বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীনের এই পদক্ষেপকে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য শুভ মনে করেছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, লাওস ও শ্রীলংকার কিছু পণ্য আমদানিতে চীনের শুল্ক ছাড়ের কথা উঠে আসে।
২০০১ সালে স্বাক্ষরিত এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের আওতায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। এই সিদ্ধান্ত জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছে চীনের সংবাদপত্রটি।
চীনের এ উদ্যোগ বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য ‘ইতিবাচক’ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
বাংলাদেশের পোশাক খাত চীনসহ আরও কয়েকটি দেশে আগে থেকেই ‘ডিউটি ফ্রি’ সুবিধা পেয়ে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখন ট্যারিফ নীতিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ রপ্তানির সম্ভাবনাকে আরও বাড়াবে।”
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক বিরোধের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বড় অর্থনীতির দেশ। চীনের পণ্যের ওপর ট্যারিফ আরোপের পদক্ষেপ সেই দেশে তেমন প্রভাব না ফেললেও চীনের বাজারে বেশ প্রভাব পড়বে।
“চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির আকার বেশ বড়। তাই তারা অন্যান্য দেশের সঙ্গে এধরনের পদক্ষেপ নিয়ে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালাবে।”
চলতি বছরের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অন্যের পণ্যে একের পর এক শুল্ক আরোপ করছে।
বেইজিংয়ের ‘মেধাস্বত্ব চুরিকে’ কারণ দেখিয়ে ১৫ জুন ট্রাম্প চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেন।
ট্রাম্পের এ ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনের ওপর আরোপ করা শুল্ক ও তার পরবর্তী পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেবে। ফলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিটা ভোক্তাদেরই হবে।
এদিকে ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়নের মাত্র পাঁচ দিন আগেই চীন বাণিজ্য সুরক্ষামূলক এই নীতি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন সরকার বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে সয়াবিন আমদানির ওপর বিদ্যমান তিন শতাংশ শুল্ক তুলে নিচ্ছে। সয়াখাদ্যের উপর থেকেও বিদ্যমান ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার হচ্ছে।
এছাড়াও রাসায়নিক দ্রব্য, কৃষিপণ্য, মেডিকেল যন্ত্রাংশ, পোশাক, স্টিল, নন ফেরোস মেটাল, তরল পেট্রোলিয়াম পণ্যে ২ থেকে ৩ শতাংশ হারে শুল্ক প্রত্যাহার হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, রাসায়নিকসহ আরও কিছু পণ্য চীনে রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক।
পোশাক ব্যবসায়ী ও ডিএসএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চীনের এই পদক্ষেপের পর বাংলাদেশি পোশাক ব্যবসায়ীরা সেই দেশে আরও বড় বাজার ধরার চেষ্টা করবেন।
“তবে এতে করে সামগ্রিকভাবে শিল্পের ব্যাপ্তি বাড়বে না। আরও নতুন কারখানা চালু ও নতুন বিনিয়োগ না হলে পোশাক খাত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না।”
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ বিশ্বের অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা থাকলেও জাহাঙ্গীর মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের জন্য আমদানি শুল্ক কমানোর চীনের এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সুফল পাবেন।