নতুন নির্দেশনায় এমএনপি সেবা শুরুতে জটিলতা

মোবাইল ফোন নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের (এমএনপি) ক্ষেত্রে গেটওয়েগুলো যে সংযোগের দায়িত্ব পালনের কথা, তা বিটিআরসি এখন মোবাইল অপারেটরদের করতে বলায় এ সেবা শুরু না হতেই জটিলতায় পড়ছে।

শামীম আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2018, 06:36 PM
Updated : 5 July 2018, 06:36 PM

অপারেটররা বলছে, তারা যখন এমএনপি সেবা দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা চালাচ্ছে, সেই সময় বিটিআরসির ‘পোর্টেড নম্বর রুট’ করার নির্দেশনা পুরো প্রক্রিয়াকে ব্যাহত হওয়ার মতো অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে।

আগামী অগাস্ট থেকে এমএনপি সেবা পুরোদমে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তার দেড় মাসেরও কম সময় আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি থেকে এই নির্দেশনা যায়।

এই নির্দেশনার ফলে এমএনপি সেবা চালুর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ, কারিগরি ও বাণিজ্যিকভাবে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা জানিয়ে সম্প্রতি শীর্ষ তিন অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবির শীর্ষ কর্মকর্তারা যৌথ স্বাক্ষরে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে একটি চিঠি দিয়েছে।

এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ২৫ জুন বিটিআরসি নির্দেশনা পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়, এমএনপির ক্ষেত্রে গেটওয়েগুলো (আইসিএক্স এবং আইজিডব্লউ) যে কল আদান-প্রদানে সংযোগের দায়িত্ব পালন করার কথা (এমএনপি শুরু করতে নতুন প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হওয়া),  তা এখন মোবাইল অপারেটরদের করতে হবে।

“এর ফলে মোবাইল অপারেটরগুলোকেই সংশ্লিষ্ট কারিগরি উন্নয়নের কাজ করতে হবে অর্থাৎ প্রযুক্তিগতভাবে অনেক জটিল আকার ধারণ করবে। কিন্তু এর জন্য কোনো অতিরিক্ত সময়ও দেওয়া হয়নি।”

অপারেটররা বলছে, নির্দেশনায় কল আদান-প্রদান ব্যবস্থায় যে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে, তা আইএলডিটিএস নীতিমালা ও এমএনপি নীতিমালার পরিপন্থি। গেটওয়ের দায়িত্ব মোবাইল ফোন অপারেটরদের উপর দেওয়া হলে এ দুটি নীতিমালার সংশ্লিষ্ট ধারার ব্যত্যয় ঘটবে। আইএলডিটিএস নীতিমালার ধারা ৫ দশমিক ২ ও ৬ দশমিক ৪ এবং এমএনপি গাইডলাইন্সের ৫ দশমিক ৩ ও শিডিউল ৭ (৪) ধারা অনুযায়ী এই দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট গেটওয়েগুলোর।

কারিগরিভাবেও এ নির্দেশনায় জটিলতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করে অপারেটরগুলো।

অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৮ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউজার অ্যাকসেপটেন্স টেস্ট (ইউএটি) শুরু হওয়ার কথা। আর সব কিছু ঠিক থাকলে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সেবাটি চালু করা সম্ভব হত। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এমএনপি চালু করতে হলে টপোলজিতে নতুন করে আর কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।”

বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এমএনপি চালু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি ‘প্রায় সম্পূর্ণ। আগামী ৩১ জুলাই থেকে এমএনপি পরীক্ষামূলক সেবা শুরু করা সম্ভব হবে।

বিটিআরসির নতুন নির্দেশনার বিষয়ে জহুরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বৃহস্পতিবার বলেন, “একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তবে এর ফলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।“

গত নভেম্বরে এমএনপি সেবার লাইসেন্স পায় বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার কনসোর্টিয়াম ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেক।

এ সেবা চালু হওয়ার পর গ্রাহকরা ৩০ টাকা ফি দিয়ে নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর পরিবর্তনের আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তার অপারেটর বদলে যাবে। পুনরায় অপারেটর পরিবর্তন করতে হলে তাকে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

নম্বর পরিবর্তনের ঝক্কিতে যেতে চান না বলে সেবায় সন্তুষ্ট না হওয়ার পরও অনেকে এতদিন অপারেটর বদলাতে পারেননি। এমএনপি চালু হলে তারা নম্বর ঠিক রেখেই অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। ফলে অপারেটররাও তাদের সেবার মান উন্নত করতে চেষ্টা চালাবে বলে সরকার আশা করছে।