মোবাইল আসল-নকল যাচাই সেবা ‘সেপ্টেম্বরে’

কোনো মোবাইল হ্যান্ডসেট আসল না নকল এবং বৈধপথে দেশে এসেছে কি না তা একটি এসএমএস পাঠিয়েই যাচাই করে নেওয়ার সুবিধা পাবেন ক্রেতারা।

শামীম আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2018, 07:09 PM
Updated : 13 July 2018, 07:09 PM

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক মো. নাসিম পারভেজ বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই নির্দিষ্ট একটি শর্টকোডে এসএমএস পাঠিয়ে গ্রাহকরা তাৎক্ষণিক এই সেবা পাবেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশে বৈধভাবে আমদানি বা তৈরি করা মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের ডেটাবেইজ তৈরি এবং অবৈধ ফোনের ব্যবহার বন্ধ করতে এই পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।”

মোবাইল হ্যান্ডসেট যাচাইয়ে বিটিআরসি ইতোমধ্যে একটি শর্টকোড অনুমোদন দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

নামি-দামি ব্র্যান্ডের সিল লাগানো ‘মাস্টার কপি’ নামে পরিচিত চীনের তৈরি হ্যান্ডসেটগুলোর চাহিদা বাজারে প্রচুর থাকলেও এসব মোবাইল কিনেও প্রতারিত হচ্ছেন অনেক গ্রাহক।

এসব মোবাইলে যে কনফিগারেশন লেখা থাকে তার কোনটিই অনেক সেটে ঠিকঠাক থাকে না।

দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে বড় একটি অংশ ফিচার ফোন ব্যবহার করেন। এই ফিচার ফোনে ২০১২ সাল থেকে বাংলা কিপ্যাড ছাড়া আমদানি নিষিদ্ধ রয়েছে।

তবে চোরাই পথে যেসব মোবাইল ফোন আসতে সেগুলো এই সুবিধা ছাড়াই বাজারে চলে আসছে। অবৈধভাবে আসা এসব মোবাইল ফোনে বাংলা এসএমএস লেখা বা পড়ায় সমস্যায় পড়েন গ্রাহকরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশের বাজারে যেসব মোবাইল হ্যান্ডসেট আছে তার প্রতি ‘তিনটির একটি নকল বা অবৈধ’।

তাদের হিসাবে, প্রতি বছর এক কোটির বেশি অবৈধ ও নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট বাংলাদেশের বাজারে আসে। এগুলোর বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা, যার পুরোটাই যাচ্ছে গ্রাহকের পকেট থেকে।

প্রতিটি সেট আমদানিতে তার মূল্যের ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ৫ শতাংশ শুল্কসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ ভ্যাট সরকারকে দিতে হয়।

বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানান, ‘আমদানি অনাপত্তিপত্র স্বয়ংক্রিয়করণ এবং দেশে আমদানি হওয়া সকল মোবাইল ফোনের আইএমইআই ডেটাবেইজ তৈরি ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা’ স্থাপনে গত মে মাসে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিএমপিআই) অনুমতিপত্র হস্তান্তর করেছে কমিশন।

এই সিস্টেম বিটিআরসি ভবনে স্থাপিত হবে এবং বিএমপিআইএ’র আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়িত হবে।

আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর হল ১৫ ডিজিটের একটি স্বতন্ত্র সংখ্যা, যা বৈধ মোবাইল ফোনে থাকে।

একটি মোবাইল ফোনের কি-প্যাডে *#০৬# ডায়াল করে ওই ফোনের বিশেষ এই শনাক্তকরণ নম্বরটি দেখা যায়।

“দেশে তৈরি এবং আমদানি হওয়া সকল মোবাইল ফোনের আইএমইআই ডেটাবেইজ তৈরি হওয়ার পর ওই শর্টকোডে ক্রেতারা হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর দিয়ে এসএমএস করলেই তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারবেন তা আসল না নকল,” বলেছেন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আশা করছি, আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই এই সেবা শুরু করা যাবে।” 

এ পদ্ধতিতে অবৈধ ফোনের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বন্ধ হলে সরকার কয়েকশ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এছাড়া এতে মোবাইল ফোনের অপব্যবহার ও অপরাধ কমে যাবে বলেও আশা করছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।

এই সিস্টেম স্থাপন হলে ব্যবহারকারীরা আইএমইআই নম্বরবিহীন হ্যান্ডসেট দিয়ে সিম ব্যবহার করলে তা বন্ধ করে দেওয়া যাবে। এছাড়া নম্বরযুক্ত কোনো হ্যান্ডসেট চুরি হলে তা সহজেই উদ্ধার করা যাবে। সিম কার্ড বদলে ফেললেও একজন কলারকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইএমইআই নম্বরবিহীন সেট ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন।

কোনো হ্যান্ডসেট চালু হওয়ার পর তার আইএমইআই নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপারেটরদের কাছে চলে যায়। অপারেটররা ইচ্ছা করলে সেই হ্যান্ডসেটের সংযোগ বন্ধ করতে পারেন।

এ কারণে গ্রাহক নিরাপত্তা ও অপকর্মরোধে অপারেটরদের ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) যন্ত্র স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছিল বিটিআরসি। তবে ছয় বছর পার হলেও ওই নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়নি।

বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্তকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী সম্প্রতি অপারেটরদের এনইআইআর স্থাপনে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

আরও খবর-