সবজির বাজার চড়া

কোরবানির আর কয়েক দিন থাকতে শিম, টমেটো ও বেগুনসহ বেশকিছু সবজির দাম বেড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2018, 02:50 PM
Updated : 17 August 2018, 02:50 PM

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচাসহ বেশকয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের আগাম সবজি হওয়ার কারণে শিমের দাম চড়া, ফুলকপির দাম বেশি হওয়ার একই কারণ। টমেটোর মৌসুম না থাকলেও আগেই মজুদ রাখা থেকে বাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে দাম বেশি।

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। নতুন সবজি হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, “শিম শীতের সবজি, গত সপ্তাহ থেকে বাজারে শিম এসেছে। শিমের দাম আরও কিছুদিন ১০০ টাকার ওপরে থাকবে। পুরোদমে শিম আসতে শুরু করলে দাম কমবে।”

প্রতিকেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা।  গত সপ্তাহেও এ সবজির দাম একই ছিল বলে ক্রেতা-বিক্রিতারা জানিয়েছেন।

বেগুনের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহে এ সবজিটির দাম ছিল কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

চড়া দামে বিক্রি হওয়া আর এক সবজি গাজর ও ফুলকপি। প্রতি কেজি গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা ও ছোট ও মাঝারি আকারের প্রতিটি ফুলকপি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

একই বাজারের ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, “টমেটো বাজারে পাওয়া গেলেও এগুলো বেশিরভাগ মজুদের মাল। বেগুনের আমদানি কমে গেছে, গাজরও এখন আমদানি করা। ফলে এসব পণ্য সরবরাহ এখন কিছু ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে, যে কারণে দাম চড়া।”

এদিকে করল্লা ও বরবটি কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। করল্লার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি।

তবে পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, চিচিংগা, কাকরল, ঢ়েড়স, মিষ্টি কুমড়া, পেপে, করলার দাম কিছুটা কমেছে। অধিকাংশ বাজারে এসব সবজির কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকাই পাওয়া যাচ্ছে।

গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া চিচিংগা, পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, কাকরল বিক্রি হচ্ছে  ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। পেপে আগের সপ্তাহের মতো ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম কমে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় নেমে এসেছে।

এদিকে একমাসের বেশি সময় ধরে কাঁচামরিচের দামে পরিবর্তন নেই। প্রতি পোয়া কাঁচামরিচ ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে গত সপ্তাহের চেয়ে পেঁয়াজের কেজিতে ৫ টাকা কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

রামপুরা বাজারের ‘আবু তাহের স্টোরের’ বিক্রেতা আবু তাহের মিয়া বলেন, “গত সপ্তাহ পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল, দেশী পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা। এটি আজকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে দেশী পেঁয়াজের দাম কমেছে। প্রতি কেজি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের দাম ৩৫ টাকা।”

আজহারুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, “পেঁয়াজের দাম তো কমেনি, আশঙ্কায় আছি দাম আরও বেড়ে যায় কিনা। কারণ ঈদ তো সামনে, ব্যবসায়ীদের তো কোনো ঠিক নাই, হুট করে দাম বাড়াবে, পরে আস্তে আস্তে কমবে।”

এদিকে এসব বাজার ও মানভেদে প্রতি কেজি গলদা চিংড়ি ৯০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা, ইলিশ ৮০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা, কাতলা ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০, রুই ২৮০, প্রতি কেজি বোয়াল মাছ ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

আর কেজি প্রতি গরুর মাংস ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, খাসি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি।

আর প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহের চেয়ে ডজনে ৫/১০ টাকা কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

মাছ ও মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারী বাজারে মাছের দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। মাংসের দামও আগের মত মাংসের মত আছে। কোরবানি ঈদে গরু-ছাগলের দাম বেশি,  এ কারণে মাংসের চাহিদা কিছুটা কমলেও বাজারে দামের ওপর প্রভার পড়েনি।

মালিবাগ কাঁচাবাজারের মাছ ব্যবসায়ী বশিরুল ইসলাম বলেন, “গত এক দেড় মাস ধরে যে দামে মাছ বিক্রি হয়েছে এখন একই দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে আবারও ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে বলে এই মাছের দাম কিছুটা কমেছে। আর অন্যান্য মাছের দাম অপরিবর্তিত আছে।”

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মা-বাবার দোয়া মাংস বিতানের ব্যবসায়ী মো. সাইফুল জানান, “গরু ও খাসির মাংসের দাম বাড়েনি, কমেওনি। আমরা গরুর মাংস ৪৮০ টাকা এবং খাসি ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।”

একই বাজারের পোল্টি মুরগি ব্যবসায়ী আতাউল গণি বলেন, “সব ধরণের মুরগির দাম কমেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এর দাম ১০/২০ টাকা বেশি ছিল। প্রতি কেজি লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা।”

তবে কয়েকটি বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা যায়।

শান্তিনগরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আহমেদ জুবায়ের বলেন, “ঈদের আগে আগে বাজারে মাছ-মাংসের দাম কমার কথা ছিল, কিন্তু কোনো প্রভাব নেই। ঢাকা শহরের মানুষ গ্রামে চলে যাচ্ছে, হয়ত কাপরশু থেকে এসবের দাম কমতে পারে।”