তড়িঘড়ি নেই চামড়ার পাইকারদের, দাম নিয়ে শঙ্কায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

গতবারের তুলনায় এবার দাম কম নির্ধারণ করায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোরবানির পশুর চামড়া কেনায় তাড়াহুড়োর পথে হাঁটছেন না আড়তদার কিংবা পাইকাররা।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2018, 03:07 PM
Updated : 23 August 2018, 06:18 AM

সাধারণত ঈদের দিন দুপুরের পর থেকেই চামড়ার পাইকাররা তৎপর হন; বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে তারা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনে নেন। অনেকেই আবার ঢাকার কয়েকটি স্থানে পাইকারদের কাছেও কাঁচা চামড়া নিয়ে বিক্রি করেন।

কিন্তু এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা চামড়া নিয়ে পাইকারদের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের, যাদের একটা বড় অংশ হচ্ছে বিভিন্ন মাদ্রাসা।

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের যেহেতু কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের সুযোগ থাকে না, তাই তারা যতটা দ্রুত সম্ভব তা আড়তদারদদের হাতে তুলে দিতে চান। এবার দাম কমাতেই আড়তদাররা চামড়া কেনায় ‘ধীরে চলার’ কৌশল নিয়েছেন বলে মনে করেন তারা।

তবে আড়তদারদের ভাষ্য, ক্ষেত্রবিশেষে তারা বেশি দামেও চামড়া কিনছেন।

মূলত, ঢাকার বিভিন্ন আড়তদাররা কাঁচা চামড়া সংগ্রহের পর লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেন। পরে তাদের কাছ থেকে সেই চামড়া সংগ্রহ করেন ট্যানারি মালিকরা।

এবছর ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা; ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গতবছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা; ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং খাসির চামড়া ২০-২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

বুধবার ওয়ারী এলাকা থেকে ১২টি চামড়া নিয়ে রায়সাহেব বাজারের পাইকারদের কাছে যাচ্ছিলেন মোসলেম উদ্দিন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়োন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্য বছরের চেয়ে এবার চামড়ার বাজার মন্দা। ওয়ারী এলাকায় ঘুরে ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায় তিনি একেকটি গরুর চামড়া কিনেছেন। কিন্তু পাইকাররা এক হাজার টাকার বেশি দাম বলছে না।”

এই দামে চামড়া বিক্রি করলে সারাদিনের পরিশ্রম মাটি তো হবেই, চামড়া পরিবহনের টাকাও পকেট থেকে দিতে হবে বলে দাবি করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রায়সাহেব বাজারের চামড়ার আড়তদার সৈয়দ ইকবাল বলেন, এবছর আকার ও মানভেদে একেকটি গরুর চামড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হচ্ছে।

“ট্যানারি মালিকরা ৩৫ টাকা বর্গফুটে চামড়া কিনতে বলেছে। আমরা অনেক সময় ৫০ টাকাও দিয়ে দিচ্ছি।

“তবে গত বছর ১৪০০ টাকায়ও চামড়া কিনেছিলাম। এবছর ১২০০ টাকার বেশি দিচ্ছি না। কিছুক্ষণ আগে ১২০০ টাকা করে ১০টা চামড়া কিনেছি। এগুলো আকারে ২৫-২৬ ফুট হবে।”

সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে ১২০টি চামড়া সংগ্রহ করে বিকাল ৫টায়ও মনে শঙ্কা নিয়ে বসেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন।

তিনি বলেন, “এই এলাকায় আরও চামড়া পড়ে আছে। কিন্তু আমি আর কিনতে সাহস পাচ্ছি না। কারণ এখন পর্যন্ত কোনো ট্যানারি মালিক কিংবা আড়তদার চামড়ার দাম জানতে আসেনি। তারা চামড়ার দাম কমাতে এবছর এমন করছে। আর ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে এই চামড়া নিয়ে রায়সাহেব বাজার, সায়েন্সল্যাব কিংবা লালবাগ এলাকায় রওয়ানা হতে হবে।”

বিকাল ৫টায় মহাখালী রেলক্রসিংয়ের কাছে বায়তুল মাহফুজ জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের সংগ্রহে কয়েকশ চামড়া রয়েছে, কিন্তু কোনো ক্রেতা তখনও চামড়া কিনতে আসেনি। ফলে দাম কেমন হবে তা এখনও ধারণা করতে পারছে না।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্যাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবছর ৯০০ থেকে ১১০০ টাকার মধ্যে গরুর লবণবিহীন কাঁচা চামড়া বেচাকেনা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী এবছর চামড়ার দাম গতবছরের তুলনায় একটু কম।

তবে এবার অন্য বছরের তুলনায় চামড়ার মান ভালো বলে জানান তিনি।