চোরাচালান বন্ধে স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন

চোরাচালান বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলারদের মাধ্যমে সোনা আমদানির বিধান রেখে স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2018, 12:18 PM
Updated : 3 Oct 2018, 12:37 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বুধবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

বেসরকারি গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বার্ষিক ১৮-৩৬ মেট্রিক টন সোনার চাহিদা থাকলেও আমদানির সুযোগ না থাকায় চোরাচালানের মাধ্যমেই চাহিদার অনেকটা পূরণ হচ্ছিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোনা চোরাচালান বেড়ে যায়। গত চার বছরে দেড় হাজার কেজির বেশি চোরাই সোনা উদ্ধার করা হয়।

বৈধ পথে আমদানি না হওয়ায় স্বর্ণখাতে সরকার যেমন বছরে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছিল; তেমনি ব্যবসায়ীরাও সোনা আমদানির সুযোগ চাইছিলেন।

এই প্রেক্ষাপটে স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের পর নীতিমালাটি মন্ত্রিসভায় আসে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী দি ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট-১৯৪৭ এর অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনা আমদানির ডিলার অনুমোদন দেবে। 

“মনোনীত অথরাইজড ডিলার, ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত একক মালিকানাধীন কোনো অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা লিমিটেড কোম্পানি অনুমোদিত ডিলার হিসেবে গণ্য হবে।”

শফিউল বলেন, বর্তমান নীতির অতিরিক্ত হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ স্বর্ণ অলংকারের চাহিদা পূরণে অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে সোনার বার আমদারি নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে। অনুমোদিত ডিলার নির্বাচন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, এজন্য তারা নীতিমালাও প্রণয়ন করবে।  

রপ্তানি করা যাবে সোনার গহনা

“অনুমোদিত ডিলার সরাসরি প্রস্তুতকারী বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সোনার বার আমদানি করবে। অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণ অলংকার প্রস্তুতকারকের কাছে বিক্রি করতে পারবে।”

অলংকার প্রস্তুত হলে তা রপ্তানির সুযোগও রাখা হয়েছে নীতিমালায়। “আমাদের রপ্তানি সেক্টর যাতে চাঙ্গা হয়,” বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

আমদানিকারকদের প্রতি মাসের শুরুতে সোনার হিসাব যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে হবে।

শফিউল বলেন, “সোনার মান যাচাইয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হলমার্ক ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। স্বর্ণ, স্বর্ণালংকার ক্রয়-বিক্রয়ে হলমার্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে, খাদের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করতে হবে।

“ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিক্রয় ক্যাশ মেমোর সঙ্গে স্বর্ণ অলংকারের হলমার্ক স্টিকার বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হবে।”

নীতিমালায় অলংকারের সংজ্ঞায় বলা আছে, “স্বর্ণ দ্বারা প্রস্তুতকৃত অলংকার এবং স্বর্ণের পরিমাণ নির্বিশেষে স্বর্ণের সাথে হীরক, রৌপ্য ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর মিশ্রণে প্রস্তুতকৃত অথবা সাধারণ পাথর দ্বারা খচিত অংলকার।”

গত কয়েক বছরে এ রকম অসংখ্য সোনা ধরা পড়েছে বিমানবন্দরগুলোতে

লাগেজে করে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত সোনা বিনা শুল্কে আনা যাবে জানিয়ে শফিউল বলেন, “২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত সোনা শুল্ক দিয়ে আনা যাবে। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত হলে এটা আরও বাড়তে পারে।”

সরকারের এই নীতিমালা প্রণয়নের কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সোনা আমদানি সহজ করা, এই শিল্পে জবাবদিহিতা আনা, স্বর্ণালংকার রপ্তানিতে উৎসাহ জোগানো এবং স্বর্ণখাতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য।

কাস্টমস আইন অনুমোদন

পুরানো আইনকে হালনাগাদ করে কাস্টমস আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

শফিউল বলেন, “এটি ১৯৭০ সালের আইন। কাস্টমস আঙ্গিনায় অনেক পরিবর্তন হওয়ায় এটাকে হালনাগাদ করা হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগের আইনকে বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে। তেমন কোনো পরিবর্তন নেই।”

প্রস্তাবিত আইনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকার বিধি প্রণয়ন করতে পারবে বলেও জানান তিনি।

জাতীয় পরিবেশ নীতি অনুমোদন

১৯৯২ সালে প্রথম জাতীয় পরিবেশ নীতি প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু ২৬ বছরে এই ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন ও অগ্রগতি হওয়ায় সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল বলেন, “পরিবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অগ্রগতি আছে। আমরা নিজস্ব ট্রাস্ট ফান্ড করেছি, সেখানে অনেক ইনভেস্টমেন্ট করেছি।

“এই নীতিতে বড় একটা পরিবর্তন হল। আগে এতে ১৫টি খাত অন্তর্ভুক্ত ছিল, আরও নয়টি খাত যুক্ত করে ২৪টি খাত করা হয়েছে। ২৪টি খাতের বিস্তারিত এখানে দেওয়া আছে।”

২৪টি খাত হচ্ছে- ভূমি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ খাদ্য ও সুপেয় পানি, কৃষি জনস্বাস্থ্য , স্বাস্থ্য সেবা, আবাসন, গৃহায়ণ ও নগরায়ন, শিক্ষা ও জনসচেতনতা, বন্য ও বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য, পাহাড় ও প্রতিবেশ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, উপকূলীয় সামুদ্রিক প্রতিবেশ, পরিবেশ বান্ধব পর্যটন, শিল্প উন্নয়ন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, যোগাযোগ ও পরিবহন, জনসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরির্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রস্তুতি, অভিযোজন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান, গবেষণা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ বান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন ও ভোগ।

“এমন কোনো সেক্টর বাকি নেই যেটা পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত, সবগুলোকেই নিয়ে আসা হয়েছে,” বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।