৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ (৩৬.৬৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।
সার্বিক রপ্তানি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। তবে তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২২ শতাংশ কম।
মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানির উপর ভর করেই এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মোট রপ্তানির ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশই এসেছে এই খাত থেকে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ; লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে দেড় শতাংশের বেশি।
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন। দেশ দুটির রপ্তানি ব্যবধান ১১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন গতি আসায় বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি আয় আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
টাকার বিপরীতে ডলারের দরবৃদ্ধি রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে অবদান রাখছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি। ছয় মাসে বেড়েছে ৩ শতাংশ।
পোশাক রপ্তানি বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কারখানাগুলোর উন্নয়নে মালিকরা অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কষ্টও করেছেন। ৮০ শতাংশের বেশি কারখানা উন্নত কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) আওতায় চলে এসেছে। এতে বায়াররাও খুশি।
ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাবের ঝুঁকি দেখছেন কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে ফারুক হাসান বলেন, “না, তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা ইতোমধ্যে বায়ারদের বুঝিয়েছি যে, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে, তা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। তাতে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। আগের মতোই পোশাকের অর্ডার দিচ্ছেন।”
বুধবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গেলো ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার আয় করেছে।
এটা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২২ শতাংশ কম।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে তিন হাজার ৬১ কোটি ৪৭ (৩০.৬১ বিলিয়ন) ডলারের আয় হয়েছে, যা মোট রপ্তানির ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রপ্তানিতে এক হাজার ৫১৯ কোটি ডলার এবং উভেন পোশাক রপ্তানিতে এক হাজার ৫৪৩ কোটি ডলার আয় হয়েছে।
নিট খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। আর উভেনে বেড়েছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ।
অন্যান্য খাতে রপ্তানি
গত অর্থবছরে কৃষি পণ্য রপ্তানি ২২ শতাংশ বাড়লেও চা রপ্তানি কমেছে ৩৮ শতাংশ। শাকসব্জি রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
অন্য কৃষি পণ্যের মধ্যে তামাক রপ্তানি বেড়েছে ২১ শতাংশ। শুকনো খাদ্য রপ্তানি বেড়েছে ৮৪ শতাংশ।
পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ১৬ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশ।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি ১২ শতাংশ কমেছে। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি কমেছে ১৬ শতাংশ।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল তিন হাজার ৭৫০ কোটি (৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলার।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ (৩৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ।