ডিজিটাল কমার্স নীতিমালায় মন্ত্রিসভার অনুমোদন

দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য ও সেবা বিক্রির ব্যবস্থাপনাকে নিয়মের মধ্যে আনার পাশাপাশি ডিজিটাল লেনদেন সহজ ও নিরাপদ করতে ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা’ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2018, 01:15 PM
Updated : 16 July 2018, 01:17 PM

এই নীতিমালার আলোকে ডিজিটাল কমার্স সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেল গঠন করা হবে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, বিবক্রেতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা, ডিজিটাল লেনদেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ডিজিটাল কমার্স সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা হবে এই সেলের কাজ। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক নতুন এই নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম জানান।

সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ডিজিটাল কমার্সের পরিধি এবং ডিজিটাল জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা মাধ্যম, মোবাইল অ্যাপস ইত্যাদি ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ায় বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

“দেশে শিল্প বিকাশ, রপ্তানি উন্নয়ন, আইসিটিসহ সংশ্লিষ্ট খাতে অধিকতর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এই নীতিমালা করা হচ্ছে।”

সরকার বলছে, ডিজিটাল কমার্স পরিচালনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা, ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় নীতি ও আইনি কাঠামো তৈরি এবং অবকাঠামো নির্মাণ এই নীতিমালার উদ্দেশ্য।

খসড়া নীতিমালায় যা ছিল

# বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেল দেশের সব ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।

# প্রত্যেক ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে তাদের ওয়েবসাইট, অ্যাপ ও মার্কেটপ্লেসে তাদের ইমেইল আইডি, ফোন নম্বর, রেজিস্ট্রেশন আইডি এবং পণ্যের বিবরণ প্রকাশ করতে হবে। 

# সব ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। সরকার ভোক্তাদের জন্য একটি আচরণবিধি তৈরি করে দেবে।  

# ই-কমার্স সাইটে বিক্রির জন্য দেওয়া পণ্যের মাণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পণ্যের দামসহ যথাযথ বিবরণ এবং বিক্রির শর্ত উল্লেখ করতে হবে।

# এই মাধ্যমের সব ক্রেতা-বিক্রেতাকে ইলেকট্রনিক লেনদেনে দেশের আইন কানুন মেনে চলতে হবে। সব ব্যাংক ও মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিসকে এ বিষয়ে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। ডিজিটাল কমার্সে সব পেমেন্ট পদ্ধতি ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচে যুক্ত থাকতে হবে। 

# ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে আর্থিক লেনদেন এবং পণ্য সরবরাহের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটি পরিচালনা নির্দেশিকা তৈরি করে দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া বিদেশে ব্যবসা বাড়ানোর স্বার্থে বিদেশি মুদ্রার ভ্রমণ কোটা ও অনলাইন লেনদেন কোটা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

# ডিজিটাল কমার্স খাতের উন্নয়নে একটি সেন্টার অব এক্সেলেন্স গঠন করতে হবে।

# পণ্য বিক্রি, লেনদেন, নিরাপত্তা, তদারকিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বিরোধ তৈরি হলে তার নিরসন এবং কোনো অপরাধ ঘটলে তার বিচার পরিচালনায় একটি আইনি কাঠামো তৈরি করবে সরকার। 

ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি এ নীতিমালায় রাখা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, “পাইরসি, হ্যাকিংসহ ডিজিটাল কমার্সখাত সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়।”

ডিজিটাল কমার্সে অংশগ্রহণকারী ক্রেতা-বিক্রেতার ভয়ভীতি দূর করে আস্থা অর্জনের জন্য প্রচারের পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও নীতিমালায় বলা হয়েছে।

‘কালজয়ী পদক্ষেপ’

দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে কেনাবেচা ও লেনদেনের পরিমাণও দ্রুত বাড়ছে। 

এ কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব

সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।

২০০৯ সালে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেখানে মোট জনসংখ্যার ৩.২০ শতাংশ ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৩৮ শতাংশের বেশি।

তবে বর্তমানে দেশে ই কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কত, তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব সরকারের হাতে নেই। 

এ খাতে শৃঙ্খলা আনতে সরকার নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে খসড়া তৈরি করে। পরে আরও যাচাই বাছাই করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় তোলা হয়।

এই নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে বেসিস ও ইক্যাব বলেছে, এর ফলে বাংলাদেশে ই-কমার্সের বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে বলে তারা আশা করছে।

বেসিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ক্রমবর্ধমান তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ই-কমার্স খাতের বাজার সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এ নীতিমালার গুরুত্ব অপরিসীম।”

আর ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ নীতিমালা দেশের গোটা বাণিজ্য ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে। এটা একটা কালজয়ী পদক্ষেপ।”

এই ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা প্রণয়ন ও পরিমার্জনে বেসিসের পক্ষ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বেসিস ই-কমার্স অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক মোক্তাফিজুর রহমান সোহেল, বেসিস ডিজিটাল কমার্স স্থায়ী কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ ও বেসিস পরিচালক দিদারুল আলম খসড়া তৈরিতে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন।

বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, “ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা আমাদের অগ্রসরমান ই-কমার্স খাতকে সুসংহত করবে। বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ই-কমার্স অনেক এগিয়ে গেছে। অনেক বৈশ্বিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান উপমহাদেশের ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেছে। আমাদের স্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হলে দেশের উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।”

আর ই-ক্যাবের তমাল বলেন, “এতদিন ধরে ডিজিটাল কমার্স খাত প্রায়োরিটি পাচ্ছিল না। এ নীতিমালা হওয়ার ফলে আইসিটি মিনিস্ট্রি, কমার্স মিনিস্ট্রিসহ অন্যান্য মিনিস্ট্রির সঙ্গে যে গ্যাপগুলো ছিল, তা আমরা খুব সহজে অ্যাড্রেস করতে পারব।

“এই নীতিমালার ফলে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের মধ্যে যেমন সচেতনতা বাড়বে, তেমনি আমাদের দেশের লোকাল কোম্পানিগুলোও প্রোটেকশন পাবে। ক্রস বর্ডার ডেলিভারি সিস্টেম, পেমেন্ট, সিকিউরিটি ইস্যুগুলো আরো বেশি সিকিউর করতে পারব আমরা।”

আরও খবর