ইউএস চেম্বার অফ কমার্সের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ ও গোলটেবিল বৈঠকে শেখ হাসিনা আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, “আমি আপনাদের আপনার ব্যবসা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, যাতে আমরা দু’পক্ষই লাভবান হব। আমি আপনাদের সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি।”
নিউ ইয়র্কের হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে সোমবার দুপুরে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গত নয় বছরে বাংলাদেশে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।
স্বল্পোন্নত থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ এখন আর সাহায্যনির্ভর দেশ না। আমাদের অর্থনীতি এখন আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও শ্রম বাজারের সাথে যুক্ত।”
যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের একক বৃহত্তর বাণিজ্য অংশীদার উল্লেখ করে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ার কথাও বলেন তিনি।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
শেখ হাসিনা বলেন, অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ আঞ্চলিক সংযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউটসোর্সিংয়ের উদীয়মান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
“আমরা ভারত, চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশীদের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য যোগাযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।”
বাংলাদেশ এই অঞ্চলের চারশ কোটি মানুষের বাজারের একটি প্রবেশদ্বার হতে পারে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ কোটি মানুষের একটি অভ্যন্তরীণ বাজারও রয়েছে।
জল নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে নদী ভাঙন ও বন্যা প্রতিরোধে ডেল্টা প্ল্যান- ২১০০ প্রণয়নের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়াতে ১০টি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
সমুদ্র অর্থনীতি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা নতুন শিল্প ও বিনিয়োগের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতি অনুসরণ করছে।
কর অবকাশ, যন্ত্রপাতি আমদানিতে করছাড়, কাঁচামালের শুল্কমুক্ত আমদানি, শতভাগ বৈদেশিক ইক্যুইটি এবং অবাধ প্রস্থান নীতির কথা বলেন তিনি।
এছাড়া তরুণ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও প্রশিক্ষিত কর্মী, প্রতিযোগিতামূলক মজুরি, শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়ার সুযোগ, বিদ্যুৎ ও পানির স্বল্পমূল্য এবং বাংলাদেশের ভালো ক্রেডিট রেটিংয়ের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউএস চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিশা বিসওয়াল, মেটলাইফের ইন্টারন্যাশনাল গভর্নমেন্ট রিলেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বেন কাশমান, এক্সলেরেট এনার্জির ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্টিভেন কবোস, এওটি এনার্জির এলএনজি বিষয়ক প্রধান জেমস ও’ব্রায়ান, কোকা-কোলার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বি পেরেজ, জিই পাওয়ারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রেডারিখ রিবিয়ারেস, ম্যাকলার্টি অ্যাসোসিয়েটসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা টেরেসিটা শেফার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউএস বাংলাদেশ গ্লোবাল চেম্বার অব কমার্সের সিইও আজিজ আহমেদ, কোকা-কোলা বাংলাদেশের কর্মকর্তা শামীমা আক্তার, অলব্রাইট স্টোনব্রিজ গ্রুপের মানপ্রিত আনন্দ, এপিআর এনার্জির জন চ্যাম্পিয়ন, আইবিএমের মাইকেল ডিপওলা-কোয়েল, গুগলের অ্যান পেকহাম, বোয়িংয়ের ব্রায়ান লোপ, শেভরনের জে জে ওঞ্জ, ওয়ালমার্টের আনবিন ফান, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বাংলাদেশ ডেস্কের কর্মকর্তা আনন্দ কৃষ্ণা প্রমুখ।