‘চামড়া শিল্পনগরীর অবকাঠামো দুর্বলতায় মুখ ফেরাচ্ছেন ক্রেতারা’

সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফেরাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2018, 03:41 PM
Updated : 19 August 2018, 03:41 PM

হেমায়েতপুরের এই শিল্পনগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি), রাস্তাঘাট, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এখনো প্রস্তুত হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা।

রোববার রাজধানীতে চামড়া শিল্পের ‘কমপ্লায়েন্স ও রপ্তানি উন্নয়ন’ শীর্ষক এক কর্মশালায় চামড়া শিল্পনগরীর নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সাভারের হেমায়েতপুরে সরিয়ে নিতে ২০০৩ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ১৫ বছরেও শেষ করা সম্ভব হয়নি।

হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরাতে আদালতের নির্দেশনার পর সরকার তৎপর হলেও ট্যানারি মালিকরা সাভারে সরে যেতে নারাজ। তারা চামড়া শিল্পনগরীর অবকাঠামোর দুর্বলতা ও শ্রমিক না পাওয়ার কথা বলে আসছেন।

তিন দফা প্রকল্প সংশোধনের পর আগামী ২০১৯ সালে হাজারীবাগের ট্যানারি সরানোর কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

রোববারের কর্মশালায় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্যাহ বলেন, “হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আগেই হেমায়েতপুরে অবকাঠামো প্রস্তুত না হওয়ার কথা ট্যানারি মালিকরা বার বার বলে আসছিলেন। কিন্তু কেউ সেই কথায় গুরুত্ব দেয়নি।

“হাজারীবাগ থেকে জোর করে ট্যানারিগুলো সাভারের হেমায়েতপুরে নিতে বাধ্য করা হল। অপ্রস্তুত একটি স্থানে নতুন কারখানা গড়ে তুলতে গিয়েই ঘটে গেল সব বিপত্তি। হেমায়েতপুরের অস্বাস্থ্যকর, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখে একে একে বিদেশি বায়ররা বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে শুরু করল।”

বাংলাদেশ ফিনিশ লেদার, লেদার গুড অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি দিল জাহান ভূঁইয়া বলেন, “হেমায়েতপুরে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো প্রস্তুত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। আর এর খেসারত দিচ্ছে পুরো ট্যানারি খাত। বায়াররা সেখানে পরিদর্শনে এসে হতাশ হয়ে অর্ডার বাতিল করছে। সিইটিপি প্রস্তুত রয়েছে বলে মিডিয়াতে প্রচার করা হয়েছিল। অথচ এক বছর পরেও সেখানে প্রস্তুত হয়নি বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা।”

হেমায়েতপুরে ধাপে ধাপে জমির দাম বাড়িয়েও সেই জমি ট্যানারি মালিকদের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

“ট্যানারি মালিকদের দাবি ছিল জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া। জমির কারণে তারা ব্যাংক ঋণ নিতে পারছে না। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এখনও তারা জমি বরাদ্দ পায়নি। নতুন ট্যানারি পল্লীতে স্কুল, হাসপাতাল, ক্যান্টিন কিংবা শ্রমিকদের জন্য আবাসন কিছুই করা হয়নি,” বলেন দিল জাহান।  

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, হেমায়েতপুরে সরকারি কাজের ধীরগতির কারণে ১৫৫টি কারখানা স্থানান্তরের কথা থাকলেও সেখানে ফিনিস লেদার তৈরির জন্য প্রস্তুত হয়েছে মাত্র ৩৫টি কারখানা। এভাবেই গত দুই বছরে চামড়া শিল্প একটু একটু করে পিছিয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, “বড় ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আমরা আস্থার সঙ্কটে পড়ে যাচ্ছি। হাজারীবাগে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থা থাকলেও হেমায়েতপুরে তাও নেই। ফলে ধীরে ধীরে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা বিসিকের লোকবল ও দক্ষতার অভাবে এধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।”

চামড়া শিল্পনগরীর কারখানার বর্জ্যে ধলেশ্বরী নদী ও আশপাশের পরিবেশ দূষণের খবরও এসেছে গণমাধ্যমে।

কর্মশালার প্রধান অতিথি বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য কারখানা বিশ্বে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। চামড়া শিল্পকেও কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে ভালো করে ব্যবসায় ফিরে আসতে হবে।

সিইটিপির ওপর নির্ভর না করে কারখানাগুলোর নিজস্ব উদ্যোগে ইটিপি চালু করা যায় কিনা সে ব্যাপারে নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে আলোচনা শুরু করতে হবে বলেও মত দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

কর্মশালায় জানানো হয়, বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল, ১২৩৪ মিলিয়ন ডলার। পরের বছর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৩৮০ মিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য থাকলেও অর্জন হয় ১০৮৫ মিলিয়ন ডলার। অথচ ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছিল সরকার।   

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহা. সেলিম উদ্দিন, শ্রমিক নেতা আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল মালেকসহ চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।