ওই প্রতিবেদনে ঋণ খেলাপিদের ‘নিয়ন্ত্রণে’ আনার সুপারিশও থাকবে বলে জানিয়েছেন আর মন্ত্রী না হওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে আসা মুহিত।
বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে একথা জানান তিনি।
ঋণ খেলাপিদের নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কেন- এক সাংবাদিকের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণ খেলাপি হওয়ার বিষয়টি লজ্জাজনক হলেও বাংলাদেশে ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না।
“লোন ডিফল্ট ইজ আ ম্যাটার অফ শেইম ফর এন ইন্ডিভিজুয়াল, সামহাউ এই শেইমটা আমাদের নেই। ইটস ভেরি আনফোরচুনেট।
“মনে করে যে, আমি লোন নিয়েছে এটা পে না করলেও চলবে। এক সময়ে প্রায় ৩০ বছর আগে একজন লোন নিয়েছে, সে লোন ফেরত দেবে না, সে বলছে লোন নেওয়ার জন্য কত কষ্ট করেছি লোন নেওয়ার জন্য কয়টা জুতা নষ্ট হয়েছে তারও একটা হিসাব রেখেছি, এই লোন কখনো ফেরত দেব না।”
অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১২টি জাতীয় বাজেট দিয়ে আসা মুহিত বলে আসছেন, আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ নিচ্ছেন না এবং মন্ত্রীও আর হবে না।
সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে উত্তরসূরিদের জন্য কিছু রেখে যাবেন কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে মুহিত বলেন, “ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে একটি প্রতিবেদন নভেম্বরে দিয়ে যাব। এটি মন্ত্রণালয়ে দিয়ে যাব, নিজে তৈরি করব, আমার সচিবদের নিয়ে। এটি আমি প্রণয়ন করে দেব।”
প্রতিবেদনে কী থাকবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “একটা বলতে পারি আই প্রোবাবলি সাজেস্ট দ্যাট দি মোমেন্ট ইউর অভারঅল ডিফল্ট ইনক্রিজ অ্যাজ টু দিস লেবেল পার্সেন্টিজ অর হোয়াট এভার ইমিডিয়েটলি টেক অ্যাকশন অন নন পারফরমেন্স লোন।
“যেমন ইফ ইয়োর ডিফল্ট লেটস সে রিচ ১০ পার্সেন্ট দেন ইমিডিয়েটলি ইউ হ্যাভ টু টেক অ্যাকশন। অর্থাৎ তুমি যদি ১০ পার্সেন্ট এর নিয়ে নামিয়ে আনতে পার, তাহলে তুমি সেইফ।”
অনুষ্ঠানে আইবিএফবি প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ সংগঠনের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে ১১টি প্রস্তাব দেন।
এর মধ্যে রয়েছে- করের পরিধি বাড়িয়ে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা এবং কর পরিশোধের প্রক্রিয়া সহজ করা, জমি নিবন্ধন-বিদ্যুত সংযোগ সহজে পাওয়া নিশ্চিত, ঋণ পাওয়া ও সহজে কর পরিশোধের প্রতিবন্ধকতা দূর করা, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের দক্ষতা বাড়ানো, বিদেশি জনবলের উপর নির্ভরতা কমানো, বিকল্প রপ্তানি খাত চিহ্নিত করে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, রপ্তানিমুখী শিল্পের উন্নয়নে গবেষণার ব্যবস্থা, সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিকে আইবিএফবি সদস্যকে মনোনয়ন, বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় পরিচালক হিসেবে আইবিএফবি সদস্যকে মনোনয়ন দেওয়া।
স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ না দেওয়ার যে দাবি উঠেছে, সে বিষয়ে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের মধ্য থেকে এই প্রশ্ন করা হয় অর্থমন্ত্রীকে।
উত্তরে তিনি বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী একজন থাকতে পারে, সেজন্য তার সন্তানদের পানিশমেন্ট দেওয়া উচিত না, এটি আমার নিজের বিশ্বাস।”
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা বাতিল হলে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে কি না- প্রশ্নে মুহিত বলেন, “কোটা বাতিল হলে যারা কোটা পায় তারা চিৎকার করবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসেসমেন্ট হচ্ছে কোটা বাতিলের পক্ষের চিৎকারটা বেশি শক্তিশালী।”
ব্যক্তিগতভাবে নিজে নারীদের কোটা রাখার পক্ষপাতি বলেও জানান তিনি।
বাংলা ফোনের জন্য সুপারিশ
অনুষ্ঠানে আইবিএফবি নেতা এবং বাংলাফোনের পরিচালক লুৎফুন্নেসা সৌদিয়া খান তার কোম্পানির আইএসপি লাইসেন্স ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই’ গত ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাফোনের আইএসপি লাইসেন্স বাতিল করেছে বিটিআরসি।
এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী ও বিটিআরসির সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী।
বাংলা ফোনের আইএসপি লাইসেন্স বাতিল করার ক্ষেত্রে লাইসেন্সের শর্ত ভাঙাকে কারণ দেখিয়েছে বিটিআরসি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়া, লাইসেন্সের শর্ত বহির্ভূতভাবে এনটিটিএন সেবা দেওয়া বন্ধ না করা, বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ না করাসহ কমিশনের নির্দেশনা লঙ্ঘনের কারণে বাংলা ফোনের আইএসপি লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
আইএসপি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলা ফোনের লাইসেন্স বাতিলের পর প্রতিষ্ঠাটির যন্ত্রপাতি সিলগালা করে দেয় বিটিআরসি।