সোমবার বিটিআরসি সম্মেলন কক্ষে অবৈধ ভিওআইপি অভিযান নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা কামাল এ তথ্য দেন।
বছরে কত মিনিট অবৈধ ভিওআইপি কল হয় তা বিটিআরসি মহাপরিচালকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, একেবারে নির্দিষ্ট করে কোনো সংখ্যা বলা কঠিন, কারণ পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে এর পরিমাণ বদলায়। ইন্টারন্যাশনাল কল টার্মিনেশনের রেইট বাড়ালে অবৈধ ভিওআইপি কলও বেড়ে যায়। এখানে অবৈধ ভিওআইপিটা কেন হচ্ছে তা বুঝতে হবে আগে।
“এক দিন ২৪ ঘণ্টা ব্যান্ডইউথ (ইন্টারনেট) বন্ধ ছিল, সে সময় ২ কোটি ২০ লাখ মিনিট কল বেড়েছে। কারণ সেদিন কোনো অ্যাপ চালু ছিল না। প্রতিদিন ২৫ মিলিয়ন মিনিটের মত অবৈধ ভিওআইপি কল হচ্ছে। এটা আনুমানিক হিসাব।”
আড়াই কোটি মিনিট আনুমানিকভাবে অবৈধ কল হলে এর সঙ্গে কত সিম জড়িত থাকতে পারে- সেই তথ্য সংবাদ সম্মেলনে জানতে চান সাংবাদিকরা। উত্তরে মোস্তফা কামাল বলেন, “এটা বলা কঠিন…।”
দেশে গ্রাহকের হাতে থাকা ১৫ কোটির বেশি সিমের মধ্যে এখনো কতগুলো অবৈধ, সে তথ্যও দিতে পারেননি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মহাপরিচালক।
বিটিআরসির স্পেক্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০১৬ সালের ২৯ জুন থেকে ২০১৭ সালের ২৭ অগাস্ট পর্যন্ত মোট ১৬টি অভিযানে অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ১১৬ জনকে আটক করা হয়।
এসব অভিযানে যেখানে গ্রামীণফোনের ২৩৫৭টি, রবির ১৫৯০টি, বাংলালিংকের ১৯২২টি এবং এয়ারটেলের ১৫০০টি সিম জব্দ করা হয়েছে, সেখানে টেলিটক সিম জব্দ হয়েছে ১০ হাজার ৭৩৫টি।
বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক জানান, গত ৯ থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুর, আদাবর, বাড্ডা এবং উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ছয়টি আবাসিক স্থাপনায় বিটিআরসি ও র্যাবের অভিযানে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ১০ হাজার ৯৪৭টি সিম জব্দ করা হয়।
এর মধ্যে টেলিটকের ৫০৭৫টি, এয়ারটেল ও রবির ৩৮৯৭টি, গ্রামীণফোনের ১৪১৪টি, বাংলালিংকের ৪২৬টি, পিএসটিএন অপারেটর র্যাংকসটেলের ১২০টি এবং ওয়াইম্যাক্স অপারেটর বাংলালায়নের ১৫টি সিম ছিল।
এসব অভিযানে ৩৭ লাখ টাকার অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এসব ক্ষেত্রে অপারেটরের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অবৈধ সিমের জন্য আগেও জরিমানা করেছি, এখনও জরিমানা করব। কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।”
তিনি বলেন, অভিযান চালানোর পর প্রতিটি সিমের তথ্য বিশ্লেষণ করে তা অপারেটরদের জানানো হয়। কারণ দর্শাতে নোটিস দেওয়া জয়। সন্তোষজনক উত্তর না পেলে জরিমানা করা হয়।
মোস্তফা কামাল জানান, বিটিআরসি এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় অবৈধ টেলিফোনিতে জড়িত প্রতিষ্ঠানের সিমবক্সের অবস্থান চিহ্নিত করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।
এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান থেকে সরকারের ৫০ কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হবে বলে ধারণা দেন বিটিআরসি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
মোস্তফা কামাল বলেন, আগামীতে অবৈধ ভিওআইপির ঘটনায় প্রচলিত মামলার সঙ্গে মানি লন্ডারিং আইনের ধারা যোগ করা হবে। সেজন্য দুদকের সাহায্য নেওয়া হবে।