যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পোশাকের ‘ন্যায্যমূল্য’ চাইল বিজিএমইএ

শ্রমিকদের মজুরি বাড়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পোশাকপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় উদ্যোগী হতে দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিজিএমএইএ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2018, 11:45 AM
Updated : 25 Sept 2018, 11:46 AM

মঙ্গলবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে বার্নিকাটের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জিএসপি সুবিধা চালুর পক্ষে কাজ করতেও তার প্রতি আহ্বান জানান পোশাক রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

 প্রায় চার বছর ধরে ঢাকায় দায়িত্বপালন করে যাওয়া বার্নিকাটকে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ‘অন্যতম বন্ধু’ আখ্যায়িত করেন বিজিএমইএ নেতারা। সিদ্দিকুর বলেন, বার্নিকাট এখন যুক্তরাষ্ট্রে ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত’ হিসাবেই ফিরে যাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা ফের চেয়েও এখনও পায়নি বাংলাদেশ।

ক্রেতাদের চাপে পোশাক শিল্পে কর্মপরিবেশ উন্নীত করতে গিয়ে এবং সম্প্রতি শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর ফলে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা বলে আসছেন পোশাক শিল্প মালিকরা।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিতে যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার সবকটিই পূরণ করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের জন্য এই সুবিধা যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তা আপনার (বার্নিকাট) মাধ্যমে মার্কিন সরকারকে অনুরোধ করছি।”

যুক্তরাষ্ট্রের তুলা দিয়ে যে বস্ত্র হয়, তা দিয়ে তৈরি বাংলাদেশের পোশাক যেন শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পায় সেজন্য সুপারিশ করতে বার্নিকাটকে অনুরোধ করেন তিনি।

পোশাক শিল্পের অগ্রগতি তুলে ধরে সিদ্দিকুর বলেন, “গত চার বছরে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পখাতে কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তা আপনি নিজ চোখে দেখেছেন। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প এখন সবচেয়ে নিরাপদ ও স্বচ্ছ শিল্পখাত।

“কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে এখনও এই শিল্প নিয়ে কিছু ভুল ধারণা থেকে গেছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে এই দেশের শিল্প পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরবেন বলে আশা রাখছি।”

পোশাক শিল্পের মানোন্নয়নের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারে দাম কমে যাওয়ায় তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন সিদ্দিকুর।

“গত ৮ বছরে তিন ধাপে তিনটি মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে ন্যূনতম মজুরি মোট ৩৮১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অথচ বিগত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের মূল্য কমেছে ১১ দশমিক ৭২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা যেন পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে সেদিকে নজর দেওয়ার অনুরোধ করছি।”

রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এই শিল্পের মাধ্যমে লাখো শ্রমিক দারিদ্র্যের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে।

অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সহায়তায় বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে কর্মপরিবেশের উন্নতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে এই ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।

“বাংলাদেশের কারখানাগুলো এখন বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ কারখানাগুলোর মধ্যে পড়ে। পরিবর্তনের এই সময়ের বড় অংশজুড়ে আমি এই দেশে ছিলাম বলে নিজ চোখে এই পরিবর্তন দেখেছি। এটা ছিল খুবই ব্যয়বহুল ও কঠিন কাজ। তবে আত্মতৃপ্তিতে না থেকে এর সুফল বহুদিন ধরে রাখতে হবে। ”

পোশাকখাতের অগ্রগতির প্রশংসা করলেও শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানিয়ে যান বিদায়ী রাষ্ট্রদূত।  

“দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শ্রমিক অধিকারের বিষয়টির অগ্রগতি শ্লথ ছিল। আন্তর্জাতিক শ্রমনীতিগুলো মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিষয়টি নিয়ে কালক্ষেপণ করলে কোনো লাভ হবে না। বরং আইনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করে তা কার্যকর করলে বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে।”

অনুষ্ঠানে বার্নিকাটের হাতে সেলাই মেশিনের আদলে তৈরি একটি সোনালি রঙের ক্রেস্ট উপহার দেন বিজিএমইএ নেতারা। পরে তার জন্য নির্ধারিত লালগালিচায় গিয়ে গ্রুপ ছবি তোলেন তারা।

বিজিএমইএ নেতা ফারুক হাসান ও মো. নাসির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।