিদ্যুৎ সুবিধা, সম্পত্তির নিবন্ধন, ঋণ পাওয়ার সুযোগ, সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তি বাস্তবায়ন ও দেউলিয়া হওয়া ব্যবসার উন্নয়ন।
স্কোর ও র্যাংকিংয়ে এই উন্নতির পরও ব্যবসার পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করায় ভারতের অবস্থানের ২৩ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে; ৬৭.২৩ স্কোর নিয়ে উঠে এসেছে সূচকের ৭৭ তম অবস্থানে।
আর ৪৪.৭৭ স্কোর নিয়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান সূচকের ১৬৭ নম্বরে উঠে আসার পথে ১৬ ধাপ অগ্রগতি দেখিয়েছে।
এছাড়া ভুটান এ সূচকের ৮১তম (স্কোর ৬৬.০৮), শ্রীলঙ্কা ১০০তম (৬১.২২), নেপাল ১১০তম (৫৯.৬৩), পাকিস্তান ১৩৬তম (৫৫.৩১), মালদ্বীপ ১৩৯তম (৫৪.৪৩), অবস্থানে রয়েছে।
গত এক বছরে ভারত ছয়টি ক্ষেত্রে এবং আফগানিস্থান পাঁচটি ক্ষেত্রে সংস্কার করায় তাদের অবস্থানে বড় উন্নতি হয়েছে জানিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের এব সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে হলে বাংলাদেশকে সংস্কারের গতি আরও বাড়াতে হবে।
তবে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন কীভাবে বাংলাদেশের ব্যবসা পরিবেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে- সে কথাও বলা হয়েছে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ২০১৫ সালের পর ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ কাঠামোর উয়ন্নয়নের ফলে সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এই দুই বড় শহরে ব্যবসা করার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার বিষয় আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। ২০১৪ সালে যেখানে আবেদন করার পর সংযোগ পাওয়ার জন্য গড়ে ৪০০ দিন অপেক্ষা করতে হত, ২০১৮ সালে এসে তা কমে হয়েছে ১৫০ দিন।
বিশ্ব ব্যাংকের এবারের ডুইং বিজনেস রিপোর্টের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ট্রেইনিং ফর রিফর্ম’। ১৯০ দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকের মতামত নিয়ে তারা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থ-বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড; সূচকে তাদের স্কোর ৮৬.৫৯। শীর্ষ দশে থাকা অন্য দেশগুলো হল সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, জর্জিয়া, নরওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও মেসেডোনিয়া।
গতবারের মত এবারও সূচকে সোমালিয়ার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। আফ্রিকার এই দেশটির স্কোর ২০.০৪।