মরিচে ‘ঝাল’, পেঁয়াজেরও দাম বাড়ছে

বর্ষা মৌসুমে রাজধানীর কাঁচাবাজারে সবজির দামে খুব একটা হেরফের না হলেও চড়েছে কাঁচা মরিচের দাম, পেঁয়াজেও গুণতে হচ্ছে বাড়তি। তবে কমেছে ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2018, 03:14 PM
Updated : 13 July 2018, 03:14 PM

আর চাল-ডালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম আগের মতোই রয়েছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

শুক্রবার কারওয়ানবাজার, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, রামপুরা, খিলগাঁও, শান্তিনগর ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়।

পাইকারির তুলনায় খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বেশি বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতাদের অনেকে।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে কাঁচা মরিচের দাম কেজি প্রতি ১২০-১৩০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪০-১৬০ টাকা।

তবে কোনো কোনো খুচরা বাজারে ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচের দাম ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে দেখা যায়।

কাঁচামরিচের দাম এভাবে বাড়ার কারণ জানতে চাইলে রামপুরা কাঁচাবাজারের দোকানি মুসলিম ‍উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন বৃষ্টির সময়, অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমের কারণেও কাঁচা পণ্য দ্রুত পচে যায়।

“মনে করেন, পাঁচ কেজি মরিচ কিনলে দিন শেষে প্রায় এক কেজি কমে যায়। লোকসান ঠেকাতে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।”

শান্তিনগর বাজারের ব্যবসায়ী মো. মিরাজ বলেন, “কাঁচা মরিচের দাম ঈদের পর থেকেই বাড়তে শুরু করেছে। তবে এই সপ্তাহে একটু বেশি বেড়েছে। বেশি দামে কিনতে হয় বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।”

কাঁচা মরিচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দামও। দেশি পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

দেশি পেঁয়াজের চেয়ে কিছু কমে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকায়। তবে গত সপ্তাহে এই দর ছিল প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে পেঁয়াজের মণ প্রতি দাম বেড়েছে ১০০-১২০ টাকা।”

দাম বাড়ার কারণ সস্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মূলত ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। একই সাথে দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে।”

মালিবাগ বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা জাবেদ আলী জানান, গত সপ্তাহে পাল্লা প্রতি (৫ কেজি) পেঁয়াজ কেনা ছিল ১৭০-১৮০ টাকায়।

“আজকের বাজারে এর দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা।”

মরিচ ও পেঁয়াজের দাম উঠতির দিকে থাকলেও একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির দাম অনেকটা আগের মতোই রয়েছে।

পটল, ঝিঙ্গা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, বেগুন, কাঁকরোল, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, করলাসহ অন্যান্য সবজিতে বাজার ভরপুর। কোনো কোনো সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে।

গত সপ্তাহে ১০০-১১০ টাকায় কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটোর দামও কমেছে। ভালো মানের টমেটো কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কারওয়ানবাজারে; রামপুরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে খিলগাঁও ও মালিবাগ বাজারেও।

টমেটোর মতো দাম কমেছে চিচিঙ্গা, পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, কাঁকরোল, করলা, পেঁপে, বরবটিসহ অধিকাংশ সবজির।

কারওয়ানবাজারে গত সপ্তাহে ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া চিচিঙ্গার দাম কমে ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া ঝিঙ্গা ও ধুন্দলের কেজি ৩০-৩৫ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা, একই দামে বিক্রি হচ্ছে ঢেঁড়সকরলা। আগের সপ্তাহে এ দুটি সবজি কেজি প্রতি ৪০ টাকার বেশি ছিল বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

পেঁপের দাম কমে হয়েছে কেজি প্রতি ২০-২৫ টাকা, কাঁকরোল ৩০-৩৫ টাকা।

বরবটির কেজি ২৫-৩০ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা।

কারওয়ানবাজারের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, “সরবরাহ বাড়ার কারণে সবজির দাম কমে এসেছে।”

শান্তিনগরের বাসিন্দা রবিউল হাসান বলেন, “সবজির দাম তো কমই আছে, কিন্তু কাঁচামরিচের দাম বাড়ার কারণ বুঝি না। যে কোনো এক কেজি সবজির দামের চেয়ে এক পোয়া কাঁচামরিচের দাম বেশি-এটা মানতে কষ্ট হয়।”

ফার্মের ডিমের দাম সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ডজন প্রতি ১৫ টাকার মতো বেড়েছে বলে কারওয়ানবাজারের ডিম বিক্রেতা আব্দুল গফুর জানান।

শুক্রবার ফার্মের মুরগির ডিম ৩০-৩২ টাকা হালি, দেশি মুরগির ডিম ৪০-৪৪ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

দুই সপ্তাহ আগেও ফার্মের মুরগির ডিম হালি প্রতি ২৫-২৬ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৩৩-৩৫ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ী রুকন উদ্দিন বলেন, “গত দুই সপ্তাহ থেকে ডিমের দাম একটু বাড়তি। আগে ডিমের ডজন ৮৫ টাকা বিক্রি করতে পারলেও এখন ৯০ টাকার বেশি বিক্রি করতে হচ্ছে।”

বাজারে ডিমের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।

মুরগির ডিমের দামে ক্রেতাদের বাড়তি টাকা গুণতে হলেও ব্রয়লার ও পোল্ট্রি মুরগির মাংসের দাম কেজি প্রতি ১৫০-১৫৫ টাকা থেকে কমে ১৪০-১৪৫ টাকা হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে সপ্তাহ ধরে বাজারে চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৬২-৬৪ টাকা, মিনিকেট ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের নাজির ও মিনিকেট কেজি বিক্রি হচ্ছে প্রতি ৬৪ থেকে ৬৮ টাকায়।

এছাড়া পাইজাম, লতা চালের কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, মোটা চাল স্বর্ণা ও চায়না বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি।

রামপুরার বিক্রমপুর রাইস বিতানের চাল বিক্রেতা আলী আহসান বলেন, “কয়েক দিন ধরে চালের দাম অপরিবর্তিত আছে। দাম বাড়েনি, আরও কয়েক সপ্তাহ চালের দাম নাও বাড়তে পারে।”

ওই দোকানে চাল কিনতে এসে গোলাম মোস্তফা বলেন, “পাইকারি বাজারে চালের দাম না বাড়লেও গত সপ্তাহ থেকে এই সপ্তাহে কেজি প্রতি চালের দাম দুই-এক টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে।”

আরও খবর