বুধবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ বলেন, “ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস-১৪১ ফ্লাইটটির নোজ গিয়ার নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। নোজ গিয়ারটি কেন সেদিন বের হচ্ছিল না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
“যারা তদন্ত করছেন, তারা বলতে পারবেন কবে তারা প্রতিবেদন দেবেন। প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে কেন ওই সমস্যা হয়েছিল,” বলেন তিনি।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে ১৭১ জন আরোহী নিয়ে রওনা হওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি কক্সবাজারে না নেমে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে।
ঘটনার পরপরই এর কারণ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এই কমিটিকে তদন্ত করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সামনের চাকার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ইমরান বলেন, “এয়ারক্র্যাফটের নোজ গিয়ার ওভার হোলিং বিশেষ কয়েকটি নির্দিষ্ট ওভারহোলিং শপে করাতে হয়। এখানে অপারেটরদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই।
“ঘটনায় আক্রান্ত এয়ারক্রাফটের নোজ গিয়ারের সাইকেল ৭৫ হাজার। প্রতি ১৮ হাজার সাইকেলের পর নোজ গিয়ার ওভারহোলিং করতে হয়। ওভারহোলিংয়ে পর এই এয়ারক্রাফটটির নোজ গিয়ারের সাইকেল শেষ হয়েছে মাত্র সাত হাজার, ১১ হাজার সাইকেল অবশিষ্ট ছিল।”
কক্সবাজারের আকাশে পৌঁছানোর পর ল্যান্ডিংয়ের আগে নোজ গিয়ার কাজ না করায় পাইলট ইন কমান্ড ক্যাপ্টেন জাকারিয়া সবুজ ও ফার্স্ট অফিসার সাঈদ বিন রউফ জরুরি অবতরণের প্রয়োজন বোধ করেন বলে জানান ইমরান।
তিনি বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
“অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ও সুচারুভাবে ক্যাপ্টেন জাকারিয়ার সুযোগ্য নেতৃত্বে উড়োজাহাজটি নিরাপদে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে।”
ইমরান বলেন, “কোনো বিমানের ফ্লাইং অপারেশনের ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেনের ইচ্ছাই চূড়ান্ত। একজন পাইলট মাঝ আকাশেও উড্ডয়ন নিয়ে সন্দেহের মধ্যে পড়লে তিনি বিমান ফিরিয়ে আনতে পারেন।”
সংবাদ সম্মেলনে পাইলট জাকারিয়া সবুজও ছিলেন। সেইসঙ্গে ছিলেন পাক্ষিক মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলমসহ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইউএস-বাংলার সিইও বলেন, “আপনারা জানেন, এয়ারক্র্যাফট মেইনটেনেন্স অন্যান্য ট্রান্সপোর্টেশনের মতো নয়। বিশ্বব্যাপী এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানইজেশনের (আইকাও) একটি সুনির্দ্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
“অন্যদিকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিধিবদ্ধ নিয়মাবলী এয়ারক্র্যাফট মেইনটেন্যান্সের ক্ষেত্রে অপারেটরকে কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হয়। কেউ চাইলেই এর ব্যতিক্রম করা সম্ভব নয়।”
আইকাও রুলস্ অনুযায়ী ফ্লাইং আওয়ারের ব্যতয় ঘটানো ইউএস-বাংলা এবং অন্য কোনো এয়ারলাইন্সের পক্ষে সম্ভব নয়, বলেন তিনি।
গত ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডু দুর্ঘটনার আগে ও পরে ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ কখনই দায়িত্বশীলতা নিয়ে উদাসীন ছিল না বলে দাবি করেন ইমরান।
চলতি বছর মার্চে নেপালে ইউএস-বাংলার একটি উড়োজহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৫১ জনের মৃত্যুর ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দেয়।
এরপর গত ছয় মাসে ইউএস-বাংলার বেশ কয়েকটি ফ্লাইট ছোটখাটো জটিলতার মুখে পড়ে।
২০১৪ সালে যাত্রা শুরুর পর ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বর্তমানে সাতটি আন্তর্জাতিক রুটের পাশাপাশি দেশের ভেতরে সাতটি গন্তব্যে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
আরও খবর